গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দীর্ঘ জল্পনার অবসান। বিজেপিতেই যোগ দিচ্ছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। যোগ দিচ্ছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বুধবারই তাঁরা নয়াদিল্লিতে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সদর দফতরে গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নেবেন বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে দিল্লির উড়ান ধরেন দু’জনে।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মৎস্য এবং প্রাণী সম্পদ স্থায়ী সমিতি (স্ট্যান্ডিং কমিটি)-র চেয়ারম্যান পদ থেকে মঙ্গলবারই ইস্তফা দিয়েছেন শোভন। নিজে বিধানসভায় যাননি। দূত মারফৎ নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। শোভনের এই পদত্যাগের খবর প্রকাশ্যে আসতেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, তৃণমূলের হয়ে তাঁর সক্রিয় হয়ে ওঠার কোনও সম্ভাবনাই আর নেই। ইস্তফা পাঠিয়ে এ দিন শোভন নিজেই সে বার্তা আসলে স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছিলেন। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই শোভন এবং বৈশাখী দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন বলে।
শোভন এবং বৈশাখীর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে জল্পনা অনেক দিন ধরেই চলছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপি-র তরফে শোভনকে দলে টানার চেষ্টা শুরু হয়। শোভন নিজে সে সময়ে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেননি ঠিকই। কিন্তু, তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কলেজ শিক্ষিকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সে সময়ে বিজেপি ও সঙ্ঘ নেতৃত্বের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠকে বসেছিলেন। পরে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথা স্বীকারও করেন। তবে, দু’পক্ষের কথাবার্তা সে সময়ে কোনও উপসংহারে পৌঁছয়নি। শোভন-বৈশাখী বিজেপিতে যোগও দেননি তখন।
আরও পড়ুন: বৈঠক হয়ে গিয়েছে রামলালের সঙ্গে, শোভন বিজেপির পথেই, স্পষ্ট ইঙ্গিত ঘনিষ্ঠদের
লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরেই আবার নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়। এ বার আর বৈশাখী একা নন, শোভন নিজেও কথোপকথনে অংশ নেন। দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি-র তদানীন্তন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) রামলালের সঙ্গে তাঁরা বৈঠকে বসেন বলে জানা যায়। সে দিনই শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে রামলাল আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে নিজের উত্তরসূরি বিএল সন্তোষের। দিল্লি সূত্রে তেমনই জানা গিয়েছিল। তবে, কোনও পক্ষই ওই বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোথাও মুখ খোলেনি।
আরও পড়ুন: স্পিকারও পারলেন না, তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে ইস্তফা শোভনের
তৃণমূলও কিন্তু চুপচাপ বসে ছিল না। আগামী বছর পুর নির্বাচনের মুখোমুখি হবে কলকাতা। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বলছে, কলকাতার ৫০টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর পরই বিজেপি-র হাওয়া যে আগের চেয়ে বেড়েছে বই কমেনি, তা-ও তৃণমূল নেতৃত্বের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই পরিস্থিতিতে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট নাম গেরুয়া শিবিরে যোগদান করলে মহানগরের বুকে পরিস্থিতি যে তৃণমূলের জন্য আরও প্রতিকূল হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে সে কথা বলাই বাহুল্য। তাই যে কোনও উপায়েই শোভনের মান ভাঙিয়ে তাঁকে দলের জন্য সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা শুরু হয়েছিল। দলের সে তৎপরতায় তিনি যে সাড়া দিতে রাজি নন, তা-ও শোভন বার বার বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
তবু, হাল না ছেড়ে ২৩ জুলাই রাতে শোভনের বাড়িতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সে দিন প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত বৈঠক করেন তিনি। শোভনকে প্রয়োজনে আবার মেয়র পদই ফিরিয়ে দেওয়া হবে, এমন প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল বলে একটি অংশের দাবি। কিন্তু, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে খুব একটা ইতিবাচক উত্তর শোভন দেননি। বরং এর দিন পনেরোর মধ্যে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসে পার্থকে বড়সড় প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করান শোভন। বৈশাখী যে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা, সেখানে বৈশাখীকে হেনস্থা করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল ওই সাংবাদিক সম্মেলনে। সেই চেষ্টার পিছনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত রয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা হয়।
শোভন-বৈশাখীর সেই যৌথ বিস্ফোরণের পরে রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশই বলতে শুরু করেছিল যে, তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের কোনও পথই আর খোলা থাকছে না তাঁদের জন্য। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব তার পরেও হাল ছাড়েননি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় নেননি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা। বৈশাখীর সমস্ত অভিযোগের যথাযথ তদন্ত হবে বলে বরং আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। এতেই শেষ নয়। শনিবার বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করেছিলেন শোভনকে। বিধানসভায় আসতে এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক ডাকতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। শোভন সে দিন বিমানকে জানান, সময় পেলে দেখা করবেন। এই সপ্তাহে সেই সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সাক্ষাৎ আর হল না। মঙ্গলবার সকালে দূত মারফৎ নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিলেন শোভন। রাতের উড়ানে শোভন এবং বৈশাখী রওনা হয়ে গেলেন দিল্লি।
বুধবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নিচ্ছেন তাঁরা দু’জনেই। বিজেপিতে যোগদানের পরে কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বড়সড় সাংগঠনিক দায়িত্ব শোভনের উপরে ন্যস্ত হতে চলেছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। তবে, বিজেপির তরফে শোভনদের যোগদান বা দায়িত্বপ্রাপ্তির বিষয়ে এখনই কোনও মন্তব্য আনুষ্ঠানিক ভাবে করা হয়নি। শোভন-বৈশাখীও মঙ্গলবার রাতে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy