—গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
শঙ্করাচার্যেরা কি শঙ্কর আঢ্যকে চেনেন? শঙ্কর আঢ্য অবশ্য তাঁদের চিনলেও চিনতে পারেন। চেনা বা অচেনা হোন, তাঁরা জুড়ে গিয়েছেন বাংলার রাজনীতিতে। শেক্সপীয়র লিখেছিলেন, ‘নামে কী যায় আসে!’ কিন্ত তৃণমূল এবং বিজেপির ‘বিড়ম্বনা’য় যে নাম মিলান্তি পাওয়া যাচ্ছে, তা কাকতালীয় হলেও অনস্বীকার্য নয়।
শাহজাহান শেখ আছেন। কিন্তু তৃণমূলকে আক্রমণ করতে গিয়ে বিজেপি নেতারা টানছেন ইডির হাতে ধৃত বনগাঁর প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যের সম্পত্তি এবং প্রতিপত্তির বিষয়গুলিও। আবার বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে তৃণমূল-সহ অনেকেই টানছেন শঙ্করাচার্যদের প্রসঙ্গ। একটা সময়ে আঢ্য শঙ্কর ছিলেন বনগাঁ শহরে তৃণমূলের শেষকথা। অন্য দিকে, বিজেপি-সহ সমগ্র গেরুয়া শিবির চিরকাল শঙ্করাচার্যদের মহিমান্বিত করে এসেছে। কিন্তু ঘটনাপরম্পরায় দু’দলের কাছে রাজনৈতিক বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন শঙ্কর এবং শঙ্করাচার্যেরা।
যে দিন তৃণমূল নেতা শাহজাহানের সন্দেশখালির বাড়িতে অভিযান চালাতে গিয়ে মারধর খেয়ে ফিরতে হয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) অফিসারদের, সে দিন রাতেই শঙ্করকে গ্রেফতার করেছিল ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার পর গত ১২ দিনে তাঁর সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য উঠে এসেছে। শঙ্কর কী ভাবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে রেশন দুর্নীতি চালাতেন, তা নিয়ে তদন্তকারীরা আদালতে নানাবিধ দাবি করেছেন। ইডির দাবি, শঙ্করের বিদেশি মুদ্রা ভাঙানোর যে সব সংস্থা রয়েছে, তার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করতেন জ্যোতিপ্রিয়। তাঁর বাংলাদেশ-যোগ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূলের অনেক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় এ কথা বলছেন যে, শঙ্কর যে তলায় তলায় এত কিছু করেছেন, তা অনেক পরে জানা গিয়েছিল। সে কারণেই গত পুরভোটে তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। কিন্তু তৃণমূলের ‘ছাপ’ তাঁর গা থেকে যায়নি। অনেকে বলেন, ওই ছাপ দেখিয়েই গত কয়েক বছরে শঙ্করের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল। বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধানের নানা কাণ্ড যে তৃণমূলকে রাজনৈতিক বিড়ম্বনায় ফেলছে, তা দলের অন্দরেও মেনে নিচ্ছেন অনেকেই।
ঠিক যেমন বিজেপির ‘বিড়ম্বনা’র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন পুরী এবং উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষপীঠের দুই শঙ্করাচার্য। যাঁরা প্রকাশ্যেই বলছেন, শাস্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। পুরীর শঙ্কারাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর কাজকে ‘উন্মাদের লক্ষণ’ বলে আক্রমণ শানিয়েছেন। আবার জ্যোতিষপীঠের শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ বলেছেন, ‘‘ধর্মের নামে অধর্মের অংশীদার আমি হব না। তাই ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় যাওয়ার প্রশ্ন নেই।’’
সাধারণ হিন্দুদের মধ্যে শঙ্করাচার্যদের সেই অর্থে প্রভাব না-থাকলেও হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠনে তাঁদের প্রভাব সর্বজনবিদিত। বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা একাধিক সংগঠন বছরের পর বছর ধরে শঙ্করাচার্যদের ‘ঋষিতুল্য’ বলে মেনে এবং মানিয়ে এসেছে। গত ২৪ ডিসেম্বর ব্রিগেডের ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ কর্মসূচিতেও চার শঙ্করাচার্যকে আনার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসেছিলেন এক জন। তাঁকেও যে ভাবে পুজো করা হয়েছিল, তা ছিল দেখার মতো।
এখন সেই শঙ্করাচার্যেরাই বিজেপির কাছে ‘ব্যুমেরাং’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। পুরী এবং উত্তরাখণ্ডের শঙ্করাচার্য যে সব মন্তব্য করেছেন রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে, তা গেরুয়া শিবিরের গায়ে অহরহ বিঁধছে। বিজেপি মুখপাত্রদের দিকে শঙ্করাচার্যদের নিয়ে প্রশ্ন ধেয়ে এলে তাঁরাও খেই হারিয়ে ফেলছেন। বলিয়ে-কইয়ে মুখপাত্রেরাও হোঁচট খাচ্ছেন। মঙ্গলবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নাম না করে শঙ্করাচার্যদের বক্তব্যকে ‘হাতিয়ার’ করেই বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছিলেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা রাজনীতিকদের কাজ নয়। ওটা সাধুসন্তদের কাজ। সাধুসন্তরা কী বলছেন, আমরা শুনছি।’’ শঙ্করাচার্যদের কটাক্ষ সার্বিক ভাবে বিজেপির জন্য ‘অস্বস্তি’র বলে দলের নেতাদের একাংশও একান্ত আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন।
প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। কিন্তু ‘বিড়ম্বনা’র নাম মিলান্তি স্পষ্ট। তৃণমূলের জন্য শঙ্কর, বিজেপির জন্য দুই শঙ্করাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy