তাল বিক্রি করছে জিৎ। নিজস্ব চিত্র
পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বইয়ের পাতা ওল্টায়নি ছেলে। স্মার্টফোনও নেই যে তাতে ক্লাস করবে। তাই বাবা এ বারে বইখাতা বেঁধেছেদে উঠিয়ে রেখেছেন। হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন বারোশো টাকার তাল। এক ভ্যান পাকা তাল সাজিয়ে বেচা শুরু করেছে জলপাইগুড়ি হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জিৎ সূত্রধর। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন লাগোয়া কালীবাড়ির সামনে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে তাকে। বাবা ভজন সূত্রধর বলেন, ‘‘এখন তো স্কুল বন্ধ, ছেলের পড়াশোনাও হচ্ছে না। বাড়িতে বসে সারাদিন কী করবে? তাই নামিয়ে দিলাম ব্যবসায়।’’
এক দিনে তাল বেছে শ’খানেক টাকা লাভ করেছে জিৎ। ছেলেকে ব্যবসায় নামিয়ে লাভের মুখ দেখা অভাবী পরিবার স্কুল খুললে কি আর তাকে পড়তে পাঠাবে? জিতের বোন পড়ে সোনালি গার্লস স্কুলে। জলপাইগুড়ি শহরের তেলট্যাঙ্কি এলাকার ঘুপচি ঘরের বাসিন্দা ভজনের সারাদিনে লাভ থাকে দু-তিনশো টাকা। জিতের মা সোনা সূত্রধরের কথায়, “আগে তো স্কুল খুলুক। তার পর দেখা যাবে।” তার পরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘‘কী যে হবে, কে জানে!’’
জিতের ভ্যানের কিছুটা দূরেই চটের থলি বিছিয়ে ফুটপাতে আনাজ নিয়ে বসেছে বছর বারোর লোকেশ রায়। বাবা দীপক রায় তাকে বসিয়ে রেখে গিয়েছেন। সে সে জলপাইগুড়ি হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। দীপকবাবুর কথায়, “এখন তো মোবাইলে পড়াশোনা হয়। আমাদের দামি ফোন নেই। তাই ওর পড়া আর হবে না।” দুপুরে দোকানে লোকেশকে একা রেখে দীপকবাবু অন্যত্র কাজে যান। তিনি বললেন, “দু’জন থাকলে, অনেক সময় ধরে দোকান করা যায়। ভাল বিক্রি হয়। এই ক’দিনে ছেলেটা আমার ভালই দোকানদারি শিখেছে।” ক্লাসে খুব ভাল নামতা মুখস্থ বলতে পারত লোকেশ। সে এখন মুখে মুখেই আলু-পেঁয়াজের দাম যোগ করে ক্রেতাকে বলে।
আরও পড়ুন: অভাবে চায়ের দোকান ইঞ্জিনিয়ারের
শুধু জিৎ এবং লোকেশ নয়, জলপাইগুড়ি জেলার প্রায় সাড়ে চার লক্ষ পড়ুয়ার মধ্যে স্মার্টফোন রয়েছে মাত্র কয়েক জনের। জলপাইগুড়ির স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বালিকা গোলে বলেন, “নিচু ক্লাসে মাত্র ২০ শতাংশের মোবাইল রয়েছে। নবম, দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের মধ্যে ৩৫ শতাংশের মোবাইল রয়েছে।” মোবাইল না থাকা বিপুল সংখ্যক পড়ুয়ার পড়া এখন বন্ধ। তাদের কেউ ফল বিক্রি করছে, কেউ বা মাঠে কাজ করছে।
স্কুল খুললে পড়তে যাবে না? খদ্দের না থাকায় ভ্যানের হাতলে ঝুলে খেলছিল জিৎ। বলল, “বাবা জানে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy