বিধানসভায় বিতর্ক হওয়ার কথা ছিল রাজ্যের শিক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থা নিয়ে। কিন্তু হল ধর্ম নিয়ে!
শিক্ষা দফতরের বাজেট নিয়ে মঙ্গলবার বিতর্ক বয়কট করে বিরোধী বিজেপি রাজ্য সরকারের দিকে ‘হিন্দু-বিরোধী’ বলে আঙুল তুলল। জবাবে বিরোধীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার অভিযোগে পাল্টা সরব হল প্রায় গোটা মন্ত্রিসভা। এই আবহে বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে আড়াই ঘণ্টার আলোচনা কমে দেড় ঘণ্টা হল এবং শুধু শাসক দলের বিধায়কেরা বিতর্কে থাকায়, তা হয়ে উঠল পরস্পরের ‘পিঠ-চাপড়ানোর আসর’! প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বিষয় নিয়ে যা চর্চা হয়েছে, তা ছিল মূলত সরকারি পরিসংখ্যানের প্রশ্নহীন পরিবেশনা।
বিধানসভার চলতি অধিবেশনের ধারা মেনে এ দিনও শুরু থেকে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে ধর্ম। প্রশ্নোত্তর-পর্বের পরেই ‘দোলের দিন হিন্দু’দের উপরে আক্রমণ নিয়ে আলোচনা দাবি করতে থাকে বিজেপি। এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠ করতে দিলেও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা নিয়ে আলাদা আলোচনার দাবি খারিজ করে দেন। তার পরেই ‘হিন্দু-বিরোধী সরকার, আর নেই দরকার’ স্লোগান দিতে দিতে বিজেপির বিধায়কেরা সভাকক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান। এতেই আপত্তি জানান মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাস, ব্রাত্য বসুরা। উঠে দাঁড়িয়ে বিজেপির আচরণের বিরুদ্ধে বক্তৃতাও করেন সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ।
দ্বিতীয়ার্ধে শিক্ষা দফতরের বাজেট বিতর্কে যোগই দেননি বিজেপির বিধায়কেরা। শুধু সুকান্ত পাল, অপূর্ব সরকার, মহম্মদ আলি, সমীর জানা, শ্যামল মণ্ডলের মতো শাসক দলের বিধায়কেরা বিতর্কে যোগ দিয়ে রাজ্যে শিক্ষার ‘উত্তম পরিবেশ’ ব্যাখ্যা করেন। শেষে বরাদ্দে অনুমোদন চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বলেন, “শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো আলোচনায় বিরোধীদের পাওয়া যায় না। এঁরা শুধু ধর্মের মেরুকরণ এবং অন্য ধর্মকে নিচু-ভাষায় আক্রমণ করেন।” এই সূত্রেই বাংলার ফজলুল হক মন্ত্রিসভার কথা টেনে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘শিক্ষা-ভাবনা’র কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
তবে শিক্ষা সংক্রান্ত বিতর্কের শুরুতে শাসক শিবিরের ‘আগ্রহ’ও ছিল চোখে পড়ার মতো! সভা শুরুর সময়ে বিধায়ক-সংখ্যা ছিল ১৪। দৃশ্যত বিরক্ত স্পিকার বিধায়কদের উপস্থিতির জন্য নির্দেশ দেন। আলোচনা যখন শেষ হয়, তখন বিধায়ক-সংখ্যা ছিল ৩০। বিজেপি না-থাকলেও স্কুল স্তরে শিক্ষার পরিকাঠামো নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছেন আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের স্কুলের সমস্যা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন তিনি।
ধর্ম-বিতর্ক ছড়িয়েছে বিধানসভার বাইরেও। অধিবেশনে বিজেপির প্রস্তাব থেকে ‘হিন্দু’ শব্দ বাদ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত স্পিকার নিয়েছেন, পরে তা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে আজ, বুধবার বিমানের নির্বাচনী কেন্দ্র বারুইপুরে দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে সভা করতে যাওয়ার কথা তাঁর। স্পিকার অবশ্য কটাক্ষের সুরে বলেছেন, “বারুইপুরের প্রতিনিধি হিসেবে বিজেপির বিধায়কদের সেখানকার উন্নয়নমূলক কাজগুলি দেখে আসতে অনুরোধ করছি। বাইপাস, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এবং এই এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকায় গত ১০ বছরে পানীয় জল সরবরাহের যে কাজ হয়েছে, তা জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের দেখা প্রয়োজন!”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)