সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।—ছবি এএফপি।
রাজনীতির বাইশ গজে তাঁকে ব্যাট হাতে দেখা যাবে কি না, সেই প্রশ্নে জল্পনা চলছে কিছু দিন ধরেই। রাজ্যে প্রধান বিরোধী শিবিরের মুখ তিনি হয়ে উঠতে পারেন কি না, গুঞ্জন মূলত তা নিয়েই। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠা, সম্প্রতি করোনা আবহে সমাজসেবামূলক কাজে তাঁর সক্রিয়তা এবং নিজে গাড়ি চালিয়ে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে তাঁর একান্ত সাক্ষাৎ— এ সবই জল্পনাকে আরও জোরদার করে চলেছে। যদিও বিজেপি শিবির বা তাঁর তরফ থেকে একটি শব্দও এই নিয়ে খরচ করা হয়নি।
এই আবহেই এ বার নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে এলেন প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নতুন ইনিংসের সূচনার ক্ষেত্রে এই সাক্ষাৎ অন্য কোনও মোড় এনে দিল কি না, ফের জল্পনা শুরু হয়েছে তা নিয়ে।
নবান্ন সূত্রে অবশ্য বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠককে নিছকই ‘সৌজন্যনমূলক’ বলা হয়েছে। সৌরভ শিবির সূত্রেও বলা হচ্ছে, রাজনীতির বিষয় ওই বৈঠকের আলোচ্য ছিল না। তবে সূত্রের দাবি, দু’জনের একান্ত কথাবার্তায় সৌরভের পরিবার, ক্রিকেট, জাতীয় রাজনীতি নিয়ে সৌরভের আগ্রহ সব কিছুই এসেছিল।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সৌরভের হাতে বেহালা, দক্ষিণ শহরতলির একটি বড় আবাসন প্রকল্প, রাজারহাটে জমি রয়েছে। সেই সব জায়গায় তাঁর কিছু প্রকল্প নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তার অধিকাংশই মিটে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। ডোমজুড়ে সিএবি’র একটি স্টেডিয়াম তৈরি করার কথা। তার অগ্রগতি নিয়েও কথা হয়েছে। মমতা এবং সৌরভ দু’জনে পরস্পরের সঙ্গে আরও যোগাযোগ রেখে চলবেন বলেও বৈঠকে কথা হয়েছে। অন্তত এমনই দাবি প্রশাসনিক মহলের একাংশের।
আরও পড়ুন: ‘কারা কারা ভোটে দাঁড়াতে চান, হাত তুলুন’, বৈঠকে দিদির গুগলি
সৌরভ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হওয়ার পরেই সৌরভের বিজেপি যোগ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বোর্ডের সচিব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ। সূত্রের খবর, জাতীয় স্তরে বেশ কয়েক জন বিজেপি নেতার সঙ্গেও সৌরভের নিয়মিত যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। তখন থেকেই ২০২১-এর নির্বাচন আসলে ‘দাদা-দিদি’র লড়াই হতে চলেছে বলে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। সেই গুঞ্জন আরও জল-হাওয়া পেয়েছে করোনার সময়ে সৌরভ সমাজসেবামূলক নানা কাজে নেমে পড়ায়। তাতেই আবার নতুন মোড় এনে দেওয়ার জল্পনায় ইন্ধন দিচ্ছে নবান্নের এই বৈঠক।
ক্রিকেট মহল থেকে যা ইঙ্গিত, আপাতত নানা রকম দরজা খোলা রাখতেই হয়তো চাইবেন সৌরভ। তাঁর এবং জয়ের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে রেখেছে বোর্ড। আবার সৌরভের নাম শোনা যাচ্ছে পরবর্তী আইসিসি চেয়ারম্যানের দৌড়েও। এর মধ্যে বিজেপির হাত ধরে রাজনৈতিক অভিষেক হবে কি না, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তেমনই এত তাড়াতাড়ি অনেকে জল্পনা নস্যাৎও করে দিতে চাইছেন না!
আরও পড়ুন: লকেটের করোনা, ‘নির্ভীক’ দিলীপ
তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় রাজ্য সরকারের তরফে সৌরভকে এবং সিএবি-কে দেওয়া জমি নিয়ে কথা হয়ে থাকতে পারে বলেই খবর। রাজারহাটে সৌরভকে জমি দেওয়া হয়েছিল। যদিও বিনামূল্যে নয়, সরকারের ধার্য মূল্য অনুযায়ী টাকা দিয়ে সেই জমি নিয়েছিলেন তিনি। সেখানে স্কুল করার কথা ছিল তাঁর। যদিও সৌরভ নিজে আর রাজ্য সরকারের দেওয়া জমিতে স্কুল প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে খুব একটা আগ্রহী কি না, তা নিয়ে নানা জল্পনা শোনা যাচ্ছিল কয়েক দিন ধরে। তবে বরাবর মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রাক্তন অধিনায়ক বৃহস্পতিবারের সাক্ষাতে এ নিয়ে কিছু বলেছেন কি না, তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
এরই মধ্যে জল্পনা জিইয়ে থাকার উপাদান মিলছে রাজ্যপালের সঙ্গে প্রাক্তন অধিনায়কের যোগাযোগের সূত্রে। রাজভবন সূত্রের খবর, রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে সৌরভ ‘সোনার বাংলা’ গঠনের জন্য তাঁর ভূমিকার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সম্প্রতি শাহ একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলের অনুষ্ঠানে বাংলার মুখ কে হবেন, এই প্রশ্নে মুচকি হেসে জানিয়েছিলেন, ‘‘আ জায়েগা!’’ তার পরেই সৌরভের সঙ্গে রাজ্যপালের বৈঠক হয়। জয়ের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক এখন বেশ ‘ঘনিষ্ঠ’। এ ছাড়াও, গত দু’মাসে সৌরভের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে রাজ্যের কিছু আমলা, শিল্পপতি, পুলিশ অফিসার এবং তৃণমূলের কয়েক জন মন্ত্রীর কাছ বার্তা পাঠিয়ে ‘ফিডব্যাক’ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সে খবর নবান্নের কাছেও আছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ বার সৌরভের বৈঠকে স্রেফ ‘সৌজন্যমূলক’ বলে মনে করতে চাইছেন না অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy