ফাইল চিত্র।
পারস্পরিক দূরত্ব-সহ করোনা বিধি মেনে চলার তাগিদে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে শিক্ষক না-বাড়ায় সব কেন্দ্রের পরীক্ষায় নজরদারি করার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী স্কুল থেকেও শিক্ষক আনানোর ব্যবস্থা করেও দেখা যাচ্ছে, যথেষ্ট সংখ্যায় পরিদর্শক অমিল। শহর ও গ্রাম, সর্বত্রই কমবেশি এই সমস্যা আছে। তবে সমস্যা বেশি গ্রামাঞ্চলের স্কুলে। সোমবার মাধ্যমিক শুরু। শুক্রবার পর্যন্ত এই সমস্যার সুরাহা না-হওয়ায় বহু স্কুল দিশাহারা।
পুরুলিয়ার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমী রায়চৌধুরী জানান, তাঁদের ৩৯৪ জন পড়ুয়া মাধ্যমিক দেবে। তার জন্য ১২টি ক্লাসঘর লাগবে। ১২টি শ্রেণিকক্ষের প্রতিটিতে নজরদারির জন্য দু’জন শিক্ষক দিতে হলে মোট শিক্ষক লাগবে ২৪ জন। অথচ তাঁর স্কুলে ১৪ জন শিক্ষক আছেন। মৌসুমীদেবী জানান, কিছু পদ এমনিতেই ছিল। তার উপরে উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে বদলি চালু হওয়ার পরে দু’জন শিক্ষক চলে গিয়েছেন। পরীক্ষায় নজরদারির জন্য অন্য স্কুল থেকে আরও পাঁচ জন শিক্ষক আনার বন্দোবস্ত হয়েছে। কিন্তু তাতেও কুলোচ্ছে না। আরও ছ’জন শিক্ষকের প্রয়োজন। ‘‘আরও কিছু স্কুল থেকে শিক্ষক আনা সব সময় সম্ভব হচ্ছে না। কারণ করোনার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়ানোয় অনেক নতুন স্কুলে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হয়েছে। সেই সব কেন্দ্রেও শিক্ষকের অভাব। এই অবস্থায় কোথা থেকে বাড়তি শিক্ষক পাব, বুঝতে পারছি না। মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের নজরদারিতে যুক্ত করা যাবে না। এই সমস্যার কথা জানিয়ে আমি জেলা স্কুল পরিদর্শককে চিঠি লিখেছি,’’ বলেন ওই প্রধান শিক্ষিকা। তিনি জানান, শুধু তাঁদের স্কুল নয়, পুরুলিয়ার গ্রামাঞ্চলে অনেক স্কুলই এই নজরদার শিক্ষক-সমস্যায় ভুগছে।
মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ব্লকের একটি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামশের আলি শেখ জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানে ৩৫ জন শিক্ষকপদের মধ্যে ১৩টি শূন্য। উৎসশ্রীর মাধ্যমে চার জন শিক্ষক অন্য স্কুলে চলে গিয়েছেন। এমন একটি স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় স্বভাবতই পরীক্ষার সময় নজরদার শিক্ষকের অভাব হবে। নজরদারির জন্য অন্য স্কুল থেকে শিক্ষক আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান ওই প্রধান শিক্ষক।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা এলাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রনীল প্রধান বলেন, ‘‘সুন্দরবন এলাকার বহু স্কুলেই শিক্ষকের অভাব। আগে যে-সব স্কুল মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হত না, এ বার অতিমারির জন্য বাড়তি পরীক্ষাকক্ষের দরকার পড়ায় এমন অনেক স্কুলে মাধ্যমিক নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছে, যেখানে শিক্ষক-সংখ্যা কম। সেই সব স্কুল-কর্তৃপক্ষ কোথা থেকে শিক্ষক পাবেন, তার সমাধান এখনও হয়নি।’’
পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র জানান, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বহু স্কুল থেকে অনেক শিক্ষক উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে শহরের স্কুলে চলে যাওয়ায় বর্তমানে শিক্ষক-সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে। বহু স্কুল পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী স্কুলগুলির উপরে নির্ভরশীল ছিল।
কিন্তু কোডিভের কারণে
পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তারাও শিক্ষক দিতে পারছেনা। আর এক শিক্ষক-নেতা তথা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘শুধু গ্রামাঞ্চল নয়, শহর কলকাতাতেও এমন কিছু স্কুলে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হয়েছে, যেখানে শিক্ষকের অভাব আছে। সেই সব স্কুল এ বার নির্বিঘ্নে মাধ্যমিক পরীক্ষা নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy