—প্রতীকী ছবি।
যেতেও কেউ ঠেকায় না, আসতেও কেউ মানা করে না। লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। গত শতকে। ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বঙ্গ বিজেপির অন্দরের হালও এখন অনেকটা সেই রকম!
রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ধুম পড়েছিল। এ দল-সে দল থেকে দলে দলে লোকজনকে পতাকা ধরিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। অতিথিদের স্রোতে তৃণমূল ছেড়ে আসা মুখই ছিল বেশি। তাঁদের অনেকে পুরনো দলে দম নিতে পারছিলেন না, কেউ কেউ ছিলেন সরাসরিই টিকিট প্রত্যাশী। এখন আবার ভোটে ফল উল্টো হওয়ার পরে স্রোতও ঘুরে গিয়েছে! কেন বিজেপিতে থাকা যায় না, তার নানা কারণ দেখিয়ে ফেরার রাস্তা ধরছেন অতিথিদের অনেকে। আর এই যাওয়া-আসার পালা ঘিরে বিজেপির ঘরে বেঁধেই রয়েছে বিবাদ। মুড়ি-মিছরির মতো অন্য দল থেকে নেতা বা বাইরে থেকে তারকা নিয়ে এসে খাতির করার বিরুদ্ধে ছিলেন আদি বিজেপি নেতারা। এখন অতিথিরা ফিরতি যাত্রা শুরু করতেই তাঁরা আরও উৎসাহিত হয়ে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে খোঁচা দিচ্ছেন। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের চলে যাওয়া এবং আদি বিজেপির আক্রমণ— দু’দিক থেকেই ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে দিলীপ ঘোষদের! বলতে হচ্ছে, শুধু ক্ষমতায় আসার কথা ভেবেই যদি কেউ এসে থাকেন, তাঁরা চলে গেলে কী আর করা যাবে!
বিধানসভার প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী সোনালি গুহ ‘দিদি’র উদ্দেশে চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়েছেন। পুরনো দলে তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। সোনালি শুধু একা নন। ভোটের আগে বিজেপিতে যাওয়া নেতাদের কেউ কেউ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন, কেউ আবার পরিবারের অন্যদের মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন। কেউ বলছেন, ‘পাপ করেছি, শাস্তি পেতে হবে’, কারও আবার উপলব্ধি ‘আবেগের বশে ভুল কাজ হয়ে গিয়েছিল’। কেউ ‘ব্র্যান্ড মমতার জয়ের’ জন্য তৃণমূল নেত্রীকে অভিনন্দনসূচক বার্তাও পাঠিয়েছেন! তৃণমূলের বিপুল জয়ের পরে জেলায় জেলায় আসতে শুরু করেছে প্রত্যাবর্তনের এমন বিবিধ আবেদন। রকম-সকম দেখে সৌগত রায়ের মতো বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতারা সওয়াল করতে শুরু করেছেন, যাঁরা ভোটের আগে হুড়মুড়িয়ে ছেড়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের অন্তত ৬ মাস ফিরতে দেওয়া উচিত নয়!
শুধু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই নন। টলিউডের নানা স্তর থেকে তুলে আনা কিছু মুখও ভোটের পরে কয়েক দিনে বিজেপির আকাশ থেকে খসে গিয়েছে। দলের যুব মোর্চার ভার্চুয়াল বৈঠকে সোমবারই যেমন রিমঝিম মিত্রের অনুপস্থিতি জল্পনা বাড়িয়েছে।
আর ঠিক এই পরিস্থিতিতেই আক্রমণের বর্শামুখ ধারালো করছেন তথাগত রায়ের মতো নেতারা। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির মন্তব্য, ‘‘যা বলেছিলাম, ঠিক তা-ই হচ্ছে! কাছা খুলে যাদের বিজেপিতে স্বাগত জানানো হয়েছিল, যাদের খাতিরে বিজেপির বিশ-ত্রিশ বছরের পুরনো কর্মীদের চরম উপেক্ষা করা হয়েছিল, তারা সবাই এক এক করে তৃণমূলে ফিরে যাচ্ছে।’’ বাছ-বিচার না করে দল ভাঙিয়ে লোক আনার খেসারত বিজেপিকে দিতে হয়েছে বলে ফলপ্রকাশের পরেই কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপবাবু, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেননদের নিশানা করেছিলেন তথাগতবাবু।
দলের বর্তমান রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘অন্য দল ছেড়ে যাঁরা বিজেপির হয়ে কাজ করতে চেয়েছেন, আমরা তাঁদের সম্মানের সঙ্গে দলে জায়গা দিয়েছি। তাঁরা কেন এখন ছেড়ে যাচ্ছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন। এটা তাঁদের সমস্যা!’’ দিলীপবাবুর যুক্তি, বহু রাজ্যেই এ ভাবে অন্য দল থেকে নেতা-কর্মীদের এনে জায়গা দিয়েছে বিজেপি। কিছু লোকের চলে যাওয়ায় দলের ক্ষতি হবে না।
বিজেপিরই কোনও কোনও নেতার আক্ষেপ, ‘‘ছাঁকনি শক্ত না হলে আসা-যাওয়া যে চলতেই থাকবে, নেতৃত্ব কবে বুঝবেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy