—ফাইল চিত্র।
ও পার থেকে হোটেল বুকিং করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত দিনে অনেকেই আসেন না। ফলে বুকিং বাতিল করতে হয়। হোটেল মালিকদের একাংশের অভিযোগ, এ জন্য বিভিন্ন সময়েই লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের। আগে থেকেই তৈরি হওয়া অসন্তোষ এ বার চরমে পৌঁছেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালের পর। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হারের পর থেকে সমাজমাধ্যমে ভারতীয়দের ‘কুৎসিত’ ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে বাংলাদেশি পর্যটকদের ‘বয়কট’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দার্জিলিঙের কয়েকটি হোটেল সংস্থা। যা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। হোটেল মালিকদের সংগঠন যদিও এই বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
‘রয়োপোরাস তক্তসং’ নামে দার্জিলিঙের একটি হোটেল সংস্থা ফেসবুক হ্যান্ডলে জানায় যে, তারা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাংলাদেশি পর্যটকদের বুকিং নেবে না। শোরগোল পড়ে যায় তা নিয়েই। এ বিষয়ে ওই হোটেলের মালিক রাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, বাংলাদেশি পর্যটকদের নিয়ে অতীতে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এই সিদ্ধান্ত তারই বহিঃপ্রকাশ। তাঁর সংযোজন, ‘‘বিশ্বকাপের পর থেকে বাংলাদেশের লোকেরা যে ভাবে কটূক্তি করছেন, তা আমাদের ভাল লাগছে না। কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা তো নেই। ভারত-বাংলাদেশ খেলা হলে তা-ও কথা ছিল। তখন ট্রোল করতেই পারে। কারণ ভারত জিতলে ভারতীয়েরাও ওদের ট্রোল করে। তাতে স্পোর্টসম্যান স্পিরিট থাকে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত হেরে গিয়েছে বলে যেটা করা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়।’’
শুধু দার্জিলিংই নয়, সিকিমেও বেশ কয়েকটি হোটেল সংস্থা বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বলে দাবি করেন হোটেল মালিকদের একাংশ। তাঁর দাবি, ‘‘অতীতে অনেক ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশিদের নিয়ে। বাংলাদেশ থেকে ভিসার ছবি পাঠিয়ে হোটেল বুক করা হয়। তার পর আর কোনও পাত্তা পাওয়া যায় না।’’ নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক দার্জিলিঙের এক হোটেল ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘সংবাদমাধ্যমে এই বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বললে সংগঠনের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে। আমার ব্যক্তিগত মত, বাংলাদেশিরা নানা কাণ্ড ঘটায়। হোটেলে এসে নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করেন না। এ ভাবে চলতে পারে না। ফাইনালে ভারতের হারের পর ওরা যা শুরু করেছে, তা একেবারেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।’’
এই বিষয়টি নিয়ে অবশ্য এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না হোটেল মালিকদের সংগঠন। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে ফেসবুকে কে কী পোস্ট করল, তা নিয়ে সংগঠনকে মন্তব্য করতেই হবে, এর কোনও মানে নেই। এ নিয়ে এই মুহূর্তে সংগঠন কিছু বলতে চায় না। তাই নো কমেন্টস।’’
তবে দার্জিলিঙের অধিকাংশ হোটেল মালিকই বাংলাদেশের পর্যটকদের ‘বয়কট’ করার পক্ষপাতী নন। তাঁরা হাঁটেনওনি সেই পথে। হোটেল ব্যবসায়ী অর্জুন ছেত্রী বলেন, ‘‘অতিথি দেব ভবঃ। আমরা পর্যটকদের এই ভাবেই দেখি। সব জায়গার সব ধরনের মানুষ আসতে পারেন আমাদের হোটেলে। আমরা কোনও পর্যটককেই বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে সংগঠনের উপর। সংগঠন যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমাদের সেটাই করতে হবে।’’
হোটেল সংগঠনগুলির তরফে এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু ঘোষণা করা না হলেও একাংশের মত, হোটেল সংস্থাগুলির এই বয়কটের সিদ্ধান্ত বেশি দিন স্থায়ী হবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের এক সদস্য জানান, প্রতি বছর দার্জিলিঙে প্রচুর বাংলাদেশি পর্যটক আসেন। বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় কলকাতার পরেই আছে দার্জিলিং। কারণ তাঁদের দেশে তুষারশৃঙ্গ নেই। সেই জন্য বারে বারেই দার্জিলিং-কালিম্পং ও সিকিম টানে বাংলাদেশিদের। আর তা ছাড়া এই ধরনের সিদ্ধান্ত রাজ্যের পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যতের জন্যও ভাল বার্তা দেয় না। এই সমস্ত বিষয় নজরে রেখেই হয়তো বয়কটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলা হবে হোটেল সংস্থাগুলিকে। রাজ্যের পর্যটন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাংলাদেশ আর আমাদের ভাষা, পোশাক, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস আর মনন এক। আমাদের রাজ্যে পর্যটনের নতুন নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে কাছের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাই ভাবা হয়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এমন সিদ্ধান্ত কখনওই কাম্য নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy