Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

গঙ্গায় ভাসান জরুরি নয়, মত পুরোহিতদের

বিসর্জনের জেরে গঙ্গা দূষণ রুখতে ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’ বা এনএমসিজি-র একটি নির্দেশিকাকে ঘিরে জোরালো হচ্ছে এই প্রশ্ন। ভাসানের দরুন নদী-দূষণের অভিযোগ নতুন নয়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:২৬
Share: Save:

প্রতিমার উপাদান নিয়ে এত উদ্যোগ, এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিসর্জনে এত গঙ্গা-নির্ভরতার মানে কী?

বিসর্জনের জেরে গঙ্গা দূষণ রুখতে ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’ বা এনএমসিজি-র একটি নির্দেশিকাকে ঘিরে জোরালো হচ্ছে এই প্রশ্ন। ভাসানের দরুন নদী-দূষণের অভিযোগ নতুন নয়। গঙ্গা বা তার উপনদীতে বিসর্জন না-দেওয়াই বিধেয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে। বিসর্জন দিয়ে নদীতে দূষণ ঘটালে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার সুপারিশও রয়েছে ওই নির্দেশিকায়। এই মর্মে গাঙ্গেয় অববাহিকার ১১টি রাজ্যেই নিষেধাজ্ঞা পৌঁছে গিয়েছে। শাস্ত্রজ্ঞেরা তাতে আপত্তির কিছু দেখছেন না।

প্রাজ্ঞ পুরোহিত মাত্রেই জানেন, পুজোর প্রতিমা মাটি, রুপো, সোনা, অষ্টধাতু, পেতলের তৈরি বা কাঠে আঁকা ছবি হতে পারে। বাঙালির থিমের হিড়িক কিন্তু এ-সবের তোয়াক্কা করেনি। নারকেলের ঠাকুর, শোলার ঠাকুর ইত্যাদির রমরমায় চালু রসিকতা, বিস্কুটের ঠাকুর, চায়ে বিসর্জন! পরিবেশকর্মী থেকে সরকারি কর্তাদের অনেকেই বলছেন, বিসর্জন যেখানেই হোক, গঙ্গা বাঁচাতেই হবে। থিমের পুজোয় বিচিত্র উপাদানের ঠাকুর থাকলেও পুজো সারা হয় ঘটেই। সুতরাং অত বড় পেল্লায় প্রতিমাটি যা নিছকই থিমের শোভা বর্ধন করে, তাকে গঙ্গায় নিমজ্জিত করার যুক্তিতে ফাঁক আছে অবশ্যই।

প্রবীণ পুরোহিত শম্ভুনাথ স্মৃতিতীর্থ বলছেন, ‘‘গঙ্গাতেই প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।’’ তিনি মনে করাচ্ছেন পুজোর সেই আবহমান মন্ত্র: গচ্ছ গচ্ছ পরং স্থানং যত্র দেব মহেশ্বরঃ শত্রুদর্পবিনাশায় পুনরাগমনায় চ। এই মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই পুজোয় ব্যবহৃত দর্পণ বিসর্জন হবে। দুর্গাপুজোর তিন দিন এই দর্পণেই পাদ্য, অর্ঘ্য ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। জলে রাখা দর্পণে প্রতিমা প্রতিবিম্বিত হলে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমেই বিসর্জন সম্পন্ন হয় বলে জানান শম্ভুবাবু।

রাজ্যে সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, ইদানীং তো ফুল-মালা জলে না-ফেলে গঙ্গার ঘাটে সংগ্রহের বন্দোবস্ত থাকে। আর প্রতিমা জলে পড়লেও তা ক্রেনে তুলে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে উপকরণগুলি ভেঙে ফেলা হয়। অর্থাৎ গঙ্গায় প্রতিমা গলে যাচ্ছে, এমনটা আজকাল প্রায় ঘটেই না। তবে এই পদ্ধতিটিকেও যথাযথ বলে মানতে রাজি নন পরিবেশকর্মীদের অনেকেই।

এক সময় এ রাজ্যে বিসর্জনের ‘কল্যাণী লাইন’ চালু ছিল। সব প্রতিমা বিসর্জন হত একটি জলাশয়ে। পরে সেই জলাশয় দূষণমুক্ত করা হত। কিন্তু তাতেও জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদদের জীবন বিপন্ন হয়। নৈহাটিতে হোসপাইপে প্রতিমা গলানোর নজির আছে। তাতে জলের অপচয়। তা ছাড়া গলিত প্রতিমা গঙ্গাতেই মেশে। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘প্রতিমা গঙ্গায় ফেলে তুলে নিলেও রং থেকে নানা দূষণ হয়। এর থেকে গঙ্গায় ফুলপাতা ছাড়া ছোট ঘটটুকু ফেলে প্রতিমা অন্যত্র জমা করে তা গলানো যেতে পারে। সেটাই বাস্তবসম্মত।’’ গণেশ ভাসানে সমুদ্র বাঁচাতে কিছুটা এই রীতিই মেনে চলছে মুম্বই। সেখানে এখন সাধারণ ধাতব প্রতিমার চল। সেই ধাতু অন্যত্র গলিয়ে পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলায় সেই পথে ভাসান দেওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেকেই। তবে এ বার এ-পর্যন্ত পুরনো রীতি মেনেই ভাসানের ছাড়পত্র মিলেছে বলে জানাচ্ছেন পুজোকর্তারা। ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গার নির্দেশিকা নিয়ে কলকাতা পুর-প্রশাসনেও জল্পনা বাড়ছে। গঙ্গার ঘাটগুলো বিসর্জনের জন্য তৈরি। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। তা পরিদর্শনও করেছেন কলকাতার মেয়র, পুলিশকর্তারা। কিন্তু নতুন নির্দেশিকার পর কী হবে?

মেয়র ফিরহাদ হাকিম শুক্রবার সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি অফিসে আগেই ছুটি হয়ে গিযেছে। কোনও চিঠি বা লিখিত নির্দেশ ছুটির আগে আসেনি। তাই যে-ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে-ভাবেই করতে হবে। বিসর্জনের দায়িত্বে থাকা একাধিক পুর অফিসার অবশ্য জানান, গঙ্গায় বিসর্জনের পরেই প্রতিমা তুলে নেওয়া হয়। কোনও কিছু জলে পড়ে থাকে না। তাই তেমন চিন্তা নেই।

পরিবেশ দফতরের একটি সূত্রের দাবি, গঙ্গায় বিসর্জন সংক্রান্ত একটি মামলার জেরে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গত বছরই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। নতুন করে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করার প্রয়োজন বর্তমানে নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

River Ganges Water Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy