দেশের ‘কনজ়িউমার প্রাইস ইনডেক্স’ (সিপিআই বা ক্রেতা মূল্যসূচক) উপরে ভিত্তি করে এ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ দিতে নির্দেশ দিল স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল (স্যাট)। শুক্রবার স্যাটের বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ ও প্রশাসনিক সদস্য সুবেশ দাস ওই নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছেন, ক্রেতা মূল্যসূচকের উপরে ভিত্তি করে ডিএ কত হবে, তা তিন মাসের মধ্যে ঠিক করতে হবে এবং কার্যকর করতে হবে ছ’মাসের মধ্যে।
পাশাপাশি, ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার আগে পর্যন্ত বকেয়া ডিএ এক বছরের মধ্যে মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে স্যাট। তবে সেটা নগদে দেওয়া হবে, নাকি কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা করা হবে, তা রাজ্যের ইচ্ছা বলে জানিয়েছে তারা। ডিএ নিয়ে মামলাকারীদের দাবি, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ এলে তা ২০১৬-র ১ জানুয়ারি থেকে বলবৎ হওয়ার কথা। ফলে ২০০৯-এর ১ জুলাই থেকে ওই দিন পর্যন্ত সময়কালের জন্য বকেয়া দিতে হবে। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ বলবৎ করার পরে বছরে দু’বার ডিএ দিতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছে স্যাট।
স্যাটের এই রায় রাজ্য সরকার মেনে নেবে, না উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হবে, তা শুক্রবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে বর্ধিত ডিএ এবং বকেয়া দিতে গেলে যে রাজ্যকে বেশ খানিকটা আর্থিক দায় ঘাড়ে নিয়ে হবে বলে জানাচ্ছেন অর্থ দফতরের কর্তারা। তাঁদের মতে, বকেয়া ডিএ-র কারণে আর্থিক বোঝা কত হবে, তা এখনই হিসেব করা সম্ভব নয়। কিন্তু সিপিআই অনুসারে, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে গেলেও যে বাড়তি টাকা খরচ হবে, তার পরিমাণও যথেষ্ট। অর্থ দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, এখন বেতন খাতে প্রতি মাসে খরচ হয় পৌনে তিন হাজার কোটি টাকা। নতুন হারে ডিএ দিতে হলে প্রায় সাতশো কোটি টাকা বাড়তি খরচের সম্ভাবনা।
স্যাটের রায়
• মহার্ঘ ভাতার ভিত্তি ‘কনজ়িউমার প্রাইস ইনডেক্স’ বা ক্রেতা মূল্যসূচক
• কত ডিএ বকেয়া, নির্ধারণ করতে হবে ৩ মাসে। দিতে হবে ৬ মাসের মধ্যে
• ষষ্ঠ বেতন কমিশন বলবৎ করার আগে পর্যন্ত দিতে হবে বকেয়া
• বকেয়া মেটাতে হবে ১ বছরের মধ্যে
• ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হওয়ার পরে ডিএ দিতে হবে বছরে দু’বার
• ডিএ প্রশ্নে বৈষম্য অসাংবিধানিক
• ফলে দিল্লি, চেন্নাইয়ে কর্মরত রাজ্য সরকারি কর্মীদের আলাদা করে বাড়তি ডিএ নয়
• তাঁদের প্রয়োজনে ‘বিশেষ ভাতা’ দেওয়া যেতে পারে
কেন্দ্রীয় হারে ডিএ চেয়ে স্যাটে মামলা করেছিল রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংগঠন ‘কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ (আইএনটিইউসি) এবং ‘ইউনিটি ফোরাম’। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্যাটের বিচারপতি অমিত তালুকদার জানিয়ে দেন, ডিএ দেওয়া বা না-দেওয়া রাজ্যের ইচ্ছে। তাঁর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে সরকারি কর্মীদের সংগঠন। গত বছর ৩১ অগস্ট বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীদের ‘অধিকার’। একই সঙ্গে স্যাটকে তারা নির্দেশ দেয়, কেন্দ্রীয় হারে রাজ্য সরকারি কর্মীরা ডিএ পাবেন কি না, তা বিচার করে দেখতে। স্যাট এ দিন সেই রায়ই দিল।
স্যাট বলেছে, মুদ্রাস্ফীতির কারণেই ডিএ দিতে হয়। দেশে কতটা মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে, তা নির্ধারণ করে শিমলার লেবার ব্যুরো। ক্রেতা মূল্যসূচক কী হবে, তা ঠিক করা হয় সারা দেশের জন্যই। এখন দিল্লি ও চেন্নাইয়ে কর্মরত রাজ্য সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পান। কর্মীদের মধ্যে এই বৈষম্যও স্যাটকে খতিয়ে দেখতে বলেছিল হাইকোর্ট। স্যাট বলেছে, ভিন্ রাজ্যে কর্মরতদের আলাদা করে বাড়তি ডিএ দেওয়াটা রাজ্যের খেয়ালখুশি মনোভাব। কর্মীদের এই ভাবে দু’টি শ্রেণিতে ভাগ করে বৈষম্য ঘটানো হয়েছে। এটা সংবিধান-বিরোধী। তাঁদের বাড়তি ডিএ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এত দিন তাঁরা যে অতিরিক্ত টাকা পেয়েছেন, তা ফেরত না-নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে স্যাট। পাশাপাশি, তাঁদের ‘বিশেষ ভাতা’ দিয়ে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে বলেও স্যাটের রায়ে জানানো হয়েছে।।
এ দিন স্যাটের রায় ঘোষণার পরে ‘কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ (আইএনটিইউসি)-এর সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন বকেয়া ডিএ-র দাবি জানাচ্ছিলাম। সরকার শোনেনি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনের রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। তাই আইনি লড়াইয়ে নেমেছিলাম। রাজ্যকে অনুরোধ করব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই রায় কার্যকর করতে।’’
রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘ডিএ অধিকার, দয়ার দান নয়। আদালত আমাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’’ তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের মেন্টর গ্রুপের নেতা মনোজ চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আদালতের রায় সকলকেই মানতে হয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, ডিএ নিয়ে স্থায়ী নির্দেশনামা হোক। এখনও সেই দাবিই করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy