পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রাথমিকে নিয়োগ এবং সাত লক্ষ টাকার বিনিময়ে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ পাকা— অভিযোগ, এমনই ‘রেট’ ছিল বালুরঘাটের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারের। কিন্তু যাঁরা টাকা দিয়েও চাকরি পাননি, তাঁরা শেষ পর্যন্ত পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। অভিযোগ, বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থীর থেকে মোট ৫৫ লক্ষ টাকা হাতিয়েছেন ওই ঠিকাদার।
সম্প্রতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক নিয়োগের মেধাতালিকার ওয়েটিং লিস্ট প্রকাশ করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেখানে তালিকায় প্রথম নামটি ছিল এক কল্পনা মিত্র-র (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু হঠাৎ-ই সেই তালিকায় পরিবর্তন! তাতে কল্পনার নাম সরে গিয়ে এক নম্বরে চলে এসেছিল সেই সময়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া এক নেতার মেয়ের নাম।
শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে এমন বিভিন্ন অস্বচ্ছতার অভিযোগে জর্জরিত স্কুল সার্ভিস কমিশন। অভিযুক্ত ওই ঠিকাদার গ্রেফতার হলেও এখন জামিনে আছেন। যাঁরা চাকরির জন্য টাকা দিয়েছিলেন তাঁরাও সমান অপরাধী বলে সেই প্রার্থীরাও এই বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। তৃণমূল নেতার মেয়ের চাকরি প্রসঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের একটি সংগঠন জানিয়েছে, কিছু প্রার্থী ব্যক্তিগত ভাবে আদালতে মামলা করেছেন। সেই মামলা এখনও আদালতে ওঠেনি। তবে চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ফেলো কড়ি, মাখো তেল— রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে ‘দস্তুর’ এটাই।
এসএসসির চেয়ারম্যান শুভশঙ্কর সরকারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি। প্রার্থীদের অভিযোগ, দুর্নীতি হচ্ছে প্রাথমিক স্তর থেকেই। তাঁদের প্রশ্ন, যাঁরা উচ্চ প্রাথমিক টেটের লিখিত পরীক্ষায় ১৫০-এর মধ্যে ১৪০ বা পুরো ১৫০ পেয়ে মেধা তালিকায় উপরের দিকে স্থান পাচ্ছেন, তাঁদের সবাই কি সত্যিই ওই নম্বর পাওয়ার যোগ্য? না কি তাঁদের কেউ কেউ সাদা খাতা জমা দিচ্ছেন এবং অন্যরা পরে উত্তর
লিখে দিচ্ছেন?
প্রার্থীরা জানাচ্ছেন, লিখিত টেট দিতে হয় ওএমআর শিটে। প্রশ্ন থাকে এমসিকিউ বা মাল্টিপল চয়েস ধাঁচের। শুধু ওএমআর শিটে উত্তরের জায়গায় গোল করে দাগ দিয়ে দিলেই হয়। এসএসসি প্রার্থীদের একাংশের মতে, ওই ওএমআর শিট প্রার্থী নিজে পূরণ না করে অন্য কেউ পূরণ করে দিলে তা ধরা সম্ভব নয়। খাতায় নিজের নাম লেখা ছাড়া প্রার্থীর হাতের লেখার কোনও প্রমাণও থাকার কথা নয়।
উচ্চ প্রাথমিকের প্রার্থীদের একাংশের অভিযোগ, ব্লক স্তরের নেতা ‘ধরা’ থাকলে লিখিত পরীক্ষায় সাদা খাতা জমা দিলেও ১৫০-এর মধ্যে ১৪০ নম্বর পাওয়া কঠিন নয়। ওই প্রার্থীদের দাবি, যেখানে উচ্চ প্রাথমিকের লিখিত টেটে ১৫০-এর মধ্যে ১১০ থেকে ১২০ পাওয়াই কঠিন, সেখানে ১৪০ বা ১৫০ পাচ্ছেন এমন কিছু প্রার্থী, যাঁরা স্থানীয় ভাবে রাজনৈতিক নেতাদের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। ওই প্রার্থীদের কথায়, কেউ লিখিত পরীক্ষায় ১৫০-এর মধ্যে ১৪০-এর আশপাশে পেলে মেধা তালিকায় উপরের দিকে থাকবেনই। তাঁকে আর বাদ দেওয়া যাবে না। এর পর ইন্টারভিউ পর্ব। সেখানেও স্বজনপোষণের অভিযোগ কম নয়।
টেট প্রার্থীদের একাংশ জানাচ্ছেন, কিছু দিন আগে সরকার থেকে বলা হয়েছিল, নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার জন্য শুধু লিখিত পরীক্ষাই হবে। এবং সেই লিখিত পরীক্ষার ধাঁচও বদলাবে। এই বিষয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তি হলেও সাঁওতালি বাদে অন্য কোনও ভাষায় নতুন নিয়মে পরীক্ষা এখনও হয়নি। উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, সাদা খাতা জমা দেওয়া, টেটের নম্বর বা ওয়েটেজ পরে বাড়িয়ে দেওয়া— এ সব অভিযোগ যে ঠিক, তার প্রমাণ মিলেছে ২০১৬ সালের উচ্চ প্রাথমিকের প্রথম প্যানেলকেই হাই কোর্ট বাতিল করে দেওয়ায়। দেখা গিয়েছিল, ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কমিশন প্রকাশিত উচ্চ প্রাথমিকের টেট তালিকায় অনেকের প্রাপ্ত নম্বর ২০১৯ সালে ৪ অক্টোবর প্রকাশিত মেধা তালিকায় বেড়ে গিয়েছে। প্রার্থীদের একাংশের অভিযোগ, লিখিত পরীক্ষার নম্বর কী ভাবে দু’বার দু’রকম হয়? যদিও এসএসসির বক্তব্য ছিল, খাতা ফের মূল্যায়ন করার ফলেই নম্বর ভিন্ন হয়েছে। হাই কোর্ট ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়াকেই বাতিল করে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে বলে। এসএসসি কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, স্বচ্ছতা বজায় রেখে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।
তবে এসএসসি-র বিভিন্ন নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ যে ভাবে সামনে আসছে, তা দেখে প্রার্থীদের একাংশের প্রশ্ন, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ভাবে হচ্ছে, সে নিশ্চয়তা কে দেবেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy