ছবি সংগৃহীত।
ডিএ (মহার্ঘ ভাতা) নিয়ে রাজ্য সরকারের দায়ের করা ‘রিভিউ পিটিশন’ খারিজ করে দিল স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল (স্যাট)।
রাজ্য সরকার চেয়েছিল, ডিএ কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার এবং দেশের মূল্যবৃদ্ধি সূচক অনুসারে তা প্রাপ্য— এমন রায় পুনর্বিবেচনা করুক স্যাট। বুধবার স্যাটের বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ এবং প্রশাসনিক সদস্য সুবেশকুমার দাস সেই আর্জি খারিজ করে দেন। আইনজীবীদের অনেকেই মনে করছেন, স্যাটের রায়ের ফলে কেন্দ্রীয় হারে এ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ডিএ পাওয়ার দাবি পূরণ হতে চলেছে। যদিও আইনজীবীদের অন্য অংশের মতে, রাজ্য স্যাটের রায় মানবে, এমন নিশ্চয়তা নেই।
নবান্নের খবর, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় আংশিক বিরুদ্ধে যাওয়ার পরে স্যাটে এসে মামলার পুনর্বিবেচনা চেয়েছিল অর্থ দফতর। এ দিন তা-ও খারিজ হয়ে গিয়েছে। ফলে রাজ্য সরকার ফের হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারে। স্যাটের রায়েও তেমন কথা উল্লেখ করা হয়েছে। না-হলে সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারে সরকার। অর্থ দফতরের এক কর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। তারা বিরুদ্ধে রায় দিলে সরকারের মুখ পুড়বে। কিন্তু ঘটনা হল, বকেয়া ডিএ দেওয়ার মতো অর্থ জোগাড় করার অবস্থা এখন সরকারের নেই। সে ক্ষেত্রে আদালতে লড়াই জিইয়ে রাখলে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডিএ মামলার গতিপথ
• ফেব্রুয়ারি ২০১৭: ডিএ দেওয়া, না-দেওয়া রাজ্যের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, রায় স্যাটের।
• মার্চ ২০১৭: রায় চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা সরকারি কর্মীদের দুই সংগঠনের।
• অগস্ট ২০১৮: ডিএ কর্মীদের অধিকার, বলল ডিভিশন বেঞ্চ।
• একই সঙ্গে মামলা ফেরানো হল স্যাটে।
• মার্চ ২০১৯: রাজ্যের রিভিউ পিটিশন খারিজ করল স্যাট।
• জুলাই ২০১৯: ডিএ মেটানোর নির্দেশ স্যাটের। রিভিউ পিটিশন রােজ্যর।
• জুলাই ২০২০: রিভিউ পিটিশন খারিজ।
অভিরূপ সরকারের নেতৃত্বাধীন রাজ্যের ষষ্ঠ বেতন কমিশন সুপারিশ করেছিল, কর্মচারীদের ডিএ-র হিসেব কষার জন্য কেন্দ্রীয় নিয়ম অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা নেই। প্রয়োজনে রাজ্য তার নিজস্ব মূল্যবৃদ্ধি সূচক তৈরি করতে পারে। সেই সুপারিশ ঢাল করে রাজ্য সরকার নতুন বেতন কাঠামোয় ডিএ দেওয়ার কোনও ব্যবস্থাই রাখেনি।
আরও পড়ুন: চিনা দখলে চার ফিঙ্গার নিয়েই চিন্তা ভারতের
কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দাবি করে স্যাটে মামলা দায়ের করেছিল ফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ এবং ইউনিটি ফোরাম নামে সরকারি কর্মীদের দু’টি সংগঠন। ফেডারেশনের নেতা মলয় মুখোপাধ্যায় এ দিন দাবি করেন, ২০০৯ সালে ১ জুলাই থেকে ২০১৬-র ১ জানুয়ারি পর্যন্ত পঞ্চম বেতন কমিশনের আওতায় কেন্দ্রীয় হারে পুরো ডিএ দেওয়া হয়নি রাজ্য সরকারি কর্মীদের। তার পরে ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের আওতায় ডিএ পাওনা হয় তাঁদের। কিন্তু চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলেও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া হয়নি। স্যাট রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেওয়ায় এখন বকেয়া এবং চলতি ডিএ দিতে হবে রাজ্যকে। ফেডারেশনের আইনজীবী জানান, রিভিউ পিটিশন খারিজ করার অর্থ হল, স্যাট গত বছর ২৬ জুলাই রাজ্যকে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছিল তা বহাল থাকল।
আরও পড়ুন: প্রাক্-লকডাউন উদ্যাপন আইসক্রিম আর শপিংয়ে
সরকারী কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীল বলেন, ‘‘আমাদের আশঙ্কা রাজ্য সরকার হাইকোর্টে এই রায় চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করবে। সে ক্ষেত্রে আমরাও মামলায় যুক্ত হব।’’
আইএনটিইউসি সমর্থিত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন ‘কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ’-এর পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি জানান, এ দিন রায় ঘোষণার আগে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত তাঁর আর্জিতে বলেন, সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে কেন্দ্রীয় সরকার চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আগামী বছরের ১ জুলাই পর্যন্ত তিন কিস্তি ডিএ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিল্লির রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন তার বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করে। কিন্তু হাইকোর্ট কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে। অতএব, রায় ঘোষণার আগে হাইকোর্টের রায় বিচার বিবেচনা করে দেখা হোক।
আমজাদ আলি জানান, বিচারপতি বাগ এজি-কে বলেন, ডিএ নিয়ে স্যাট রায় দিয়েছিল গত বছরের ২৬ জুলাই। দিল্লি হাইকোর্ট রায় দিয়েছে তার পরে। রিভিউ পিটিশনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, স্যাট কোনও রায় দেওয়ার পরে অন্য কোনও উচ্চ আদালত কোনও রায় দিলে তা বিবেচনা করার সুযোগ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy