দলবিরোধী মন্তব্য করলেও এখনও রাজীবকে প্রকাশ্যে কিছুই বলেনি বিজেপি। ফাইল চিত্র
নতুন প্রশ্নের মুখে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। বুধবার রাতে দলের দুই নেতাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে দল। দলবিরোধী মন্তব্যের জন্য শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে সতর্ক করে চিঠি পাঠানো হয়েছে আরও এক নেতাকে। এর পরেই প্রশ্নউঠেছে,দলের পুরনো তিন সদস্যের আচরণে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অন্য দল থেকে বিজেপি-তে এসে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হওয়া কেউ কেউ সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সব পোস্ট করেছেন তা নিয়ে চুপ কেন নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, দলবিরোধী কাজের জন্য মালদহের প্রাক্তন জেলা সভাপতি সঞ্জিত মিশ্রকে বুধবার বহিষ্কার করে বিজেপি। এছাড়াও দলবিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে নিতাই মণ্ডল নামে মালদহের আরও এক জেলা স্তরের প্রাক্তন বিজেপি নেতাকে। দলেরই এক নেতার উপরে হামলায় এখন বিচারাধীন নিতাই। এই দুই নেতাই ইদানীং বিক্ষুব্ধ বিজেপি হিসেবে জেলায় পরিচিত। তাই এঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই বিজেপি-র অন্দরে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এখনওসক্রিয় হুগলি জেলার প্রাক্তন সভাপতি সুবীর নাগকে প্রথমে কারণ দর্শানোর চিঠি ও বুধবার সতর্ক করা নিয়ে।
সুবীরের সঙ্গে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বনিবনা নেই দীর্ঘ দিন। যদিও জেলার নেতাদের দাবি, লোকসভা নির্বাচনে লকেটের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা ছিল সুবীরের। বিধানসভা নির্বাচনের আগে লকেটকে চুঁচুড়ায় প্রার্থী করতেই রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেবেন বলে ঘোষণা করেন সুবীর। বিতর্কে এতটাই বাড়ে যে সুবীরকে বিজেপি তারকেশ্বরের দায়িত্ব দিয়ে পাঠায়।
নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয় ভোটের ফল ঘোষণার পরে। জেলায় খারাপ ফলের পরে চুঁচুড়ায় একটি সাংগঠনিক বৈঠক করেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই দিন দিলীপকে বিক্ষোভও দেখায় সুবীর অনুগামীরা,এখনকার জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করে। অভিযোগ ওঠে, সুবীরের নির্দেশেই ওই বিক্ষোভ। এর পর একটি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হলে বিজেপি-র তরফে দাবি করা হয়, সেখানে বিক্ষোভ সংগঠিত করার জন্য যিনি নির্দেশ দিচ্ছেন তা সুবীরের গলা। এ নিয়েই সুবীরকে প্রথমে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়। তার জবাব পাওয়ার পরে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তাঁকে সতর্ক করেছে বুধবার। আগামী দিনে দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলতে বলা হয়েছে।
ওই চিঠি পেয়ে সুবীর আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি দলের অনুগত সৈনিক। আমায় শৃঙ্খলা মেনে চলতে বলা হয়েছে। এটাই তো স্বাভাবিক। আমি বরাবর দলের নির্দেশ মেনে চলেছি, এখনও চলব।’’ সুবীর এত সহজে সবটা মেনে নেওয়ার কথা বললেও তাঁর অনুগামীরা অন্য কথা বলছেন। হুগলিরই এক নেতার বক্তব্য, ‘‘দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলব না। কিন্তু এটা মানতেই হবে যে, দল দু’রকম নীতি নিয়ে চলছে। সুবীরদা দলের ঘরের ছেলে বলে এ সব করা হচ্ছে। কিন্তু অন্য দল থেকে যে সব জামাই এসেছেন তাঁদের কিছু বলা হচ্ছে না। দলবিরোধী কথা বলার পরেও তাঁরা জামাই আদরেই আছেন।’’
হুগলির ওই নেতা স্পষ্ট ভাবেই অভিযোগ তুলেছেন হাওড়ার ডোমজুড়ে পরাজিত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে। তিনি বলেন, ‘‘রাজীববাবু তো সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা করেছেন দলের। উত্তরপাড়ার প্রার্থী প্রবীর ঘোষালও সংবাদমাধ্যমে নানা রকম কথা বলছেন। দুর্গাপুর পূর্বে প্রার্থী হওয়া দীপ্তাংশু চৌধুরীও নানা রকম দলবিরোধী মন্তব্য করেছেন। কিন্ত কই, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তো?’’ ওই নেতা বিধাননগরের প্রার্থী সব্যসাচী দত্তের কথা না তুললেও কিছুদিন আগেই তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে দলবিরোধী কথা বলার জন্য শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ জমা পড়ে। যদিও এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে বিজেপি-র পক্ষে কোনও পদক্ষেপের কথা জানা যায়নি।
দলের ভিতরে ওঠা এমন প্রশ্ন নিয়ে অবশ্য কোনও জবাব দিতে চাইছেন না রাজ্য নেতারা। রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘এটা সাংগঠনিক বিষয়। শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গোটাটা দেখছে। তাঁরাই ঠিক করবেন কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অনেকে আদৌ বিজেপি-তে আছেন কিনা সেটা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আর না নেওয়া একই বিষয়।’’ দলের ভিতরে প্রশ্ন ওঠা নেতাদের সম্পর্কে বিজেপি কী ভাবছে তা জানতে আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষে রাজ্য বিজেপি-র শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রধান বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকারকে ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy