সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। —ফাইল চিত্র।
আপাত ভাবে তিনি নিখোঁজ। গত তিন সপ্তাহ ধরে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি থেকে শুরু করে রাজ্য পুলিশ, সকলেই তাঁকে খুঁজছে। এর মাঝেই ফেসবুকে হঠাৎ ‘দেখা’ দিলেন সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। তাঁর নামে থাকা ফেসবুক পেজ থেকে তিন সপ্তাহ পরে আচমকা একটি পোস্ট করা হল। যা ইতিমধ্যে তদন্তকারীদের আতশকাচের নীচে চলে এসেছে। ওই পেজ কারা পরিচালনা করেন, আইপি অ্যাড্রেস ধরে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফেসবুকের সূত্র ধরে নিখোঁজ নেতার কাছে পৌঁছনো যায় কি না, দেখছেন তদন্তকারীরা।
শুক্রবার, প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে নিজের ফেসবুক পেজে একটি ছবি পোস্ট করেছেন শাহজাহান। প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষেই ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে। দেশের জাতীয় পতাকার ছবি ছাড়া আর কিছুই নেই তাতে। কোনও কথাও লেখা হয়নি ছবিটির সঙ্গে। যে পেজ থেকে এই পোস্ট করা হয়েছে, তাতে শাহজাহানের নামের পাশে নীল চিহ্ন না থাকলেও শুরুতেই স্পষ্ট লেখা আছে, এটি তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা কর্মাধ্যক্ষ শাহজাহান শেখের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ। পেজটির বাকি পোস্টও শাহজাহানকেন্দ্রিক। বিভিন্ন জনসভায় শাহজাহানের বক্তব্যের ভিডিয়ো ওই পেজ থেকে এর আগে পোস্ট করা হয়েছে। পেজটিতে তাঁর ২৩ হাজার অনুগামী (ফলোয়ার) রয়েছেন।
দেখা যাচ্ছে, শাহজাহানের ওই পেজ থেকে শেষ পোস্টটি করা হয়েছিল গত ২ জানুয়ারি, তিনি নিখোঁজ হওয়ার ঠিক তিন দিন আগে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে হুঁশিয়ারি দেওয়া তাঁর একটি ভিডিয়ো সে দিন এই পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছিল। তার পর দীর্ঘ দিন পেজটি কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। যদিও ২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় প্রতি দিন ওই পেজে কিছু না কিছু পোস্ট করা হয়েছে।
রাজনৈতিক নেতা বা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ফেসবুক পেজ পরিচালনা করার জন্য অনেক সময়েই আলাদা করে কর্মী নিযুক্ত থাকেন। অর্থাৎ, তাঁরা নিজেরা নিজেদের ফেসবুক পেজ নিয়ন্ত্রণ করেন না। শাহজাহানের ক্ষেত্রেও যদি তা-ই হয়ে থাকে, অর্থাৎ, অন্য কেউ যদি এই ফেসবুক পেজ নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে থাকেন, তা হলেও জল্পনা থামছে না। প্রশ্ন উঠছে, শাহজাহানের সম্মতি ছাড়াই কি তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হল? আর যদি শাহজাহান নিজে সম্মতি দিয়ে থাকেন, তবে কোন অন্তরালে বসে তিনি ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করছেন?
শুক্রবার শাহজাহানের ওই ফেসবুক পোস্টের নীচে বেশ কয়েক জন কমেন্ট করেছেন। উল্লেখ্য, কেউই কিন্তু কমেন্টে নেতার অবস্থান জানতে চাননি। বরং, তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে এ প্রসঙ্গে শাহজাহানের ভাই আলমগিরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোন সুইচড অফ ছিল। ফেসবুক পেজটির অ্যাডমিনের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখান থেকেও আসেনি উল্লেখযোগ্য কোনও উত্তর। উল্লেখ্য, এই ফেসবুক পেজ থেকে মাত্র চার জনকে ‘ফলো’ করেছেন শাহজাহান। তাঁরা হলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো এবং শেখ মাসুদ আজহার নামের এক ব্যক্তি।
সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমারের সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘এটা তো ওঁর অফিসিয়াল পেজ। হয়তো অন্য কেউ এই পেজ পরিচালনা করেন।’’
গত ৫ জানুয়ারি রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। কিন্তু শাহজাহানের দেখা পাওয়া যায়নি। উল্টে তাঁর ডেরায় ঢুকতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তিন ইডি আধিকারিককে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। ইডির অভিযোগ, সে দিন বাড়িতেই ছিলেন শাহজাহান। ভিতর থেকে ফোন করে বাইরে লোক জড়ো করেন। তার পর পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে গা ঢাকা দিয়েছেন বলেও ইডি সন্দেহ প্রকাশ করেছে। পরে আবার ইডির দল সন্দেশখালিতে গিয়েছিল। তালা ভেঙে শাহজাহানের বাড়িতে তারা তল্লাশি চালায়। তবে সে দিন আর উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যায়নি ওই বাড়িতে। বাড়িটি সিল করে দিয়েছে ইডি। শাহজাহানকে আগামী ২৯ জানুয়ারি কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে বলে নোটিসও সেঁটে দিয়ে গিয়েছেন আধিকারিকেরা।
২৯ জানুয়ারি শাহজাহান কি হাজিরা দিতে যাবেন? বিধায়ক সুকুমার জানান, আইনজীবীকে পাঠিয়ে দিতে পারেন শাহজাহান।
উল্লেখ্য, নিখোঁজ হওয়ার পর পরই শাহজাহানের একটি অডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ‘‘আমি শেখ শাহজাহান বলছি। এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি যদি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকি, প্রমাণ যদি পাওয়া যায়, নিজের মুন্ডু নিজে কেটে দেব।’’ সম্প্রতি, রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি জানিয়েছেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে হয়তো রাজ্যের বাইরে গিয়েছেন শাহজাহান। অনেকে আবার মনে করছেন, তিনি সন্দেশখালির আশপাশেই কোথাও আছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy