Some interesting facts about Victoria Memorial dgtl
Victoria Memorial
দরজায় রহস্যময় রোমান হরফ, শতবর্ষে পা দেওয়া ভিক্টোরিয়া তৈরি হয়েছিল ভারতীয়দেরই টাকায়
‘কলকাতার তাজ মহল’— এই নামেও অনেকে ডেকেছেন এই সৌধকে। সত্যি সত্যিই এর সঙ্গে তাজ মহলের আশ্চর্য রকমের সাদৃশ্য রয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২১ ১৪:০৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
ভারত সম্রাজ্ঞী ইংল্যান্ডেশ্বরী ভিক্টোরিয়া প্রয়াত হন ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে। আর ১৯০৬ সালে শুরু হয় তাঁর স্মৃতিতে ভারতের তৎকালীন রাজধানী কলকাতায় এক সৌধ নির্মাণের কাজ। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯২১ সালে। সে হিসেবে দেখলে কলকাতার অন্যতম আইকন এই সৌধের শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে এই বছর।
০২১৬
‘কলকাতার তাজ মহল’— এই নামেও অনেকে ডেকেছেন এই সৌধকে। সত্যি সত্যিই এর সঙ্গে তাজ মহলের আশ্চর্য রকমের সাদৃশ্য রয়েছে। তাজ মহলের মতো এটিও রাজস্থান থেকে আনা মাকরানা মার্বেল পাথরে নির্মিত। ব্রিটিশ ও মুঘল স্থাপত্যের মিশ্রণে নির্মিত এই রীতিকে ‘ইন্দো-সারাসেনিক রিভাইভাল’ স্থাপত্যও বলে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
০৩১৬
প্রধান স্থপতি উইলিয়াম এমারসন সৌধ নির্মাণের সময়ে এতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন ভেনিসীয়, মিশরীয় এবং দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যরীতিকেও। সে দিক থেকে দেখলে এমন বৈচিত্রময় স্থাপত্য নিদর্শন ভারতে অদ্বিতীয়।
০৪১৬
সৌধের কেন্দ্রে রয়েছে একটি ডোম। তার চূড়ায় অবস্থান করে একটি কালো পরি। তার পোশাকি নাম ‘অ্যাঞ্জেল অব ভিক্ট্রি’ অর্থাৎ ‘বিজয়ের দেবদূত’। হাতে ট্রাম্পেট সমেত সেই পরি ব্রোঞ্জ নির্মিত। সে শুধু এই সৌধের শোভাই বাড়ায় না। সেই সঙ্গে সে নাকি সৌধকে বাজ পড়া থেকেও বাঁচায়।
০৫১৬
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল শুধু কলকাতাতেই নেই, লন্ডনে বাকিংহাম প্যালেসের সামনেও রয়েছে ‘ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল’। তবে সেটি সৌধ নয়, স্তম্ভ। তার শীর্ষেও রয়েছে এক পরি। তার রং সেখানে উজ্জ্বল সোনালি।
০৬১৬
কালো পরিটি হাওয়ার অভিমুখ অনুযায়ী ঘুরে যায়। কারণ তার তলায় রয়েছে বল বিয়ারিং এবং পারদ। তবে দু’বার সে ঘোরা বন্ধ করে দিয়েছিল ১৯৭৮-এ এবং ১৯৯২-এ। মেরামতির পরে বিজয়ের পরি আবার ঘুরে দেখে তার শহরকে।
০৭১৬
কেন্দ্রীয় ডোম বা চূড়াকে ঘিরে রয়েছে ৭টি প্রতীকী মূর্তি। এগুলি যথাক্রমে শিল্প, স্থাপত্য, দাক্ষিণ্য, ন্যায়বিচার, মাতৃত্ব, বিদ্যা ও প্রজ্ঞার অনুষঙ্গবাহী।
০৮১৬
সৌধটি আসলে একটি সংগ্রহশালা। এখানে গ্যালারির সংখ্যা ২৫। প্রখ্যাত চিত্রকর টমাস ড্যানিয়েলের আঁকা পুরনো কলকাতার ছবি-সহ বহু বিচিত্র সংগ্রহ রয়েছে এখানে। রয়েছে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের রচনার চিত্রিত দুর্লভ সংস্করণ। কলকাতায় নির্বাসিত নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের লেখা কত্থক নাচ ও ঠুমরি সঙ্গীতের উপর রচিত গ্রন্থের পাণ্ডুলিপিও।
০৯১৬
সৌধের ‘ভিক্টোরিয়া গ্যালারি’তে রানি ভিক্টোরিয়া ও প্রিন্স অ্যালবার্টের বেশ কিছু দুর্লভ প্রতিকৃতি রয়েছে। তা ছাড়াও হয়েছে ব্রিটিশ রাজ পরিবারের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের তৈলচিত্র।
১০১৬
ভিক্টোরিয়ার বাগান কলকাতার প্রেমিকদের মুক্তাঞ্চল। ৬৪ একর জমি নিয়ে তৈরি এই বাগান। বাগানের প্রধান প্রবেশদ্বারের সামনেই রয়েছে রানি ভিক্টোরিয়ার মূর্তি। এ ছাড়াও বাগান জুড়ে রয়েছে বেশ কিছু ব্রিটিশ রাজপুরুষের মূর্তিও।
১১১৬
বাগানের অন্য একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে নজর কাড়বে এক অপূর্ব তোরণ। তার শীর্ষে ধাতু নির্মিত এক অশ্বারোহী মূর্তি। এই তোরণ সপ্তম এডওয়ার্ডের স্মৃতিতে নির্মিত।
১২১৬
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানে ব্রিটিশ প্রভুশক্তির প্রতিভূ পুরুষদের সঙ্গে স্থান পেয়েছেন এক বাঙালি ব্যক্তিত্বও। তিনি স্যর রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। প্রখ্যাত উদ্যোগপতি।
১৩১৬
১৯৮৮-তে রাজ্যের তৎকালীন রাজ্যপাল ও ইতিহাসবিদ সৈয়দ নুরুল হাসানী এখানে একটি ‘কলকাতা গ্যালারি’ তৈরির পরিকল্পনা করেন। ১৯৯২-এ সেই গ্যালারি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত হয়। ১৯ শতকের কলকাতা যেন এখানে জীবন্ত।
১৪১৬
মূল দ্বারের কাছে রোমান হরফে ‘ভিআরআই’ লেখাটি খোদিত। অনেকের মতে এটি ‘ভিক্টোরিয়া রেজিনা ইম্পেরাট্রিক্স’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যার বাংলা ভাষান্তর হল, ‘ভিক্টোরিয়া, যিনি ইংল্যান্ডের রাজ্ঞী’। তবে অনেকে মনে করেন, এর অন্য কোনও দ্যোতনা রয়েছে। সব মিলিয়ে এই রহস্যের সমাধান আজও হয়নি।
১৫১৬
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল আজ যেখানে, একদা সেখানেই ছিল নাকি প্রেসিডেন্সি জেল। পরে তা আলিপুরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৬১৬
কাদের টাকায় নির্মিত হয়েছিল এই অসামান্য স্থাপত্য? উত্তরে জানা যায়, মূলত ভারতীয়দের কাছ থেকেই তোলা হয়েছিল সৌধ নির্মাণের টাকা। ব্রিটিশ সরকার নির্মাণ ব্যয়ের একটি অংশ বহন করেছিল মাত্র।