অরবিন্দ মেনন (বাঁ দিকে) শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
অসুস্থ বিজেপি নেতাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাকে কেন্দ্র করে ধোঁয়াশা আরও বাড়ল শোভনের অবস্থানকে ঘিরে। পরিচিত ব্যক্তি অসুস্থ হলে তাঁকে দেখতে যাওয়া, সৌজন্য, এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা কেন? প্রশ্ন শোভন শিবিরের। কিন্তু শোভনের বিরুদ্ধে পুলিশে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগের খবর সামনে আসার পরের দিনই তাঁরা বিজেপি নেতাকে দেখতে যাওয়ায় জল্পনা অক্সিজেন পেয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই।
বিজেপির অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার সন্ধ্যায় সেই হাসপাতালে গিয়ে মেননকে দেখে এলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট নাগাদ তাঁরা হাসপাতালে ঢোকেন, ছিলেন প্রায় আধ ঘণ্টা।
মেননকে দেখতে এ দিন বিজেপি নেতারা দফায় দফায় হাসপাতালে গিয়েছেন। তবে শোভন এবং বৈশাখীও যে যাবেন, সন্ধ্যা পর্যন্তও বিজেপি দফতরে সে খবর ছিল না। এ দিন যখন শোভনরা হাসপাতালে পৌঁছন, তখন শিশির বাজোরিয়া, সাওয়র ধনানিয়া-সহ রাজ্য বিজেপির বেশ কয়েকজন পদাধিকারী সেখানে ছিলেন। দলের সাধারণ কর্মীরাও অনেকে ছিলেন। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে শোভন-বৈশাখীর সম্পর্ক খুব মসৃণ পথে না এগোনোয় দলীয় বৃত্তে তাঁদের দু'জনকে খুব একটা দেখা যায় না। তাই হাসপাতালে এ দিন শোভনদের দেখতে পাওয়াটা বিজেপি নেতাদের কাছে কিছুটা অপ্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু শোভনকে সামনে পেয়ে বিজেপি কর্মীরা এ দিন সাগ্রহে এগিয়ে গিয়ে সৌজন্য বিনিময় করেন। তিনি রাজনীতির ময়দানে সক্রিয়তা কমিয়ে দেওয়ায় কলকাতা তাঁকে 'খুব মিস করছে'— এমনও বলেন কেউ কেউ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ভাইফোঁটা নিয়ে আসার পর থেকে কিন্তু শোভন আর বৈশাখীকে বিজেপির বৃত্তে আর সে ভাবে দেখা যাচ্ছিল না। বরং কখনও সরকারি আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে হাজির হচ্ছিলেন তাঁরা| কখনও আবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে বিকাশ ভবন যাচ্ছিলেন বৈশাখী। ফলে শোভনের 'ঘর ওয়াপসি'র জল্পনা ক্রমশ তীব্র হচ্ছিলয়। শনিবার সন্ধ্যায় সে জল্পনা কিছুটা থমকে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: জেএনইউ-তে বিবেকানন্দের মূর্তির অবমাননা, প্রতিবাদে কলকাতায় মশাল মিছিল বিজেপি নেতাদের
শুক্রবারই জানা গিয়েছিল যে, শোভনের বিরুদ্ধে পর্ণশ্রী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। প্রায় দু'বছর ধরে রত্নার সঙ্গে শোভনের বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। রত্নার অভিযোগ, ভাইফোঁটার দিন সন্ধ্যায় শোভনের নম্বর থেকে হোয়াটস্যাপ মেসেজ করে মিউচুয়াল ডিভোর্স-এর জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হয়েছে। অশালীন শব্দ ব্যবহার করে গালাগালি দেওয়া হয়েছে বলেও রত্নার দাবি। সেই অভিযোগই তিনি পর্ণশ্রী থানাকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন বলে শুক্রবার জানা যায়। তার পরের দিনই শোভন ও বৈশাখীকে বিজেপির বৃত্তে দেখা যাওয়া কি নেহাৎ সমাপতন? উঠেছে প্রশ্ন।
তৃণমূলে রত্না চট্টোপাধ্যায় যে ভূমিকা এখন পালন করছেন, তা যে শোভনের মোটেই পছন্দ নয়, সে কথা প্রাক্তন মেয়র নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে বহুবার জানিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভনের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা ইদানীং কমার ইঙ্গিত মিললেও রত্না-অস্বস্তি থেকেই গিয়েছিল বলে খবর। শোভনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রত্না পুলিশের কাছে জানিয়েছেন বলে শুক্রবার জানা গিয়েছে, তার জেরে সে অস্বস্তি আরও বেড়েছে। তাই এ দিন মেননকে দেখতে শোভনরা হাসপাতালে ছোটায় রাজনৈতিক জল্পনা নতুন মোড় নিয়েছে।
আরও পডু়ন: বিকাশ ভবনের সামনে অনশনে ৪০ জন, আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছেন পার্শ্ব শিক্ষকেরা
শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজে অবশ্য যাবতীয় জল্পনা নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘অরবিন্দ মেননের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই আমার সুসম্পর্ক। তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে দেখতে যাওয়াটা তো আমার কর্তব্য।’’ প্রায় একই সুরে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘মেননজি আমাদের শুভানুধ্যায়ী। আমার দুর্দিনে, আমার সুদিনে, সব রকম সময়েই ওঁকে পাশে পেয়েছি। তিনি আজ অসুস্থ। তাঁকে দেখতে যাওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিকতা রয়েছে বলে মনে করি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy