সিবিআই হেফাজতে শাহজাহান। — ফাইল চিত্র।
ধ্বস্ত দেখাচ্ছে তাঁকে।
ধরা পড়ার দিন আদালতে যে দৃপ্ত ভঙ্গিমায় হাঁটতে দেখা গিয়েছিল সন্দেশখালির শেখ শাহজাহানকে, তাদের হেফাজতে আসার পরে সেই ‘দাপট’-এর বিন্দুমাত্র লেশ নেই বলে দাবি করেছে সিবিআই।
বুধবার রাতে নিজাম প্যালেসে আসার পর থেকেই নাকি বদলে গিয়েছে ‘বাদশা’-র ‘বডি ল্যাঙ্গোয়েজ’। তদন্তকারীদের কথায়, বুধবার রাতেই ঘণ্টাখানেক জেরার পরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টানা চলেছে প্রশ্নোত্তর পর্ব।
সিবিআই-তদন্তকারীদের দাবি, ৫৬ দিন অধরা থাকার সময়ে আইনজীবী মারফত তাঁর মগজ ধোলাই হয়েছে। প্রথম দিকে আইনজীবীদের শিখিয়ে দেওয়া ‘বুলি’ আওড়ালেও ফোনের ‘ইনকামিং’ এবং ‘আউটগোয়িং’ তথ্য সামনে রেখে জেরা শুরু করতেই কুপোকাত হয়ে পড়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় ইডির তদন্তকারীদের হামলার ঘটনায় শাহজাহানের দু’টি মোবাইলের ‘কল ডিটেলস’-ই এখন তদন্তের মূল হাতিয়ার বলে দাবি সিবিআইয়ের। ওই ফোন দু’টির তথ্য থেকে সে দিনের ঘটনায় জড়িতদের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। যদিও জেরায় শাহজাহানের দাবি, তিনি কাউকে ফোন করেননি। তাঁর বাড়িতে ইডি হাজির হলে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা-অনুগামীরা তাঁকে ফোন করেছিলেন।
শাহজাহানকে প্রাথমিক জেরার পরে বৃহস্পতিবারই সিবিআইয়ের দু’টি দল সন্দেশখালি ও বনগাঁয় হানা দেয়। তিন অফিসার শাহজাহানের বাড়ির চারদিক ঘুরে দেখেন। ছবিও তোলেন। বসিরহাট থানায় গিয়ে নথিও সংগ্রহ করেন। বনগাঁয় শঙ্কর আঢ্যের শিমুলতলার বাড়ির চারদিক ঘুরে দেখেন তদন্তকারীরা। যেখানে হামলা হয়েছিল, সেই রাস্তাটিও দেখে নেন। একই সঙ্গে জায়গাগুলির ছবিও তোলেন তাঁরা। সিবিআই আসার আগে আগে বনগাঁ থানার আইসি শিবু ঘোষকে গাড়ি নিয়ে শঙ্করের শিমুলতলার বাড়ির আশপাশে টহল দিতে দেখা যায়। সিবিআই অফিসারেরা যখন তদন্ত করছিলেন, তখন আইসিও ঘটনাস্থলে ছিলেন।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সে অর্থে খুবই চুনোপুঁটি। যদিও ফোনালাপের তথ্য অনুযায়ী শীর্ষস্তরের নেতাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের সূত্র পাওয়া গিয়েছে।”
সিবিআই সূত্রের দাবি, ওই দিনের ঘটনায় আক্রান্ত ইডির অফিসার অঙ্কুর গুপ্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। সে দিন তিন ইডি অফিসার আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে অন্যতম অঙ্কুর। তাঁর লিখিত বয়ান নেওয়া হয়েছে। হামলার ঘটনার পরে ইডি-র যে ডেপুটি ডিরেক্টর থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন, সেই গৌরব ভারলিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এ দিন। তদন্তকারীদের কথায়, ইডির তরফে ওই ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। ওই সব তথ্য ইডির কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সে দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, দাবি তদন্তকারীদের।
সিবিআই সূত্রের দাবি, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ তদন্তকারীরা শাহজাহানের সঙ্গে একটি ফোনে কথা বলেন। তারপর ওই ফোন সুইচড অফ হয়ে যায়। দ্বিতীয় ফোনটি প্রায় আধ ঘণ্টার বেশি ব্যস্ত ছিল। সেই আধ ঘণ্টার মধ্যেই হাজার দেড়েক মহিলা ও পুরুষ চড়াও হয়ে হামলা চালায়।
শাহজাহানের বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যকে গ্রেফতার করে আনার সময়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডির তদন্তকারীরা। সেই ঘটনাতেও আলাদা এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। উল্লেখ্য, ইডির অভিযোগের ভিত্তিতেই শাহজাহানকে হেফাজতে নেয় রাজ্য পুলিশ। ন্যাজাট থানাও আর একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে। তাতেও শাহজাহানকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। বুধবার রাতে বসিরহাট পুলিশ সুপারের থেকে সিবিআই ওই মামলার নথি সংগ্রহ করে। বনগাঁ থানা নথি নিজাম প্যালেসে পৌঁছে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy