জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষ ও শোভন চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
সন্ধির সম্ভাবনা বিশ বাঁও জলে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিক বিজেপি নেতার যে সব মন্তব্য ঠিকরে আসছিল, সে সবের জেরে জটিলতা এমনিতেই বেড়ে গিয়েছিল। রবিবার রাতে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ভাষণ আরও উত্তপ্ত করে তুলল পরিস্থিতি। আর সোমবার দিলীপ ঘোষের একটি ‘সাক্ষাৎকার’ সে আগুনে ঘি ঢেলে দিল। বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার আগ্রহ আর তাঁর নেই বলে জানালেন বৈশাখী। তবে যে মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক, তেমন কোনও কথা তিনি সাক্ষাৎকারে বলেননি বলে দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন।
নয়াদিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সদর দফতরে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলে স্বাগত জানানো হয়েছিল ১৪ অগস্ট। তার পরে মহিলা মোর্চার এক নেত্রী ফেসবুকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন। তাঁকে দলে স্বাগত জানানোর বিরোধিতাও করেছিলেন। এর পরে বিতর্কে জড়ায় রাজ্য বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের নাম। দেবশ্রী রায়কে দলে নেওয়া বা না নেওয়াকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক চলছে, সে প্রসঙ্গে মুখ খুলে কখনও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন তিনি। কখনও আবার শোভনের দিকে আঙুল তোলেন। শোভন-বৈশাখীর তরফ থেকেও পাল্টা তোপের মুখে পড়েন জয়প্রকাশ।
বিষয়টি শেষ পর্যন্ত নেতৃত্বের দরজা পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ফোন করে জয়প্রকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন শোভন। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের অন্যতম অরবিন্দ মেননের কাছেও অভিযোগ জানান।
আরও পড়ুন: ৩৬ দিন পর নিরাপত্তা শিথিল, এখনও ছন্দ ফেরেনি কাশ্মীরে
রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফ থেকে হস্তক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল শোভনকে। দিলীপ ঘোষও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে, খারাপ কিছু ঘটে থাকলে তিনি থামানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু তার মধ্যেই পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত করে তোলেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের একটি জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বেশ কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি।
জয়ের ওই সব বেফাঁস মন্তব্যের কথা জেনেই শোভন ও বৈশাখী তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। দিলীপ ঘোষকে ফোন করেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। বিজেপি সূত্রের খবর, রাতেই দিলীপ ফোন করেন জয়কে। কিন্তু পরিস্থিতি যে তপ্ত, তা তত ক্ষণে জেনে গিয়েছেন জয়। তাই দিলীপের ফোন তিনি ধরেননি। তাঁর বাড়ির লোকজন জানিয়ে দেন, জয় ঘুমিয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: গাড়ি শিল্পে ভয়ঙ্কর মন্দার ছবি, বিক্রি ২১ বছরে সবচেয়ে কম, গুদামে অবিক্রিত গাড়ির পাহাড়
জয়ের মন্তব্যের দায় কিন্তু বিজেপি নেয়নি। জয় যা বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত মত— সোমবার সকালে এমনই বলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। জয়ের কিছু বলার থাকলে দলের ভিতরে বলতে পারতেন, প্রকাশ্যে বলা উচিত হয়নি— দিলীপ এমনও বলেন। কিন্তু বিকেলের দিকে বিতর্ক শুরু হয় দিলীপ ঘোষেরই একটি ‘সাক্ষাৎকার’কে কেন্দ্র করে। সেই সাক্ষাৎকারে মুকুল রায় এবং শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক কথাবার্তা লেখা হয়েছে দিলীপ ঘোষের বয়ানে। দিলীপ ঘোষ কিন্তু ওই রকম কোনও সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। আনন্দবাজারকে তিনি বলেছেন, ‘‘যে কথা লেখা হয়েছে, ওই রকম কথা কোনও সাক্ষাৎকারে আমি বলিনি। যিনি লিখেছেন, তিনি নিজের মতো করে লিখে দিয়েছেন।’’
রবিবার রাত থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত যে সব বিতর্ক মাথা তুলেছে, তা নিয়ে শোভন-বৈশাখীর প্রতিক্রিয়া বেশ চড়া। জয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র কটাক্ষ করে শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বানরের হাতে তলোয়ার দিলে যা হয়, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেতা বানিয়েও তাই হচ্ছে।’’ আর বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বর আরও কঠিন। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন আক্রমণ করতেন, আমার এতটা খারাপ লাগত না। অন্তত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আমার নাম তো জানেন— এই রকম ভাবতাম। কিন্তু জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অন্ধকার যুগের একটা পড়তি অভিনেতা আমার নামে এই সব মন্তব্য করলে মেনে নিতে অসুবিধা তো হবেই।’’
আর যে সাক্ষাৎকার তিনি দেননি বলে জানিয়েছেন দিলীপ ঘোষ, সে প্রসঙ্গে বৈশাখী বলেছেন, ‘‘যদি সাক্ষাৎকারটি তিনি না দিয়ে থাকেন, তা হলে ওই প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করুন।’’ বৈশাখীর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে দলের যিনি সর্বোচ্চ নেতা, তাঁর মুখ দিয়ে আমার সম্পর্কে এমন একটা মন্তব্য যদি আসে, তা হলে দলে থাকার প্রশ্ন আর ওঠে কী ভাবে! দলে যোগদানের আগে দিলীপবাবুর সঙ্গে যখন কথা হয়েছিল, তখন তো অন্য রকম আন্তরিকতা দেখেছিলাম। এখন তা হলে এই মন্তব্য আসছে কী ভাবে? হয় ওই আন্তরিকতা মিথ্যা ছিল। না হলে আজকের এই মন্তব্য মিথ্যা। কোনটা মিথ্যা, সেটা ওঁর স্পষ্ট করা উচিত।’’
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমরা নিজেদের মধ্যে অনেক রকম কথাই বলতে পারি। কিন্তু সে সব কথা এমন কারও সামনে বলা উচিত নয়, যিনি তা বিকৃত ভাবে পরিবেশন করতে পারেন।’’ শোভন আরও বলেন, ‘‘দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিরা যখন কথা বলেন, তখন তাঁদের খেয়াল রাখা উচিত যে, কার সামনে বলছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy