প্রতীকী ছবি।
লোকশিল্পের প্রতি অনুরাগে নয়, কয়লা ও গরু পাচারের সুলুকসন্ধানের জন্যই ২০১১ সালে তিনি বাঁকুড়া জেলার তালডাংরায় যাত্রাদলের একটি অফিস খুলেছিলেন বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, পিন্টু মণ্ডলের সেই যাত্রাদলের দফতরের আড়ালে কয়লা ও গরু পাচারের লভ্যাংশের টাকা লেনদেন হত। পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র ছাড়াও এক প্রভাবশালী সাংসদের খুব কাছের লোক ছিলেন পিন্টু। কয়লা ও গরু পাচারের লভ্যাংশের টাকা বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি। বিনয় দেশছাড়া। আদতে হুগলির আরামবাগের বাসিন্দা ওই পিন্টুকে খুঁজছে সিবিআই।
সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের পরে কয়লা ও গরু পাচারের কত টাকা বিনয় প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন, তার একটি হিসেব পাওয়া গিয়েছে। তারও আগে, ২০১১ সাল থেকে পিন্টু পাচার চক্র সংগঠিত করেছিলেন। তাঁকে প্রশ্ন করে গরু ও কয়লা পাচারের কত টাকা ২০১১ থেকে ২০১৫-র মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে গিয়েছিল, তার একটি আন্দাজ পেতে চাইছে সিবিআই।
পিন্টুকে তলব করে ইতিমধ্যেই দু’দফায় নোটিস জারি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তদন্তকারীদের মুখোমুখি হননি। সম্প্রতি তাঁর মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটেও হানা দিয়ে বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে সহযোগিতা করতে চেয়ে ২ মার্চ আসানসোলের সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পিন্টু একটি আবেদন করেছেন। জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে নয়, অন্য কোথাও তদন্তকারীদের সামনে বসতে চান তিনি। বিচারক ২৪ মার্চ ওই আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন বলে আদালত সূত্রের খবর।
কী ভাবে পাচার চক্রের তদন্তে পিন্টুর নাম উঠে এল?
তদন্তকারী সংস্থার এক কর্তা জানান, টালিগঞ্জের চলচ্চিত্র শিল্পে কয়লা ও গরু পাচার চক্রের লভ্যাংশের টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে সম্প্রতি তদন্তে উঠে এসেছে। সেই যোগসূত্রে পিন্টুর নাম উঠে আসে। পিন্টুর শ্বশুরবাড়ি বাঁকুড়ার রায়পুর এলাকায়। ওই এলাকাতেই কয়লা ও গরু পাচার মামলায় মূল দুই অভিযুক্ত এনামুল হক ও অনুপ মাজি ওরফে লালার সঙ্গে যোগাযোগ পিন্টুর। সেই যোগসূত্রেই পাচারের লভ্যাংশের টাকা বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতেন পিন্টু। এবং সেই লেনদেনের সুবিধার জন্যই পিন্টু বাঁকুড়ার তালডাংরায় যাত্রাদলের অফিস খোলেন। তদন্তকারীরা জানান, শুধু কলকাতা নয়, দিল্লি, মুম্বই ও বাংলাদেশে পিন্টুর নাকি কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে এবং গরু পাচারের সূত্রেই তিনি ও-পার বাংলায় জমি-বাড়ি কেনেন। সিবিআইয়ের অভিযোগ, রাজ্য পুলিশের কিছু কর্তা ও নিচু তলার পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে পিন্টু কয়লা ও গরু পাচার চক্র চালাতেন। পাচার পর্বের একটি বিশেষ সময়ে বিনয়ের ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত ছিলেন তিনি।
সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের পরে লভ্যাংশের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিনয়ের সঙ্গে পিন্টুর সংঘাত শুরু হয়। বিনয় তখন সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, যুব তৃণমূলের নেতাও। সিবিআই সূত্রের খবর, সংঘাতের পরেই পিন্টুর বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের তরফে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। কলকাতার বাগুইআটি ও নারায়ণপুরে তাঁর ফ্ল্যাটে হানা দেয় পুলিশ। তার পরেই তিনি মুম্বইয়ে আশ্রয় নেন। পরে শীর্ষ আদালত থেকে রাজ্য পুলিশের দায়ের করা মামলায় জামিনও পান তিনি।
সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “রাজ্য পুলিশের একাধিক বড় কর্তার সঙ্গে পিন্টুর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় কর্মরত এক পুলিশকর্তার খুব কাছের লোক ছিলেন তিনি। ওই পুলিশকর্তার বিষয়েও সবিস্তার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’’
পিন্টুর মোবাইল সুইচড অফ ছিল। তাঁর স্ত্রী মন্দিরা মণ্ডলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পিন্টুবাবু বাড়িতে নেই।’’ পিন্টুর আইনজীবী সনাতন ধাড়া বলেন, ‘‘তদন্তে আমার মক্কেল সিবিআইয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চান। কিন্তু এ রাজ্যে এসে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হওয়া সম্ভব নয়। কারণ রাজ্য পুলিশের তরফে মিথ্যা মামলা করে তাঁকে সেগুলিতে জড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা আছে। সেই জন্যই তিনি বাংলার বাইরে কোথাও জিজ্ঞাসাবাদে মুখোমুখি হতে সম্মত হয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy