Advertisement
১৫ জানুয়ারি ২০২৫
Suvendu Adhikari

শুভেন্দু দলত্যাগ করবেন ধরেই কৌশল সাজাচ্ছেন মমতার সৈনিকরা

তাঁদের কৌশল খুব সরল— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁদের ‘আসল মুখ’। বাংলায় তাঁর কোনও বিকল্প নেই— এই বিষয়টি সামনে রেখেই ভোটে যাওয়া।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২০ ১৭:০০
Share: Save:

মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর শুভেন্দু অধিকারী দলও ছাড়বেন ধরে নিয়ে বিধানসভা ভোটের জন্য ভবিষ্যৎ কৌশল সাজাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের কৌশল খুব সরল— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁদের ‘আসল মুখ’। বাংলায় তাঁর কোনও বিকল্প নেই— এই বিষয়টি সামনে রেখেই ভোটে যাওয়া।

তবে একইসঙ্গে ওই নেতারা মনে করছেন, শুভেন্দু দল ছাড়লেও তাতে ‘তেমনকিছু ক্ষতি’ হবে না। বস্তুত, তাঁদের অভিমত, পূর্ব মেদিনীপুরেও তেমন ‘দাগ কাটতে’ পারবেন না রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘শুভেন্দু অভিষেক-জুজুতে ভুগছে। ও দল ছাড়লেও কারা যাবে ওর সঙ্গে? পূর্ব মেদিনীপুরের কোনও বিধায়ক যাবে?’’ ওই নেতার আরও বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দুর সমর্থনের মূল ভিত্তি হলেন সংখ্যালঘু মুসলিমরা। তাঁদের জন্যই ওর যাবতীয় সাফল্য। এমন কোনও একটা জেলায় কি শুভেন্দুর সাফল্য আছে, যেখানে মুসলিমরা নেই? আর রাজ্যের মুসলিমরা সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁরা কেউই মমতাকে ছেড়ে যাবেন না। ফলে শুভেন্দু দল ছেড়ে গেলেও তেমন কোনও ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না।’’

ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল শনিবার আবার খোলাখুলিই বলে বসেছেন, ‘‘আমি মনে করি শুভেন্দু তৃণমূলে মমতা-পরবর্তী প্রজন্মের মধ্য সবচেয়ে বড় নেতা। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত দল ছাড়েন, তাহলে সেটা দলের পক্ষে ক্ষতি। আমাদের চেষ্টা করতে হবে দলকে সঙ্ঘবদ্ধ রাখতে এবং শুভেন্দুকে অবশ্যই দলে রাখতে।’’ কিন্তু প্রবীরের ওই অভিমতের পিঠোপিঠিই আবার তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘শুভেন্দু ওঁর ইচ্ছামতো মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন। সে বিষয়ে কিছু বলার নেই। আরেকটা জিনিস—পশ্চিমবাংলায় যে যেখানে জিতেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেখিয়ে জিতেছে। ২৯৪টা সিটের মধ্যে ওঁর (শুভেন্দুর) কেন্দ্রওটাও পড়ে। মমতা’দি যখন বলেছিলেন, উনিই ২৯৪টা আসনে প্রার্থী, তখন কিন্তু উনি (শুভেন্দু) সাহস করে বলতে পারেননি যে, দিদি আমিই প্রার্থী। আমার জন্যই এই কেন্দ্র (নন্দীগ্রাম) শক্তিশালী হয়েছে!’’ তৃণমূলের অন্দরের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা অবশ্য প্রবীর-কল্যাণের এই পরস্পর-বিরোধী বক্তব্যের কারণ হিসাবে হুগলির জেলা রাজনীতিতে তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্কের সমীকরণের প্রভাব খুঁজে পাচ্ছেন।

এক জনসভায় শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।

শুভেন্দুর মন্ত্রিত্বে ইস্তফার পর রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘শুভেন্দুকে বিজেপি-তে স্বাগত। তৃণমূল থেকে আরও অনেকে আমাদের দলে আসবেন। আমরা এখন যোগদান মেলা শুরু করেছি।’’ যার প্রেক্ষিতে কল্যাণ বলেছেন, ‘‘দিলীপ ঘোষরা আগে যাদের সম্পর্কে বলতেন, অমুক সারদায় যুক্ত, তমুক নারদায় যুক্ত, রোজভ্যালিতে যুক্ত— তারাই এখন বিজেপি-র যোগদান মেলায় গিয়ে যোগ দিচ্ছে। যোগদান করান না! আমরা চাই, যত কালো রক্ত আছে, সব গিয়ে বিজেপি-তে যোগদান করুক!’’ শুভেন্দু শিবিরের বক্তব্য, এর মাধ্যমে কল্যাণ আবার শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছেন। এর প্রভাব সমঝোতা প্রক্রিয়ার উপর পড়তে পারে।

আরও পড়ুন: নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে ২৯৪ কেন্দ্রের প্রার্থীই নিজে বাছবেন শাহ

শুক্রবার দুপুরে শুভেন্দু মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পর রাতে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী তাঁর বাড়ির লাগোয়া দফতরে জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে শুভেন্দু প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কেউ যদি চলে যেতে চায়, তা হলে তাঁর কী করণীয় আছে! তিনি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে চেয়েছিলেন। বারবার বোঝাতে চেয়েছিলেন। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়কে আলোচনার দায়িত্বও দিয়েছিলেন। কিন্তু শুভেন্দু আলোচনা ‘অসম্পূর্ণ’ থাকাকালীনই মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন! মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি সেই ইস্তফা গ্রহণ করেছেন। বৈঠকে এমনও আলোচনা হয়েছে যে, বহুদিন ধরেই সুব্রত বক্সি-পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা শুভেন্দুকে বোঝানোর চেষ্টা করে আসছিলেন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। শুভেন্দু দলে ‘পর্যবেক্ষক’ পদ নিয়ে কোনও সমঝোতায় যেতে রাজি ছিলেন না।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং সুব্রত বক্সী।

তবে তৃণমূলের একাংশ এখনও শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনার দরজা খুলে রাখতে আগ্রহী। তার একটা বড় কারণ— শুভেন্দুর ছেড়ে-যাওয়া তিনটি দফতরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা আপাতত নিজের হাতে রেখেছেন। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘আলোচনার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে মুখ্যমন্ত্রী ওই দফতরগুলি ফিরহাদ হাকিম বা অরূপ বিশ্বাসকে দিয়ে দিতে পারতেন। তাতে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু দফতরগুলি নিজের হেফাজতে রেখে তিনি শুভেন্দুকেও বার্তা দিতে চেয়েছেন।’’ শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনাকারী সৌগতও আশাবাদী। তিনি মনে করছেন, শুভেন্দু এখনও দল না ছাড়ায় একটা মিটমাটের সুযোগ এখনও রয়ে গিয়েছে। তিনি আবার শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করবেন বলেও সৌগত ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন। তবে সেই আলোচনা আগামী দু-একদিনের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন তৃণমূলের এই বর্ষীয়ান সাংসদ। শনিবার সৌগত জানান, শুভেন্দুর মা অসুস্থ। তাই তিনি শনি এবং রবিবার কলকাতায় আসতে পারছেন না। ফলে আলোচনা হলেও তা আগামী সপ্তাহে। সৌগতর মতো প্রবীণ নেতারা মনে করছেন, মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও শুভেন্দু দল ছাড়তে চান না। তিনি চান সংগঠন নিয়ে তাঁর যে সমস্যা আছে, তার সুষ্ঠু সুরাহা। অর্থাৎ, ‘পর্যবেক্ষক’ পদ ফিরিয়ে আনা এবং তাঁর হাতে পাঁচটি জেলার দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া। এমনকি, তাঁদের দাবি শুভেন্দুর ‘বিজেপি-যোগ’ নিয়ে যে জল্পনা রাজ্য রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে, তা-ও ভিত্তিহীন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

শুভেন্দুর মন্ত্রিত্ব-ত্যাগ পর্যায়ে দলনেত্রী মমতা আরও ‘স্পিরিটেড’ বলেই মনে করছেন দলের নেতারা। তাঁদের কথায়, ‘‘নেত্রী দলে এবার আরও বেশি সময় দেবেন বলে নিজেই ঘোষণা করেছেন। ভোটের চ্যালেঞ্জ নিতে তিনি তৈরি।’’ শুক্রবার দলের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, দলে আরও বেশি সময় দিতে হবে। ঠিক হয়েছে, আগামী ৭ ডিসেম্বর থেকে জেলাসফর শুরু করবেন মমতা। বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠকের পর জনসভা থেকেই আগামী বিধানসভা ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে তাঁর ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি’ শুরু করে দিয়েছেন মমতা। এরপর তা ধাপে ধাপে আরও বাড়ানো হবে। রাজ্যের এক প্রবীণ মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আমাদের শক্তি হল মমতার মুখ। সেই মুখকেই আমাদের ব্যবহার করতে হবে।’’ আপাতত ঠিক হয়েছে, জোর দেওয়া হবে ‘বঙ্গধ্বনি’ কর্মসূচির উপর। যে কর্মসূচিতে রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে রাজ্য সরকারের উন্নয়নের কাজের খতিয়ান সংবলিত লিফলেট পৌঁছে দেওয়া হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari Mamata Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy