শনিবার সকালে সুনসান জলপাইগুড়ির কদমতলা চত্বর। নিজস্ব চিত্র
একেবারে খাঁ খাঁ না করলেও রাস্তাঘাট মোটের উপরে ফাঁকা। হাতেগোনা কিছু ওষুধ ও মুদির দোকান খোলা।
করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত রুখতে নবান্নের জারি করার বিধিনিষেধের সৌজন্যে শনিবার বেলার দিকে গোটা রাজ্যের ছবিটা ছিল এমনই। সবে শুক্রবার বিকেলে নির্দেশ হয়েছে, সকাল ৭টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৩টে থেকে ৫টা পর্য়ন্ত দোকান-বাজার খোলা থাকবে। ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, এই নির্দেশিকা নিয়ে সে ভাবে প্রচার না থাকায় তাঁরা বিভ্রান্ত। ফলে, বহু জায়গাতেই বিশেষ করে সকালের দিকে ১০টার অনেকক্ষণ পরেও বাজার খোলা থাকতে দেখা গিয়েছ। এবং তা বন্ধ করাতে যথেষ্টই বেগ পেতে হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনকে। দশটার পরিবর্তে ১২টা পর্যন্ত সময় বাড়ানোর দাবি করেছেন অনেক দোকানদার। এ দিনই অবশ্য এক নয়া নির্দেশিকায় দুধ, মাছ-মাংস, মিষ্টির দোকান খোলা রাখা যাবে বলে জানানো হয়েছে।
পুরুলিয়া শহরের কাপড়গলিতে শনিবার মেয়ের বিয়ের পোশাক কিনতে এসেছিলেন কোটশিলার নারায়ণ কুমার। সবে কয়েকটি শাড়ি বেছেছেন, দোকানদার তাঁকে বলে ওঠেন, ‘‘বিক্রি বন্ধ। এর পরে দুপুর ৩টের সময় খুলব।’’ শুকনো মুখে ক্রেতা বাইরে বেরিয়ে দেখেন, সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে। তখনকার মতো ফিরতেই হল।
বস্তুত, এ দিন সকাল থেকেই পুলিশকে এই ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারেরা বাজার বন্ধ করতে কোথাও মাইকিং করছেন, কোথাও খোলা দোকান দেখলে নরমে-গরমে তা বন্ধ করিয়েছেন। হাবড়া ও অশোকনগরে মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরি এবং সরকারি নির্দেশ না মেনে দোকান খোলার অভিযোগে পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। নির্দেশ অমান্য করে বেশ কিছু দোকান খুলে রাখায় ভাঙড়ের কাশীপুর থানার পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে।
এর মধ্যেও ভিড় চোখে পড়েছে কলকাতার মানিকতলা, গড়িয়াহাট-সহ বিভিন্ন বাজারে। কোলে মার্কেটের উপচে পড়া ভিড়ে দূরত্ব-বিধির দফারফা হয়েছে। দমদম-সহ শহরতলির বাজারগুলিতেও প্রচুর মানুষ কেনাকাটা করেছেন। কোথাও আবার মাস্ক ছাড়া ক্রেতা দেখলে দোকানদারেরাই চিৎকার করে উঠেছেন। দমদমের এক দোকানির কথায়, ‘‘মাস্ক ছাড়া দেখলে পুলিশে ওঁকে তো ধরবেই, আমাদেরও হয়রানি বাড়বে।’’ তবে, এ দিন কিছু কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ের পরেও দোকান খোলা ছিল। ভিআইপি রোডের কৈখালির বাজারে বাজার বন্ধ করতে আসে পুলিশ। পুলিশকে দেখে অনেক দোকানদারের মধ্যে দোকান বন্ধ করার হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কোনও কোনও দোকানদার আবার আনাজের সঙ্গে মুদিখানার মালপত্র রেখেছেন। তাঁদের কিছুটা ছাড় দিয়েছে প্রশাসন।
এ দিন থেকে ফের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে শহরের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। চাহিদা ও ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে পারে এই আন্দাজ করে অতিরিক্ত জিনিসপত্র গুদামজাত করেছে বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান।
ভিড় ছিল উত্তরবঙ্গেও। মালদহ ও দুই দিনাজপুরে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বেশ কিছু জায়গায় দোকান-বাজার কিছুক্ষণ খোলা ছিল। মাইক হাতে আসরে নামতে হয় পুলিশকে। শিলিগুড়ির আনাজের বাজারগুলিতে ভিড়ও ছিল। বিধানমার্কেট, হায়দরপাড়ার মতো বাজার বেলা ১১টার পরেও কিছুক্ষণ খোলা ছিল। পুলিশ গিয়ে বন্ধ করে। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, প্রথম দিন সতর্ক করা হচ্ছে। এর পর থেকে সময় মেনে না বন্ধ রাখলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরেও বেলা ১০টার পরে, চায়ের দোকানে আড্ডা চলেছে। বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা বাজার, গুসকরা বাজারে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও আনাজ বাজার খোলা ছিল। চলে কেনাবেচাও। পরে অবশ্য পুলিশ গিয়ে দোকান বন্ধ করে দেয়। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, দাঁড়িয়ে থাকা খদ্দেরদের তাঁরা কী বলে ফেরাবেন!
নদিয়ার নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট বা চাকদহের মতো জেলার প্রধান শহরগুলিতে কোভিড পরিস্থিতি রুখতে জারি করা নিয়ন্ত্রণের সাড়া দিয়েছেন ক্রেতাবিক্রেতারা। পড়শি মুর্শিদাবাদের অধিকাংশ জায়গাতেই ১০টার পরেও দোকান-বাজার খোলা ছিল। মাঠে নামতে হয় পুলিশকে। সদরশহর বহরমপুরের একাধিক বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, কাঁথি, হলদিয়ায় মতো শহরগুলিতে কঠোর ভাবে নির্দেশিকা পালন করা হয়েছে। হলদিয়ার একমাত্র শপিং মলটি বন্ধ ছিল। মেদিনীপুর শহরে নির্দেশিকা পালন করা হলেও খড়্গপুরে সকাল ১০টার পরেও দোকান খোলা ছিল। প্রশাসন জানিয়েছে, এ দিন প্রশাসনিক ভাবে প্রচার করার জন্য ওই ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় বেশিরভাগ জায়গায় সকাল ১০টার পরে দোকান বাজার বন্ধ হয়ে যায়। শহরে শপিং মল, বিউটি পার্লার, সিনেমা বন্ধ ছিল। হুগলির তবে, হুগলির ডানকুনি, তারকেশ্বর, চণ্ডীতলার বিভিন্ন জায়গায় সকালে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও দোকান-বাজার খোলা ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy