বাবুলকে সরাসরি আক্রমণ করলেন মনো-সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। ফেসবুকে বাবুলকে লেখা খোলা চিঠিতে রত্নাবলীর দাবি, ‘আমি মনে করি, বালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আপনার মনোনয়নের ঘটনা নাগরিক সমাজের প্রতি এক চূড়ান্ত উপেক্ষার হিংস্র প্রকাশ।’
রত্নাবলী-বাবুল কথার লড়াই চলছে। ফাইল চিত্র
বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়কে ভোট না দেওয়ার জন্য আগেই ‘নো ভোট টু বাবুল’ স্লোগান উঠেছিল। সেই স্লোগান নিয়ে নেটমাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি কলকাতায় জমায়েতও হয়েছে। এ বার ‘সিটিজেন এগেনস্ট পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স’ নামে মঞ্চের তরফে বাবুলকে সরাসরি আক্রমণ করলেন মনো-সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। ফেসবুকে বাবুলকে লেখা খোলা চিঠিতে রত্নাবলীর দাবি, ‘আমি মনে করি, বালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আপনার মনোনয়নের ঘটনা নাগরিক সমাজের প্রতি এক চূড়ান্ত উপেক্ষার হিংস্র প্রকাশ।’
বাবুল অবশ্য ওই পোস্টটিকে ‘অগ্রাহ্য’ই করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘উনি গুছিয়ে অসত্য বলতে পারেন। এতটাই যে, গল্প-উপন্যাস লিখতে পারেন। ওঁর জন্য আমার শুভেচ্ছা রইল। আমার মন্ত্র হল— যাদের ব্যাখ্যা দেওয়ার দরকার নেই, কখনও নিজের কাজ নিয়ে তাদের কোনও ব্যাখ্যা দিতে যেও না। উনি নেটমাধ্যমে যা খুশি লিখতে পারেন। আমি মাটিতে দাঁড়িয়ে মাটির মানুষের সঙ্গে থাকি। তাদের অগাধ ভালবাসা এবং স্নেহ পাই।’’
খোলা চিঠিতে রত্নাবলীর বক্তব্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ‘হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ অবলম্বন করে ফ্যাসিস্ত শাসনের সম্ভাবনাকে রুখে দিতে পশ্চিমবঙ্গবাসী বাধ্যত (বাধ্য হয়ে) তৃণমূল প্রার্থীদের বিপুলভাবে জয়ী করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে রত্নাবলী লিখেছেন, ‘বিধানসভা নির্বাচনের পরে দল-বদলানো আপনি এবং বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে আপনার মনোনয়ন পশ্চিমবঙ্গবাসীর প্রতি একটা অশালীন অপমানের বেশি কিছু নয়। প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতি আপনার হিংস্র উক্তি, বিরোধী রাজনৈতিক মতাবলম্বী মহিলাদের প্রতি আপনার কটূক্তি এবং এরকম আরও বিভিন্ন কৃতকর্মের জন্য আপনি কখনও ভুল স্বীকার করেছেন বা ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার এবং লিঙ্গ-রাজনীতি আমার কাজের জায়গা। ফলে আমি আমার তুচ্ছ ব্যক্তি অবস্থান থেকেই বালিগঞ্জ বিধানসভা ক্ষেত্রের নির্বাচক আমার সহনাগরিকদের কাছে আবেদন করেছি, এই উপনির্বাচনে আপনাকে প্রত্যাখ্যান করতে।’
প্রতিবন্ধী-বিরোধী বক্তব্য সম্পর্কে বাবুলের জবাব, ‘‘আমি কোনও প্রতিবন্ধী মানুষকে বলিনি যে, তাঁরা পা ভেঙে দেব। আমি অতি সক্রিয় হয়ে দু’জনকে সতর্ক করেছিলাম, ছবি তোলার জন্য যাদের হুড়োহুড়িতে হুইলচেয়ার নিতে-আসা গরিব মহিলাদের বিপদ ঘটতে পারত।’’ তবে পাশাপাশিই বাবুল বলছেন, ‘‘কিন্তু ওই ঘটনা থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি এবং বুঝেছি যে, বলিউড পুরস্কার মঞ্চে শোয়ের রসিকতা রাজনীতিতে চলে না।’’
তৃণমূল কেন বাবুলকে প্রার্থী করল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে রত্নাবলী লিখেছেন, ‘আপনার বর্তমান নেত্রী, মমতা বন্দোপাধ্যায় সম্পর্কে আপনি পশ্চিমবঙ্গবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, বেটি পরায়া ধন হোতে হ্যায়, ইস বার বিদা কর দেঙ্গে। ভোল বদলে আপনি এখন যে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছেন, সেই তৃণমূল দল পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রভৃতি একগুচ্ছ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সেই দল কীভাবে আপনার মতন একান্ত নারীবিরোধী একজন পুরুষকে ঠাঁই দিলেন সেটাও একটা প্রশ্ন।’
রত্নাবলী আরও লিখেছেন, ‘ভুল স্বীকার করা বা ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে আপনার এখনকার আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তি যদি শুধু এই হয় যে, আপনার তৎকালীন দলের প্রতি আনুগত্যবশতঃ আপনি এই কথাগুলো বলেছিলেন, এখন আর বলছেন না, তা হলে বিশ্বাস করুন, আপনার জনপ্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতাকেই সন্দেহ করতে হয়। খুব বেশি হলে একজন আহ্লাদী অনুগত দলদাসের বাইরে খুব কিছু ভাবা সম্ভব হয় না।’
বাবুল সেই অভিযোগও অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি কোথাও, কোনওদিন কোনও নারীবিরোধী কোনও মন্তব্য করিনি। যদি মিথ্যে কথা বলা হয়, তা হলে তার স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করা হোক। রাজনৈতিক ভাবে তীব্র লড়াই আমি তৃণমূলের সঙ্গে করেছি। কিন্তু কারও সম্পর্কে কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। এ বারেও আমি দল বদলানোর পর যাঁরা ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন, আমি তাঁদের ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করেছিলাম। বলেছিলাম, সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু কটূক্তি কেন করছেন!’’
বাবুলের বক্তব্য, ‘‘বাবুল সুপ্রিয় তো পরিষ্কার বলেছে, কেন ছেড়েছে বিজেপি। পরিষ্কার ভাবে সব স্ট্রেট ব্যাটে খেলেছি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy