E-Paper

ঘেমে-নেয়ে ‘আমৃত্যু’ ঘেরাও, তীব্র গরমে অসুস্থ আন্দোলনকারী

আশপাশ থেকে শুরু হল ফাঁকা বোতল বাজানো। রব উঠল, ‘‘এই রাজ্যে শিক্ষা নাই, শিক্ষকের তাই চাকরি নাই!’’

সোমবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবস্থান-আন্দোলন চলল মঙ্গলবার দিনভরও।

সোমবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবস্থান-আন্দোলন চলল মঙ্গলবার দিনভরও। —ফাইল চিত্র।

কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৬
Share
Save

কপালের দু’পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে ঘাম। পরনের শার্ট ঘামে সপসপে ভিজে। গলায় ঝোলানো গামছা দিয়ে ঘাম মোছা চলছিল। সেই অবস্থায় তীব্র গরমে এক চাকরিহারা শিক্ষক রাস্তায় শুয়ে ছিলেন গামছা মাথায় দিয়ে। হঠাৎ রব উঠল, ‘‘গেট ধরো, গেট ধরো। ওঁরা পালাতে পারেন।’’ মুহূর্তে লাফিয়ে উঠে গামছা ফেলে ছুটলেন চাকরিহারা ওই শিক্ষক। গেটের সামনে পৌঁছে সবটা ঠিক আছে দেখে ফিরে এসে বললেন, ‘‘এক সময়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খেটে শিক্ষকের চাকরি পেয়েছি। এখন এত গরমে সেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলেই চাকরি রক্ষা করতে হচ্ছে।’’ আশপাশ থেকে শুরু হল ফাঁকা বোতল বাজানো। রব উঠল, ‘‘এই রাজ্যে শিক্ষা নাই, শিক্ষকের তাই চাকরি নাই!’’

২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়েছে। সল্টলেকের এসএসসি ভবনের সামনে সোমবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবস্থান-আন্দোলন চলল মঙ্গলবার দিনভরও। সোমবার রাত থেকে সময় যত গড়িয়েছে, ভিড় ততই বেড়েছে। শুধু চাকরিহারারাই নন, এই অবস্থানে যোগ দিয়েছেন বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা। সমর্থন জানাতে দেখা গিয়েছে বহু সাধারণ মানুষকেও। এই সম্মিলিত ঘেরাওয়ের মুখে দিনভর আটকে থাকতে হয়েছে এসএসসি ভবনের প্রায় ২৪ জন কর্মীকে। তবে সোমবারের মতো এ দিন তাঁদের কাছে খাবার পৌঁছতে বাধা দেওয়া হয়নি। চাকরিহারা আন্দোলনকারীদের কারও কারও তির্যক মন্তব্য, ‘‘এই তীব্র গরমে আমরা অভুক্ত থাকলেও ওঁরা যেন তা না থাকেন। ওঁরা সুস্থ থাকলে তালিকা কখনও না কখনও প্রকাশ হবেই।’’

খাবার, জল বা শৌচাগারের অভাবের সঙ্গেই আন্দোলনকারীদের লড়তে হচ্ছে তীব্র আর গুমোট গরমের সঙ্গে। সোমবার রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, এসএসসি ভবনের সামনে থিকথিকে ভিড়। একদল ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়লে, অন্য দল এসএসসি ভবন ঘিরে স্লোগান দিচ্ছেন। এর মধ্যেই সেখানে উত্তেজনা ছড়ায়।

রাত ১২টার আশপাশে এক পুলিশকর্মীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়। সেই সময়ে এসএসসি ভবনে পুলিশের ডিউটি বদল হচ্ছিল। এক পুলিশকর্মী সাধারণ পোশাকে ছিলেন। তিনি বেরোতে গেলে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ধারণা হয়, এসএসসি ভবনের কেউ হয়তো বেরিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রবল ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে পরিস্থিতি বুঝে পথ ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। রাতেই আন্দোলনস্থলে যান মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার, জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স, অভয়া মঞ্চ এবং জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের সদস্যেরা। সেখানে পৌঁছয় একটি বায়ো-টয়লেট। যদিও তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।

তীব্র রোদ থেকে বাঁচতে এ দিন মেট্রো রেলের স্তম্ভের নীচের ছায়ায় আশ্রয় নেন আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ। কেউ মাটিতে খবরের কাগজ পেতে শুয়ে পড়েন, কেউ গামছা পেতে বসেন। সেখানেই হাজির এক চাকরিহারা শিক্ষিকার মাকে দেখা গেল, মেয়েকে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করছেন। ঝাপসা হয়ে আসা কাচের আড়াল থেকে বৃদ্ধা বললেন, ‘‘মেয়ে যখন পরীক্ষা দিতে যেত, ওকে এ ভাবেই হাওয়া করতাম। আজও তো মেয়ে জীবনের সব চেয়ে বড় পরীক্ষা দিতে রাস্তায় বসেছে। তাই আমিও চলে এসেছি।’’ আর এক চাকরিহারা শিক্ষিকা বললেন, ‘‘বাবা এসেছেন। আমার আয়েই সংসার চলত। এখন লড়াইটা আমার পরিবারেরও।’’

দেখা গেল, সোমবার রাতের মতোই পালা করে এসএসসি ভবনের গেট পাহারা চলছে। তাঁদের দাবি, গরমে মাথা ঘুরলেও মুখে-চোখে জল দিয়ে আন্দোলনে বসছেন। এক আন্দোলনকারী জানান, অবরোধের কারণে অনলাইনে বরাত দেওয়া খাবার নিয়ে মোটরবাইক পৌঁছয়নি। সেখানেই দেখা যায়, জুনিয়র চিকিৎসকদের নিয়ে আসা খিচুড়ি নিতে লাইন। এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘ক্লাসঘরে পড়ুয়াদের মাঝে থাকার কথা। তার বদলে লাইন দিয়ে খিচুড়ি নিতে হচ্ছে।’’ এ দিনই আন্দোলনস্থলে খোলা অভয়া ক্লিনিকে উত্তর দিনাজপুরের চাকরিহারা অসুস্থ শিক্ষিকা সাবিনা কিস্কুর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। তাঁকে নেওয়া হয় বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে। অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার সময়ে সাবিনার এক সঙ্গী বলেন, ‘‘যোগ্যতায় হয়নি, এ বার হয়তো মৃত্যুতে চাকরি নিশ্চিত হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC West Bengal SSC Scam

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।