Advertisement
E-Paper

ক্ষোভ-হইচই সত্ত্বেও বাজেটে রসিক মুখ্যমন্ত্রী

আটের দশকে এক বার বাজেট পেশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। তবে অশোক মিত্র ইস্তফা দেওয়ার পরে সেই সময়ে রাজ্যে আলাদা অর্থমন্ত্রী কেউ ছিলেন না, মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই ওই দফতর ছিল।

বাজেট পেশের পরে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার।

বাজেট পেশের পরে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৪:৫২
Share
Save

বাজেট মানে বরাবর অর্থমন্ত্রীদের সংসার। তথ্য, পরিসংখ্যানের ভারই সেখানে বেশি। কিন্তু এ বার বিধানসভায় ছবি দেখা গেল অন্য রকম। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের বদলে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ করলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের সরকারের নানা ঘোষণার পরে তাঁরই নানা মন্তব্যে বাজেট-সুলভ গম্ভীর পরিবেশ হাল্কা হয়ে গেল অনেকটাই। আবার মুখ্যমন্ত্রীর সহাস্য মন্তব্যের রেশ ধরেই বোঝা গেল, এ বার ভোট-অন-অ্যাকাউন্টের প্রায় প্রতি ঘোষণার নেপথ্যে কাজ করছে আসন্ন নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার ভাবনা!

আটের দশকে এক বার বাজেট পেশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। তবে অশোক মিত্র ইস্তফা দেওয়ার পরে সেই সময়ে রাজ্যে আলাদা অর্থমন্ত্রী কেউ ছিলেন না, মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই ওই দফতর ছিল। সেই দিক থেকে অর্থমন্ত্রী আছেন কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বাজেট বা ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ করছেন, এই নজির বিরল। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার পরে শুক্রবার অর্থমন্ত্রী অমিতবাবুর ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে যে কারণে বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলেছে, অর্থমন্ত্রী তেমন ‘অসুস্থ’ নন। রাজনৈতিক তাগিদেই নিজে বাজেট বক্তৃতা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। অধিবেশনেও মুখ্যমন্ত্রী ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ করতে শুরু করা মাত্রই এক প্রস্ত বিতণ্ডা বাধিয়েছেন বিজেপির বিধায়কেরা।

গোড়ায় গোলমালের পরে বিজেপি সভা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর বাকি বক্তৃতা এ দিন হয়েছে বিরোধীশূন্য ঘরে। বিধানসভার রীতি-নীতি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগে ভোট-অন-অ্যাকাউন্টের বক্তৃতা বয়কট করেছিল বিরোধী বাম ও কংগ্রেস। একের পর এক প্রকল্পের ঘোষণা করে নিজের বক্তৃতার ফাঁকেই সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় বিধায়কদের প্রতিক্রিয়া জেনে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যেমন, চ্যাংরাবান্ধা-মাথাভাঙা-কোচবিহার রাস্তা ৭৫ কিলোমিটার বাড়ানোর ঘোষণা করে নাটাবাড়ির তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কাছে মমতা জানতে চান, ‘‘রবি, খুশি তো? তোমার ভাষায় কী বলবে?’’ রবি হেসে বলেন, ‘‘ভালাইসে!’’ রুবি-কালিকাপুর উড়ালপুলের কথা বলার সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘অরূপ (বিশ্বাস), শুনছিস তো?’’ আবার উল্টোডাঙা থেকে পোস্তা বাজার পর্যন্ত উড়াল-পথের ঘোষণা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই যে সাধন’দা! আজও ঝগড়া করেছে আমার সঙ্গে!’’ হাসিমুখে মাথা নাড়িয়ে সাড়া দেন সাধনবাবুও। তেমনই যাত্রী পরিবহণের যানবাহনে ৬ মাসের রোড ট্যাক্স মকুবের কথা বলে স্বর্ণকমল সাহার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘একটু জয় জগন্নাথ বলে দাও!’’

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন, এই সব ঘোষণাই তাঁর দলের বিধায়কদের কাছে ভোটের তাস হতে পারে। তাই হাতে তাস তুলে দেওয়ার সময়েই টাটকা প্রতিক্রিয়া বুঝে নিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পাশাপাশিই সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীর সূচনায় তাঁর নামে একাধিক প্রকল্পের ঘোষণা করার ফাঁকে নেতাজির ঢঙেই মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘তোমরা আমাকে বিশ্বাস দাও, আমি তোমাদের সেবা দেব!’’

এমন হাল্কা চাল অবশ্য বিরোধী শিবিরে ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বক্তৃতা শুরু করতেই হইচই করে ওয়েলে নেমে আসেন মনোজ টিগ্গা, দুলাল বর-সহ কয়েক জন বিজেপি বিধায়ক। কেন মুখ্যমন্ত্রী বাজেট পেশ করছেন, কেন রাজ্যপালকে ডাকা হয়নি, এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেন, বাজেট পেশের সময়ে এমন আচরণ ঠিক নয়। সংসদে বাজেটের সময়েও কেউ এমন করে না। তাতে বিজেপি বিধায়কেরা নিরস্ত হননি। স্পিকার তাঁদের ভর্ৎসনা করে বলেন, বিক্ষোভ না থামালে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। তিনি আরও জানান, রাজ্যপালই মুখ্যমন্ত্রীকে বাজেট পেশের আনুষ্ঠানিক সম্মতি দিয়েছেন। কিছু ক্ষণ বিক্ষোভের পরে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিয়ে সভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়কেরা। পরে বাইরে বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা মনোজ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বাজেট পড়ার সম্মতি রাজ্যপাল দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু রাজ্যপালকে অধিবেশনে না ডাকায় সম্মতি নিশ্চয়ই রাজ্যপাল দেননি! রাজ্যপালকে অসম্মান করে বিধানসভার অমর্যাদা করা হয়েছে।’’

সভায় না থাকলেও ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট নিয়ে কটাক্ষই করেছেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন বলেই মুখ্যমন্ত্রী নিজে বাজেট পড়েছেন। মন্ত্রীরা কখন কী তথ্য দেন, তাতে ভরসা নেই! আর সরকারের মেয়াদ তো তিন মাস। অথচ ঘোষণা লম্বা লম্বা। তা হলে আর ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট কেন? কী ভাবে হবে, কোথা থেকে টাকা আসবে, তার কোনও উত্তর নেই।’’ বিরোধী দলের সচেতক, কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘নিজের ঢাক নিজেই কাঁধে নিয়ে পেটাবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী বাজেট পেশ করেছেন!’’ সদ্য তৃণমূলত্যাগী, বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ভোট-অন-অ্যাকাউন্টের সময়ে উনি পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করে দিলেন। স্বপেই যখন পোলাও খাবেন, তাই ইচ্ছেমতো ঘি ঢেলেছেন!’’ আর রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘খুব সুন্দর সব বলেছেন। তিন মাস বাদে আমরা ক্ষমতায় এসে এই স্বপ্নগুলো পূরণ করব! তবে আমাদের সরকার দুয়ারে যাবে না ছাদে যাবে, সেটা আমাদের সরকারই ঠিক করবে।’’

mamata banerjee Budget 2021

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।