বিকল স্ক্যানার এখন বিশ্রামের জায়গা। স্টেশনমুখী অবাধ জনস্রোত। মঙ্গলবার ছবি দু’টি তুলেছেন রণজিৎ নন্দী ও দীপঙ্কর মজুমদার।
মেট্রোর মতোই ঢিলেঢালা শহরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনের নিরাপত্তা। হাওড়া, শিয়ালদহ কিংবা কলকাতা। সাধারণ সতর্কতা থাকেই। যা কার্যত না থাকারই সামিল। সম্প্রতি বাংলাদেশে জঙ্গি হানার প্রেক্ষিতে এখন তিনটি স্টেশনেই লাল সতর্কতা। তার পরের ছবিটাই বা কী রকম?
তিরুঅনন্তপুরম-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস ধরতে মঙ্গলবার হাওড়া স্টেশনে গিয়েছিলেন বারাসতের বাসিন্দা সোমরাজ দত্ত। ঢাকায় জঙ্গি হানার পরে ভেবেছিলেন, স্টেশনে ঢোকার মুখে নিরাপত্তার বাড়াবাড়িতে কয়েক বার দাঁড়াতে হবে তাঁকে। কিন্তু কোথায় কী? হাওড়া স্টেশন রইল হাওড়া স্টেশনেই। কোনও গেটেই কোনও রক্ষী নেই। কেউই কাউকে আটকাচ্ছে না। সকলেরই অবাধ গতি। লাগেজ স্ক্যানার যন্ত্র অকেজো। তাই মালপত্র পরীক্ষাও করতে হয়নি তাঁকে। তিন-চারটি বড় লাগেজ নিয়ে বিনা বাধায় স্টেশনে ঢুকে গিয়েছেন সোমরাজবাবু। শুধু তিনিই নন, এ দিন সকাল থেকে বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনে হাওড়ায় এসে নামা যাত্রীদের অভিজ্ঞতাও আলাদা কিছু নয়। পুরানো কমপ্লেক্স কিংবা নতুন, সর্বত্রই ছিল অবারিত দ্বার।
শিয়ালদহ স্টেশনেরও একই হাল। লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। চলমান ভিড়ে কার সাধ্য এতটুকু দাঁড়াবে? রক্ষীরা আটকাবেনই বা কাকে? রোজকার সকাল-সন্ধ্যার চেনা ছবিটাই বহাল ছিল এ দিনও। অতীতে রাজধানী এক্সপ্রেস ছাড়ার আগে ওই প্ল্যাটফর্মে কিছু বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হতো। ইদানীং সেটাও আর চোখে পড়ে না। এখানেও স্ক্যানার খারাপ হয়ে পড়ে থাকায় মালপত্রও আর আগের মতো পরীক্ষা হয় না।
বরং তুলনায় একটু অন্য রকম কলকাতা স্টেশনের চেহারা। কারণ সেখানে আন্তর্জাতিক ট্রেনের যাতায়াত রয়েছে। ফলে নিরাপত্তার বহর সামান্য হলেও বেশি। বিশেষত মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢোকা-বেরোনোর সময়ে।
অথচ লাল সতর্কতার অঙ্গ হিসেবে তিন স্টেশনেই নিরাপত্তারক্ষীদের নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বেশ কয়েকটি ডিভিশনে চালু করা হয়েছে বিশেষ পাইলট ট্রেনও। তবে যাত্রীরা বলছেন, খাতায়-কলমে রেল যা-ই বলুক, বাংলাদেশের জঙ্গি হামলার পরে তিন দিন কেটে গেলেও রেলস্টেশনগুলিতে বাড়তি নিরাপত্তার অস্তিত্ব টের পাননি তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, কোনও ঘটনা ঘটলেই গালভরা নিরাপত্তার কথা বলে রেল। কিন্তু এ বারও সুরক্ষার কোনও বেড়াজাল চোখে পড়েনি গত ক’দিনে।
পাল্টা দাবিতে রেল জানাচ্ছে, হাওড়া, শিয়ালদহ এবং কলকাতা মিলিয়ে প্রতিদিন রেলের যাত্রী সংখ্যা প্রায় ৩৫ লক্ষ। বিনা টিকিটের যাত্রী মিলিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ। এই বিপুল সংখ্যাক যাত্রীকে নিরাপত্তা দিতে যে সংখ্যক পুলিশ বা আরপিএফ রয়েছেন, তা দিয়ে জঙ্গিহানা তো নয়ই, এমনকী সাধারণ নিরাপত্তা রক্ষাও কার্যত অসম্ভব বলে মনে করেন রেল পুলিশ ও রেল কর্তারাই। তবু ওই সামান্য পরিকাঠামো নিয়েই যাত্রীদের সুরক্ষিত রাখার নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
রেলকর্তারা বলছেন, বিশেষত বাংলাদেশের ঘটনার পরে যাত্রী-সুরক্ষায় এখন রোজই স্নিফার ডগ স্কোয়াড ঘুরছে। কিন্তু যাত্রী বলছেন, রাজধানী এক্সপ্রেস ছাড়া সারমেয় বাহিনীর দেখা মেলে না কোথাওই। লোকাল ট্রেনে তো কোনও দিনই নয়। সকাল-সন্ধ্যায় এমনিতেই লোকাল ট্রেনগুলি ভিড়ে ঠাসা থাকে। সেখানে কুকুর ঘুরবে কী করে?
নিরাপত্তার এই ফস্কা গেরোর কথা অবশ্য মানতে নারাজ রেল ও পুলিশকর্তারা। তাঁদের কথায়, নিরাপত্তা যেমন থাকা উচিত, ঠিক তেমনই রয়েছে। নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা সকলের চোখের সামনে হাজির করাটা মোটেই নিয়ম নয়। রেল পুলিশ, রেল সুরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দারা যতেষ্ট সর্তক রয়েছেন। প্রতিনিয়ত তাঁরা সুরক্ষার বিষয়গুলি খতিয়েও দেখছেন।
রেলের কথা অনুয়ায়ী কী কী নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে ওই তিনটি বড় স্টেশনে? ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা, যা সর্বক্ষণ শ্যেন দৃষ্টিতে নজর রাখছে যাত্রীদের দিকে। ফুটেজ বিশ্লেষণও চলছে প্রতিনিয়তই। পাশাপাশি রয়েছে হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর। সন্দেহজনক মালপত্র সেগুলি দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ঘণ্টায় বেশ কয়েক বার সব প্ল্যাটফর্মের সর্বত্র পর্যবেক্ষণ করছে ডগ স্কোয়াড। আরপিএফকে সঙ্গে নিয়ে প্ল্যাটফর্মে ঘুরছেন পদস্থ আধিকারিকেরাও।
তা ছাড়া, বাড়তি সুরক্ষা দিতে কয়েক দিনের মধ্যেই পূর্ব রেলের সাতটি বড় স্টেশন নিয়ে একযোগে তৈরি হচ্ছে ইন্টিগ্রেটেড সিকিউরিটি সিস্টেম বা বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। কী থাকছে তাতে?
রেল সূত্রে খবর, আলাদা রেল সুরক্ষা বাহিনীর পৃথক বম্ব স্কোয়াড গড়া হচ্ছে। তার জন্য সব রকম যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। খোলা হচ্ছে আধুনিক কন্ট্রোল রুম, যেখান থেকে চটজলদি সর্বত্র যোগাযোগ করা যাচ্ছে। আনা হচ্ছে রাতে নজরদারির বিশেষ ক্যামেরাও। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র জানান— হাওড়া, শিয়ালদহ কলকাতা স্টেশন ছাড়াও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় রাখা হয়েছে আসানসোল, বর্ধমান, ভাগলপুর ও মালদহ স্টেশনকে। একযোগে ওই ব্যবস্থা চালু করা হবে সাতটি স্টেশনেই। যাতে মাওবাদী ও জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য চিহ্নিত এলাকাগুলিতে কোনও ঘটনা ঘটলে দ্রুত মোকাবিলায় নেমে পড়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy