বিএলএলআরও-র চেম্বারে তদন্তে পুলিশ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
এমন ঘটনার সাক্ষী আগে কখনও থাকেনি বোলপুর।
একে জনবহুল এলাকা। তার উপরে বিকেলবেলা। বোলপুর-শ্রীনিকেতনের রাস্তায় সে সময় মানুষজন ভর্তি। তার মধ্যে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরটিতে ঢুকে সেখানকার বিএলএলআরও-র মাথার দু’দিকে বন্দুক ঠেকিয়ে জমির রেকর্ড বদলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গেল কয়েক জন দুষ্কৃতী। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের শান্তিনিকেতনের বাড়িতে যখন ইডি-র হানা শুরু হয়েছে, তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ কত, সেটা নিয়ে যখন খোঁজ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকেরা, সেই আবহে এমন দুঃসাহসিক ঘটনা চমকে দিয়েছে বোলপুরের লোকজনকে। বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘এ রকম অভিযোগ পেয়েছি। পুরো ঘটনার তদন্ত করছেন সেখানকার আইসি। আমাদের আশা, দ্রুত অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ধরে নেওয়া যাবে।’’
কী হয়েছিল এ দিন?
স্কুলবাগান এলাকায় একটি জনবহুল রাস্তার পাশের গলিতে এই সরকারি দফতরটি। তখন বিকেল পৌনে পাঁচটা। অফিসে ছিলেন বিএলএলআরও সঞ্জয় রায় এবং জনা পঁচিশেক কর্মী। ছিলেন কাজের সূত্রে আসা আরও কয়েক জন সাধারণ মানুষও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ তিনটি মোটরবাইক চেপে ছ’জন হাজির হয় সেখানে। অধিকাংশের মাথায় হেলমেট। তাদের মধ্যে দু’জন সোজা ঢুকে যায় বিএলএলআরও-র চেম্বারে! এই দু’জন হেলমেট পরেনি। অফিস সূত্রে দাবি, সোজা সঞ্জয়ের চেয়ারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে এক জন বলে, এই সব জমি তিন দিনের মধ্যে রেকর্ড করিয়ে দিতে হবে। অভিযোগ, বিএলএলআরও আপত্তি করায় সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মাথায় দু’দিক থেকে বন্দুক ঠেকায় দু’জন। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, ‘কাজ না হলে ঝাঁঝরা করে দেব’!
সেই সময় অফিসের এক মহিলা কর্মী, সরস্বতী দে ঘরে ঢোকেন কিছু কাগজে সই করাতে। সরস্বতী পরে বলেন, ‘‘আমাকে ওরা বলে, ‘তুই ওখানেই দাঁড়া। এখন ঘর থেকে বার হবি না’। আমি ভয়ে ওখান থেকে নড়িনি।’’ সূত্রের খবর, এর পরে কেউ কিছু বোঝার আগে ওই দুই যুবক ঘর থেকে বার হয়ে যায়। বাইকগুলিও তাদের নিয়ে দ্রুত চলে যায়। তখন অফিসের কর্মীরা চিৎকার করে ওঠেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমীরণ পাল বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে আমি ভাবলাম ডাকাত পড়েছে! গিয়ে দেখি এই কাণ্ড। এত বছর এখানে ব্যবসা করছি, এমন ঘটনা আজ পর্যন্ত দেখিনি।’’
অফিস সূত্রের খবর, ওই দুই যুবকের রেখে যাওয়া নথির মধ্যে ছিল বোলপুরের নানা এলাকার বিপুল পরিমাণ জমির কাগজ। কাদের নামে ওই নথি, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে সূত্রের খবর, ওই জমির একটা বড় অংশই বেআইনি বলে প্রাথমিক ভাবে ব্লক ভূমি দফতর জেনেছে। বিএলএলআরও পরে বলেন, ‘‘আমি সাড়ে চার বছর এখানে রয়েছি। এ রকম যে হতে পারে, ভাবতেও পারিনি। পুরো ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশকে জানিয়েছি।’’
পুলিশ সূত্রে বক্তব্য, ভূমি সংস্কার অফিসে কোনও সিসি ক্যামেরা না থাকায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করায় সমস্যা হচ্ছে। তদন্তকারীরা কাছাকাছি দোকানগুলির সিসিটিভি খতিয়ে দেখেন। কিছু ফুটেজও সংগ্রহ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy