ইতিমধ্যেই দিল্লি পৌঁছেছেন শোভন -বৈশাখী। —ফাইল চিত্র।
রাজধানীতে পৌঁছে গিয়েছিলেন গভীর রাতেই। আর কিছু ক্ষণের মধ্যে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। যোগ দিচ্ছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দিল্লিতে দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের হাত থেকেই তাঁরা আজ গেরুয়া পতাকা নেবেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। তবে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে মুকুল রায় এ দিন দুপুরেই দিল্লি পৌঁছেছেন। মুকুলের এ দিন দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল না। শোভনদের যোগদান উপলক্ষেই তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে খবর।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ প্রথমে দলের সর্বভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্ব বৈঠকে বসবেন শোভন ও বৈশাখীকে নিয়ে। তার পর রাজধানীতে দলের সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাঁদের আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে স্বাগত জানানো হবে। গেরুয়া শিবিরে যোগদানের পরে ছেড়ে আসা দল তৃণমূল সম্পর্কে ওই সাংবাদিক বৈঠকে শোভন কী বলেন, সে দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক শিবির।
লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছিলেন। তবে তাঁরা যে শুধু বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গেই কথা বলেছেন, তা নয়। ভোট মিটে যাওয়ার পর থেকে এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন তাঁরা। শোভনের যোগদানের বিষয়ে কয়েক দিন আগেই এ রাজ্যের শীর্ষ বিজেপি নেতাদের চূড়ান্ত মতামত জানতে চেয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই সময় দিলীপ ঘোষ, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায়-সহ রাজ্য বিজেপির সব শীর্ষ নেতাই তাঁকে দলে নেওয়ার বিষয়টি সমর্থন করেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ফুসফুসে সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
বিভিন্ন শর্ত নিয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে যাচ্ছেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের একটি অংশে গুঞ্জন ছিল। কেউ কেউ দাবি করছিলেন, কোনও বিশেষ দায়িত্ব বা পদের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি আদায় করে বিজেপিতে ঢুকতে চান শোভন। বিজেপি-ও তাতে রাজি বলে একাংশ দাবি করছিল। কিন্তু বিজেপি সূত্র এবং শোভন ঘনিষ্ঠরা বলছেন, কোনও শর্তই দেননি তিনি। শুধু মর্যাদার সঙ্গে কাজ করতে চান বলে শোভন জানিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে। তিনি একা নন, তাঁর পাশে থেকে বৈশাখীও রাজনীতি করবেন এবং তাঁর মর্যাদার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে, এ ব্যাপারেও বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে শোভন স্পষ্ট আশ্বাস আদায় করে নেন বলে খবর।
এই মর্যাদার সঙ্গে রাজনীতি করার প্রশ্নেই কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। প্রথমত, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে যে ভাবে মন্তব্য করছিলেন, তা একেবারে পছন্দ ছিল না শোভনের। এতে তাঁর মর্যাদাহানি হচ্ছিল বলেই মনে করছিলেন শোভন। কিন্তু প্রকাশ্য তিরস্কার থামেনি এবং ২০১৮-র ২০ নভেম্বর মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন শোভন। এর পরে তাঁকে কলকাতার মেয়র পদও ছাড়তে বলা হয়। তিনি তা-ও ছেড়ে দেন। সেই থেকে এ পর্যন্ত তৃণমূলের কোনও কর্মসূচিতেই যাননি শোভন। যাননি বিধানসভাতেও।
আরও পড়ুন: ছত্রধর-সহ চার মাওবাদীর যাবজ্জীবন খারিজ, বেকসুর ছাড়া পেলেন প্রসূন-রাজা
শোভন নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে তৃণমূলও নিষ্ক্রিয় ছিল এমন কিন্তু নয়। লোকসভা নির্বাচনের কিছু দিন আগে গুঞ্জন উঠেছিল যে, শোভনরা বিজেপিতে যেতে পারেন। তখন থেকেই তৃণমূল তৎপর হয়ে ওঠে প্রাক্তন মেয়রের মান ভাঙাতে। হেভিওয়েট নেতাদের কাজে লাগিয়ে তাঁর মান ভাঙানোর চেষ্টা শুরু হয়। লোকসভা নির্বাচনের পরে শোভন-বৈশাখীর গেরুয়া যোগ নিয়ে গুঞ্জন আরও বাড়ে। তৃণমূল নেতৃত্ব আরও তৎপর হন। কিন্তু যাঁদের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শোভনকে ফের তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় করে তোলার, তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করেননি বলে তৃণমূলেরই একটি অংশ এখন দাবি করছে। কখনও ফিরহাদ হাকিম শোভনকে ফোন করেছেন, কখনও আবার শোভনের বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৈঠক করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতম রাজনৈতিক সহকর্মীদের অন্যতম কাননের মান ভাঙানো যায়নি। আসলে যে নেতাদের উপরে শোভনকে ফেরানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের ভূমিকা সম্পর্কে শোভন নিজেই সন্দিহান ছিলেন বলে প্রাক্তন মেয়রের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের দাবি।
তৃণমূলের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’ থেকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে যখন সরিয়ে দিয়েছিলেন দলের নেতৃত্ব, তখনও শোভন এই অবস্থানে অটল ছিলেন যে, বৈশাখী রাজনীতির জন্য ‘সম্পদ’। যে কলেজে বৈশাখী শিক্ষকতা করেন, সেই মিল্লি আল-আমিনেও কিছু জটিলতা ছিল। সে জটিলতা সম্প্রতি আরও বাড়ে। বৈশাখী ও শোভন যৌথ ভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে তা নিয়ে তোপ দাগেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যদি চাইতেন, তা হলে এই জটিলতা এত দূর গড়াত না বলেই শোভন মনে করছিলেন। পার্থ চাইলে ওয়েবকুপা থেকেও বৈশাখীর ‘অপমানজনক’ নিষ্ক্রমণ ঘটত না— শোভন এমনটাও বিশ্বাস করেন। তাই সম্প্রতি তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা তথা রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে শোভন কটাক্ষের সুরে প্রশ্ন করেছিলেন— গাজরটা আর কত দিন ঝুলিয়ে রাখবে?
যে মর্যাদার প্রশ্নে তৃণমূলের থেকে দূরে যাওয়া, বিজেপিতে যাওয়ার আগেও সেই মর্যাদার বিষয়টিতেই শোভন সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন বলে খবর। অন্য কোনও শর্ত দেওয়ার বদলে সম্মানের সঙ্গে রাজনীতি করার অবকাশ পাওয়াকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। বিজেপির তরফে সে বিষয়ে স্পষ্ট আশ্বাস মেলার পরেই তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy