নবদ্বীপ পৌরসভা। —ফাইল চিত্র।
কল্যাণীর পরে কার্যত একই ঘটনা ঘটল নবদ্বীপেও। কল্যাণী পুরসভার পরে নবদ্বীপ পুর কর্তৃপক্ষের তরফেও ‘চাকদহ নাট্যজন’ বলে একটি দলের নাটকের ‘শো’ বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাচক্রে, দু’টি ক্ষেত্রেই দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় উৎপল দত্তের ‘ব্যারিকেড’ নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। আজ, বৃহস্পতিবার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে নাট্যকর্মীরা প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন।
নিয়োগ দুর্নীতি তথা নানা বেনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংগ্রামী মঞ্চে গত ২ নভেম্বর একটি নাটক পরিবেশন করে চাকদহের দলটি। অভিযোগ, তার পর থেকেই চাকদহের দলটিকে বার বার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যা ঘটনাপ্রবাহ, তাতে অনেকেই বাম আমলের শেষ দিকের ছায়া দেখছেন। তখনও ব্রাত্য বসুর লেখা দেবেশেরই পরিচালিত ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ এবং অর্পিতা ঘোষের ‘পশুখামার’-এর শো বন্ধ করা ঘিরে বিতর্ক হয়েছিল। নবদ্বীপ পুরসভার তরফে অবশ্য নাটকের শো বাতিল করার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
আগামী ২৩ জানুয়ারি নবদ্বীপে ব্যারিকেড-এর অভিনয় নির্দিষ্ট ছিল। নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘‘পুরসভার কাছে আয়োজক সংস্থা লিখিত ভাবে আবেদনই করেনি। অনুমতি বাতিল করার প্রশ্ন ওঠে না। ওই দিন অন্য অনুষ্ঠান আছে।’’ তবে যাদের আমন্ত্রণে চাকদহের দলটি দেবেশের পরিচালনায় উৎপল দত্তের নাটক মঞ্চস্থ করছিল, সেই সংগঠন ‘নবদ্বীপ সায়ক’-এর সম্পাদক মোহন রায় বলেন, ‘‘নবদ্বীপ পুরসভার মঞ্চ সাধারণত মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতেই বুক করা হয়। পরে অনুষ্ঠানের আগে টাকাপয়সা মেটানো হয়। পুরসভার মৌখিক অনুমতি পেয়েই আমরা চাকদহের নাট্যদলটিকে ডাকি।’’
এ যাত্রা যে নাটকটির শো বাতিল হল, তার পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যা শুনেছি, উৎপল দত্তের ব্যারিকেড নাটকটি নিয়ে হল কর্তৃপক্ষের সমস্যা রয়েছে। ওঁদের ধারণা, ওটা বামেদের সমর্থনে নাটক। খুব অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গি। মোড়লগিরি করে কেউ কেউ নাটক বন্ধ করে দিচ্ছেন, অথচ রাজ্য সরকারের কেউ কিছু বলছেন না, এটা হতাশার। বাম আমলেও এটাই ঘটত।’’
চাকদহ নাট্যজনের কর্ণধার সুমন পালও বলছেন, ‘‘উৎপল দত্তের ব্যারিকেড, দেবেশদার নাটক, না প্রতিবাদী শিক্ষকদের মঞ্চে নাটক করা, সমস্যাটা কী বুঝতে পারছি না। কোনও অশুভ শক্তি লাগাতার নাটকের জগতের উপরে নজরদারি চালিয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছে।’’ অভিযোগ, এর আগে কল্যাণী পুরসভা চাকদহের দলটির আয়োজনে ২৩-২৬ নভেম্বর দেবেশের পরিচালনায় ছ’টি নাটকের উৎসবের টাকা নেওয়ার পরেও অন্য অনুষ্ঠানের কথা বলে বাতিলই করে দেয়।
এ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘চরিত্রের দিক দিয়ে দিদি আর মোদীর মধ্যে ফারাক নেই। মোদীর বিরুদ্ধে কোনও ছবি দেখানোর যদি ব্যবস্থা হয়, তা হলে ভারতবর্ষে কী হয় সবাই জানেন। এঁরা স্বৈরাচারী। নাটকের অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার, তা সংবিধান দিয়েছে। তা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এর উত্তর একমাত্র ব্রাত্য বসু দিতে পারেন। বাম জমানার শেষ দিকে কিন্তু ব্রাত্য বসুর ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ ও অর্পিতা ঘোষের ‘পশুখামার’ প্রদর্শিত হয়েছিল। এই সরকার অগণতান্ত্রিক।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। উৎপল দত্তের ব্যারিকেড নাটক করতে দেবে না! এটা তো স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রকাশ।’’
নাট্যকর্মী, প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক কারণে নাটক বাতিল সমর্থন করি না। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। বাম আমলে পুলিশ এসে শো ভেস্তে দেওয়ার সঙ্গে এ ঘটনাগুলি তুলনীয় নয়।’’ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, নাট্যকর্মী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, বিষয়টি না জেনে কোনও মন্তব্য করব না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy