বাঁ দিকে, মুকেশ অম্বানী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডান দিকে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনই বাংলায় বড়সড় বিনিয়োগের ঘোষণা করলেন রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ অম্বানী। তিনি জানিয়েছেন, আগামী তিন বছরে রাজ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে তাঁর সংস্থা। একই মঞ্চে রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে সপ্তম বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে মুকেশের সঙ্গে বৈঠকও করেন মমতা। অম্বানী ছাড়াও সঞ্জীব গোয়েন্কা, আইটিসি চেয়ারম্যান সঞ্জীব পুরী, বেঙ্গল অম্বুজা গ্রুপের কর্ণধার হর্ষ নেওটিয়া-সহ অন্য শিল্পপতিরা তাঁদের বক্তব্যে বাংলার শিল্প সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন মঙ্গলবার। অন্যান্য বিনিয়োগের প্রস্তাবও এসেছে রাজ্যে। নিজের বক্তব্যে বদলে যাওয়া বাংলার কথা তুলে ধরেন মমতাও। পাশাপাশি, সরব হন রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বঞ্চনা’ নিয়েও। বিদেশের শিল্পপতি থেকে শুরু করে বণিক মহলের কর্তারাও হাজির ছিলেন বাণিজ্য সম্মেলনে।
অম্বানীর বিনিয়োগ
বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে মমতার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন মুকেশ। তিনি বলেন, ‘‘মমতাদির দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের জন্যই বাংলায় লগ্নির আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই রাজ্য এখন বিনিয়োগের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। আমাদের কাছেও বাংলা এখন বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য।’’ এর পরেই তিনি ঘোষণা করেন, রিলায়্যান্স গোষ্ঠী আগামী তিন বছরে বাংলায় আরও ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। মুকেশের কথায়, ‘‘ইতিমধ্যেই রাজ্যে ৪৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে রিলায়্যান্স। আগামী তিন বছরে আরও ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।’’ কোন কোন ক্ষেত্রে হবে সেই বিনিয়োগ? রিলায়্যান্স কর্ণধার জানিয়েছেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিক্ষেত্রকে ডিজিটালি আরও উন্নত করার জন্য বিনিয়োগ করা হবে। একই সঙ্গে, টেলি যোগাযোগে জিয়োকে আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর তারা। পাশাপাশি, জৈব শক্তি উৎপাদনে রিলায়্যান্স যে গুরুত্ব আরোপ করেছে, সেই ক্ষেত্রেও বাংলায় বিনিয়োগ করা হবে। রিলায়্যান্স কর্তা পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেন, টেলি সংযোগে কলকাতা জ়োনে ইতিমধ্যেই ৯৮ শতাংশ ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে গিয়েছে জিয়ো। তা ১০০ শতাংশ করতে চায় রিলায়্যান্স। মুকেশের কথায়, ‘‘বাংলার জিডিপি-ই বলে দিচ্ছে, এই রাজ্য এখন বিনিয়োগের জন্য কতটা উর্বর।’’ মমতার নেতৃত্বের কথা বলতে গিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথা উল্লেখ করেন। মুকেশ বলেন, ‘‘অটলবিহারী বাজপেয়ী যথার্থই আপনাকে অগ্নিকন্যা বলে বর্ণনা করেছিলেন।’’
বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর সৌরভ
বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে সৌরভকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসাবে ঘোষণা করা ছিল এক প্রকার চমক। মঙ্গলবার নিজের বক্তৃতার শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি এখন একটা ঘোষণা করতে চাই।’’ সৌরভের নাম ব্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসাবে ঘোষণা করতে করতেই ডেকে নেন দাদাকে। মমতা বলেন, ‘‘আমি না শুনতে চাই না। সব কিছুকে পজিটিভ (ইতিবাচক) দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে হবে।’’ সৌরভের হাতে সঙ্গে সঙ্গেই একটি চিঠি তুলে দেন মমতা। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি ভাবে নিয়োগপত্র দেবেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। এ-ও জানা গিয়েছে যে, সৌরভ এই দায়িত্ব পালনের জন্য রাজ্যের কোনও অর্থ নেবেন না। প্রসঙ্গত, রাজ্যে বাম জমানায় কোনও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন না। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই এই বিষয়ে প্রথম উদ্যোগী হন মমতা। প্রথম বার অভিনেতা শাহরুখ খানকে রাজ্যের ‘দূত’ বানান তিনি। এ বার নিয়োগ করলেন সৌরভকে।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব মমতা
বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকেও রাজ্যের প্রতি ‘বঞ্চনা’ নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য কর নিতে পারে না। কেন্দ্র আদায় করে বাংলাকে দেয়। আমাকে দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমরা নিজেদের অংশ পাচ্ছি না। ১০০ দিনের কাজের টাকাও পাচ্ছি না। শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না।’’ এই রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ নিয়ে বলার শুরুতে একই ভাবে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-সহ অন্যান্য বিরোধী দলকে নিশানা করেন মমতা। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি কোনও দলের নাম নেননি। বক্তৃতার শুরুতেই মমতা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে কোনও ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি নেই। বিবেকানন্দ বলেছিলেন, আপনি নিজেকে শক্তিশালী ভাবলে আপনি শক্তিশালী, দুর্বল ভাবলে দুর্বল।’’ এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘কিছু রাজনৈতিক দল রাজ্যের বদনাম করার জন্য শুধু এটাই বলতে থাকে যে, বাংলায় শুধু রাজনৈতিক সন্ত্রাস হয়। কিন্তু সেটা সত্যি নয়’’ একই সঙ্গে শিল্পপতিদের উদ্দেশে প্রশ্নের সুরে মমতা বলেন, ‘‘সেটা হলে বাংলায় এত কাজ হল কী করে?’’ প্রসঙ্গত, শিল্পমহলের অনেকেই বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে বলেন, বাংলায় পরিবেশ পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। এখন আর কথায় কথায় ধর্মঘট হয় না।
অন্যান্য বিনিয়োগের প্রস্তাব
রিলায়্যান্সের পাশাপাশি মঙ্গলবার আরও কিছু বিনিয়োগের ঘোষণা করেছেন অন্য শিল্পপতিরা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, নারায়ণা গ্রুপের কর্ণধার তথা চিকিৎসক দেবীপ্রসাদ শেট্টি। আগামী দু’বছরের মধ্যে কলকাতায় একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল গড়ে তুলবে তাঁর সংস্থা। যেখানে হৃদ্রোগ, ক্যানসারের চিকিৎসার পাশাপাশি অঙ্গ প্রতিস্থাপনও হবে। জেকে গ্রুপের কর্তা হর্ষপতি সিঙ্ঘানিয়া খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে দুগ্ধ শিল্পে বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই প্রকল্পে সরাসরি দু’হাজার জনের কাজ হবে।’’ বাংলায় আরও বিনিয়োগের কথা বলেছেন উইপ্রো কর্তা রিশাদ প্রেমজি-ও। তাঁর কথায়, ‘‘রাজারহাটের জমিতে উইপ্রো যে ক্যাম্পাস তৈরি করবে, তা হবে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আমরা বাংলায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের রাস্তায় যেতে চাই।’’ এ ছাড়াও সঞ্জীব গোয়েন্কা, আইটিসি চেয়ারম্যান সঞ্জীব পুরী, বেঙ্গল অম্বুজা গ্রুপের কর্ণধার হর্ষ নেওটিয়া-সহ অন্য শিল্পপতিরা তাঁদের বক্তব্যে বাংলার শিল্প সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy