আবারও শিশুমৃত্যুর ঘটনা বিসি রায় শিশু হাসপাতালে। ফাইল চিত্র।
আবারও শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটল কলকাতার বিসি রায় শিশু হাসপাতালে। রবিবার ভোর থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জানা গিয়েছে, এদের মধ্যে এক জন মেটিয়াবুরুজ, আর এক জন মিনাখাঁর বাসিন্দা। মেটিয়াবুরুজের শিশুটি গত রবিবার থেকে জ্বর, শ্বাসকষ্ট-সহ একাধিক উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। অন্য জনও একই উপসর্গ নিয়ে গত সোমবার থেকে ভর্তি ছিল।
দুই পরিবারের অভিযোগ, কী কারণে শিশুদের মৃত্যু হল, তা স্পষ্ট করে জানাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের দাবি অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। মৃত শিশুদের পরিজনদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত শয্যা নেই। তাই অনেক সঙ্কটাপন্ন শিশুকে বাধ্য হয়েই সাধারণ শয্যায় রেখে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এই নিয়ে গত ২ মাসে রাজ্যে ৯৪ জন শিশুর মৃত্যু হল। শুধু বিসি রায় হাসপাতালেই মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জন শিশুর। রবিবার মৃত শিশুদের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ‘অ্যাডিনোভাইরাল নিউমোনিয়া’র কথা বলা হয়েছে।
তবে গরম পড়তে শুরু করায় অ্যাডিনো ভাইরাসের দাপট কমার আশা দেখছেন চিকিৎসকেরা। তবে আপাতত রাজ্যে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে অসুখে শিশু মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত শুধু বি সি রায় শিশু হাসপাতালে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। শিশু রোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যে সমস্ত বাচ্চা ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে, তারা ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছে। তবে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন শিশুদের মধ্যে এখনও মৃত্যু ঘটছে। শহরের এক চিকিৎসকের কথায়, “নতুন করে সঙ্কটাপন্ন রোগী আসার সংখ্যা কমেছে। তাই, আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেই আশা করছি। তত দিনে ক্রিটিক্যাল কেয়ারের রোগীর সংখ্যাও কমবে। তাতে মৃত্যুও কমবে।” স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ শুধু অ্যাডিনোর জন্য হচ্ছে তেমন নয়। যে কোনও ভাইরাস সংক্রমণেই তা হতে পারে। তাই সকলেই যে অ্যাডিনোতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে, তেমনটা বলা ঠিক নয়। আবার, বেশ কয়েক জনের মারাত্মক আনুষঙ্গিক অসুস্থতাও (কোমর্বিডিটি) ছিল।”
গরমের প্রকোপ বাড়তে শুরু করায় রোগীর সংখ্যা কমলেও, শিশুদের দিকে কড়া নজর রাখার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরির কথায়, “হাসপাতালের বহির্বিভাগে ও ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী কমেছে। হাসপাতালে ভর্তিও কিছুটা কমেছে। তবে মনে রাখতে হবে, যারা ভেন্টিলেশনে বা ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ছিল, তাদের আগামী এক বছর খুব কড়া নজরে ও সাবধানে রাখতে হবে।” কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও, একটু বড় বাচ্চাদের একাংশের মধ্যে টানা তিন-চার দিন তীব্র জ্বরের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। কলকাতা মেডিক্যালের শিশু রোগ চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরীর কথায়, “ওই সব ক্ষেত্রে শুধু জ্বরটাই থাকছে। কোনও কাশি বা সর্দি থাকছে না। তবে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে না। তাই, এই সময় জ্বর বা অন্য যে কোনও উপসর্গ দেখা গেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy