উপনির্বাচনেও আলাদা ইস্তাহার প্রকাশ তৃণমূলের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ফারাক বুঝিয়ে দিচ্ছেন ‘পিকে’। বেনজির পেশদারিত্বের ছাপ একটা উপনির্বাচন ঘিরেও। ভোটের আগে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করা এক সময়ে তৃণমূলের কাছে শুধু নিয়ম রক্ষার মতো ছিল। গোটা রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন, অথচ শাসক তৃণমূল ইস্তাহারই প্রকাশ করেনি— এমন নজিরও রয়েছে এ রাজ্যে। কিন্তু এ বার ঠিক উল্টো ছবি। সবাইকে চমকে দিয়ে উপনির্বাচনেও আলাদা ইস্তাহার প্রকাশ করছে তৃণমূল। তা-ও আবার একেবারে স্থানীয় ইস্যুর উপরে দাঁড়িয়ে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর সদর, নদিয়ার করিমপুর, উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ— এই ৩ বিধানসভা আসনে ভোট হবে ২৫ নভেম্বর। লোকসভা নির্বাচনে জিতে দিলীপ ঘোষ এবং মহুয়া মৈত্র সংসদে চলে যাওয়ায় যথাক্রমে খড়্গপুর সদর এবং করিমপুরের বিধায়ক পদ থেকে তাঁদের ইস্তফা দিতে হয়েছে। আর কালিয়াগঞ্জ আসন শূন্য হয়েছে কংগ্রেস বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রমথনাথ রায়ের মৃত্যুতে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে এই ৩ আসনের ১টি ছিল বিজেপির, ১টি তৃণমূলের এবং ১টি কংগ্রেসের। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বলছে খড়্গপুর সদর এবং কালিয়াগঞ্জে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে বিজেপি। আর করিমপুরে তৃণমূল এগিয়ে হাজার সতেরোর মতো ভোটে।
তৃণমূল কিন্তু জোর দিল ওই দুই হারা আসনেই। জেতা আসন করিমপুরের জন্য কোনও ইস্তাহার প্রকাশ করা হবে কি না, এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হচ্ছে খড়্গপুর সদরের নির্বাচনী ইস্তাহার। তৃণণূল সূত্রের খবর, কালিয়াগঞ্জের ইস্তাহারও তৈরি, দু-এক দিনেই সেটাও আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা হবে।
আরও পড়ুন: ন’বছর পর প্রেসিডেন্সির ক্ষমতায় আসতে চলেছে এসএফআই
পশ্চিমবঙ্গে শুধু নয়, ভারতের কোনও প্রান্তেই কোনও রাজনৈতিক দলকে উপনির্বাচনের জন্য আলাদা নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করতে সে ভাবে দেখা যায় না। বিজেপি বা বাম-কংগ্রেস এই উপনির্বাচনের জন্য আলাদা ইস্তাহার প্রকাশের কথা ভাবেইনি। কিন্তু তৃণমূল শুধু ভাবল না, খড়্গপুরের জন্য ইস্তাহার প্রকাশও করে ফেলল।
প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) পরামর্শেই এই অভিনব পদক্ষেপ, খবর তৃণমূল সূত্রের। জেতা আসনে সমর্থন ধরে রাখার চেয়ে হারা আসনে জনভিত্তি পুনরুদ্ধারের উপরেই বেশি জোর দিচ্ছে পিকের টিম। তৃণমূল গত কয়েক মাসে রাজ্য জুড়ে যে সব কর্মসূচি পালন করেছে, তার ৯০ শতাংশই টিম পিকে-র ছকে দেওয়া কর্মসূচি। প্রায় সব কর্মসূচিরই লক্ষ্য ছিল লোকসভা নির্বাচনের ধাক্কা ভুলিয়ে দিয়ে তৃণমূল কর্মীদের আগের চেয়েও বেশি করে মাঠে-ময়দানে রাখা। তফসিলি জাতি এবং জনজাতি প্রধান আসনগুলিতে জনভিত্তি পুনরুদ্ধারে জোর দেওয়ার পরামর্শও তৃণমূল নেতৃত্বকে পিকে দিয়েছেন বলে খবর। এ বার উপনির্বাচনের প্রচার নিয়েও পুঙ্খানুপুঙ্খ কর্মসূচি তৈরি করছে টিম পিকে। লক্ষ্য একটাই— শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই জমিয়ে রাখা এবং প্রতিপক্ষকে বিন্দুমাত্র মাটি বিনা যুদ্ধে না ছাড়া। খড়্গপুর এবং কালিয়াগঞ্জের মতো হারা আসনে বেশি করে জোর দেওয়া সেই স্ট্র্যাটেজিরই অঙ্গ বলে তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে।
খড়্গপুর সদরে যদি জেতেন তৃণমূলের প্রদীপ সরকার, তা হলে তিনি কোন কাজে অগ্রাধিকার দেবেন, এলাকার কোন কোন সমস্যার সমাধান করবেন— উপনির্বাচনের ইস্তাহারে মূলত সে কথাই লেখা হয়েছে। কালিয়াগঞ্জের ক্ষেত্রেও স্থানীয় বিষয়গুলি নিয়েই ইস্তাহার প্রকাশ করা হবে।
আরও পড়ুন: পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল তাঁকে, এই গানগুলো গেয়ে মুগ্ধ করলেন থানাকে, বেরিয়ে এলেন বায়নার টাকা নিয়ে
পিকে-র পরামর্শেই যে এই অভিনব ইস্তাহার, পিকে-র পরামর্শেই যে উপনির্বাচনের ময়দানেও এতটা কোমর কষে নেমে পড়া, সে কথা তৃণমূলে কারও অজানা নেই। কেউ সরাসরি সে বিষয়ে মন্তব্য করছেন না। তবে করিমপুরের পাশাপাশি খড়্গপুর এবং কালিয়াগঞ্জেও যে প্রাণপণে মাঠে নেমেছে তৃণমূল, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy