Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Sovon Chatrejee

Sovan Chatterjee: বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে তৃণমূলের ঘরে ফিরছেন শোভন? কথা হয়েছে মমতার সঙ্গেই

শেষ মুহূর্তে কোনও নাটকীয় পট পরিবর্তন না হলে বিজেপির সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক চুকিয়ে ‘জল শোভন’ ফিরছেন সেখানেই, যেখানে তিনি মাছের মতো স্বচ্ছন্দ।

তৃণমূলে ফিরছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়?

তৃণমূলে ফিরছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২২ ১৫:৩৭
Share: Save:

সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক চললে তৃণমূলে ফিরছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। শাসকদলের সর্বময় কর্ত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর এ বিষয়ে আলোচনা একেবারে চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছেছে। শেষ মুহূর্তে কোনও নাটকীয় পট পরিবর্তন না হলে বিজেপির সঙ্গে যাবতীয় সংস্রব এবং সম্পর্ক চুকিয়ে ‘জল শোভন’ ফিরছেন সেখানেই, যেখানে তিনি মাছের মতো স্বচ্ছন্দ।

এই জল্পনাকেই বৈধতা দিয়ে শোভন এবং তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বুধবার দুপুরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। সূত্রের খবর, সেখানেই শোভনের তৃণমূলে ফেরার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। একইসঙ্গে সিদ্ধান্ত হতে পারে বৈশাখীর তৃণমূলে যোগদান নিয়েও।

তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, একসঙ্গেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। ফিরলেও জুড়িতেই ফিরবেন। সে ক্ষেত্রে বৈশাখীকে দলের কাজে কী ভাবে লাগানো যায়, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাপড়েনের জেরে শোভন তৃণমূল ছেড়েছিলেন বলেই কথিত। তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের কখনওই কোনও ‘রাজনৈতিক দূরত্ব’ সে ভাবে তৈরি হয়নি। দলের পাশাপাশিই শোভন ছেড়েছিলেন কলকাতার মেয়রের পদ এবং রাজ্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রিত্বও। কালক্রমে তিনি বেহালা পূর্বের বিধায়ক পদটিও আর ধরে রাখেননি। ২০২১ সালের ভোটে তিনি তাঁর পুরনো কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়েননি। সেখান থেকে তৃণমূল টিকিট দিয়েছিল শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি আসনটি জিতে অধুনা বেহালা পূর্বের বিধায়ক।

তৃণমূল ছাড়ার পর শোভনের তৎকালীন ‘স্বাভাবিক গন্তব্য’ ছিল বিজেপি। বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে শোভনের সম্পর্ক কখনওই খুব ‘মসৃণ’ ছিল না। বার বারই তাঁর এবং বৈশাখীর সঙ্গে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের মনোমালিন্য হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁদের নামে অভিযোগও করা হয়েছিল। কিন্তু মূলত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপেই তাঁরা তখনকার মতো বিজেপিতে রয়ে গিয়েছিলেন।

তবে দ্বন্দ্ব এবং মন কষাকষি কমেনি। যার জেরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের প্রক্রিয়া থেকে খানিকটা দূরেই ছিলেন শোভন-বৈশাখী। ভোটে বিজেপির বিপর্যয়ের পর সেই দূরত্ব আরও বাড়ে। বস্তুত, ‘সক্রিয় রাজনীতি’ থেকেও দূরত্ব বেড়েছিল শোভনের।

বিধানসভা ভোটে বিজেপির বিপর্যয়ের পর ভোটের অনেক আগে বা অব্যবহিত আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া বেশ কয়েক জন নেতা আবার ঘরে ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে যেমন আছেন অধুনা-প্রবীণ মুকুল রায়, তেমনই আছেন রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সব্যসাচী দত্ত। আবার বিজেপি থেকে তৃণমূলে এসেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। কিন্তু শোভনের কথা সে ভাবে কখনও আলোচিতই হয়নি। তৃণমূলের শীর্ষনেতাদের অধিকাংশই মনে করে নিয়েছিলেন, শোভন সক্রিয় রাজনীতি থেকে কার্যত সরেই গিয়েছেন। সেই পরিস্থিতিতেই ময়দানে নামেন স্বয়ং মমতা।

শোভনের ঘনিষ্ঠদের দাবি, দল বা মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও মমতার সঙ্গে শোভনের একটা স্নেহের সম্পর্ক বরাবরই বজায় থেকেছে। দু’তরফের মধ্যে বাক্যালাপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এমনও নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে থাকলেও মমতা-শোভনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক টোল খায়নি।

সেই সূত্রেই শোভনের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে আলাপ-আলোচনার শুরু হয়েছিল বলে দলীয় সূত্রে খবর। সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকলে শোভন নিয়মিত রাজনীতির খোঁজখবর রাখেন। ঘনিষ্ঠমহলে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মতামতও প্রকাশ করেন। তবে তিনি কখনওই সে ভাবে শাসক তৃণমূল সম্পর্কে কোনও বেমক্কা মন্তব্য করেননি। একবারই আমপানের পর কলকাতার মেয়রের (ফিরহাদ হাকিম) ভূমিকা এবং প্রশাসনিক পরিকল্পনা নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন। সেটা বাদ দিলে শোভনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা বেশি হয়েছে। রাজনীতি নিয়ে নয়।

এই পরিস্থিতিতে শোভন তৃণমূলে ফিরলে কী হিসাবে ফিরবেন, সেটিও প্রণিধানযোগ্য প্রশ্ন। শাসক শিবিরের একটি সূত্রের দাবি, শোভনকে প্রয়াত সাধন পান্ডের মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে প্রার্থী করতে পারেন মমতা। কিন্তু শাসকদলেরই অন্য একটি অংশের বক্তব্য, ওই আসনে সাধনের স্ত্রীকে দাঁড় করানোর কথা রয়েছে। স্ত্রী না হলে সাধনের কন্যা শ্রেয়া পান্ডেকেও বড়তলা আসনে টিকিট দেওয়া হতে পারে। বিশেষত, যখন শ্রেয়া তাঁর বাবা অসুস্থ থাকার সময়ে থেকেই তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন। ফলে সাধনের স্ত্রী-কন্যার পরিবর্তে শোভনকে ওই আসনে দাঁড় করাতে গেলে স্বয়ং মমতাকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। দলের সর্বময় নেত্রীর উপরে কেউ কথা বলেন না— এটাই তৃণমূলের বরাবরের রেওয়াজ। ফলে মমতা যদি শোভনকে মানিকতলায় উপনির্বাচনে দাঁড় করাতে চান, তা হলে দলের অন্দরে তা মেনে নেওয়া হবে বলেই সূত্রের দাবি।

তবে তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, শোভন তৃণমূলে ফিরলেও মমতা এখনই তাঁকে বিধায়ক বা ওই ধরনের কোনও জনপ্রতিনিধিত্ব মূলক পরিসরে না-ও জায়গা দিতে পারেন। আপাতত তাঁকে দলে কোনও পদ দেওয়া হতে পারে। পরে ভবিষ্যতে শোভনকে পুরসভা, বিধানসভায় দাঁড় করানোর কথা ভাবতে পারেন মমতা। তবে তৃণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ একটি বিষয়ে নিশ্চিত— মমতা শোভনকে রাজ্যের রাজনীতিতেই রাখতে চান। জাতীয় রাজনীতিতে নয়।

দলের একাংশে আবার জল্পনা শুরু হয়েছে রত্নাকে নিয়েও। কারণ, রত্না এবং শোভনের সম্পর্কের জটিলতা আদালতে গড়িয়েছে। শোভনেরই ছেড়ে যাওয়া আসনে রত্না বিধায়ক হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে শোভন তৃণমূলে ফিরলে রত্না তা কী ভাবে নেবেন, তা নিয়েও দলের নেতাদের একটা অংশ আলোচনা শুরু করেছেন। তবে দলের শীর্ষসূত্রের দাবি, রত্নার সঙ্গে ইতিমধ্যেই দলনেত্রী নিজে কথা বলে নিয়েছেন। ফলে ওই বিষয়টির ফয়সালা হয়ে গিয়েছে। রত্না দলের বিধায়ক হিসেবে যেমন রয়েছেন, তেমনই থাকবেন। শোভনকে দল যে দায়িত্ব দেবে, তিনি তা পালন করবেন। আরও যে প্রশ্নটি নিয়ে তৃণমূলে জল্পনা চলছে, তা হল শোভনের সঙ্গে বৈশাখীও কি ‘আনুষ্ঠানিক’ ভাবে তৃণমূলে যোগ দেবেন? বৈশাখী এর আগে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের মধ্যেও যথেষ্ট হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলেই সকলে জানেন। কিন্তু গত কয়েক বছরের তথ্য এবং ঘটনাক্রম বলছে, শোভন এবং বৈশাখী সিদ্ধান্ত নেন একত্রেই। সে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই হোক বা ব্যক্তিগত। সেই প্রেক্ষিতে বৈশাখীও তৃণমূলে যোগ দেবেন কি না, নাকি তিনি তাঁর অধ্যাপনা পেশা নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন, সেটিই দেখার।

তবে শোভনের প্রত্যাবর্তনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একটা অংশ উচ্ছ্বসিত এবং আশ্বস্তই হবেন বলে মনে করছেন দলের শীর্ষনেতারা। শোভন নিজে দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করেছেন। কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’-এর ভূমিকাও পালন করেছেন। মমতাও বিভিন্ন সময়ে তাঁর উপর নির্ভর করেছেন। ফলে শোভনের প্রত্যাবর্তনে তৃণমূলের লাভই দেখতে পাচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ।

তবে তৃণমূলের অন্দরে শোভনের ‘হিতৈষী’-ও কম নেই। তাঁরা শোভনের প্রত্যাবর্তনে খানিকটা ‘অস্বস্তি’-তে থাকবেন বৈকি! কারণ, তৃণমূল ছাড়ার আগে শোভন ছিলেন মমতার ‘অন্যতম ভরসা’। দু’জনের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এতটাই ভাল ছিল যে, শোভনকে তাঁর ডাকনাম ‘কানন’ বলে সম্বোধন করতেন মমতা। এমনকি, মন্ত্রিসভার বৈঠকেও। ফলে শোভন যদি আবার তাঁর পুরনো জায়গায় ফিরে পুরনো আলোকবৃত্তে ঢুকে পড়েন, তা হলে অনেকেরই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Sovon Chatrejee Mamata Banerjee TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy