ফাইল চিত্র
একটি নথি। আরও নির্দিষ্ট করে বললে একটি চিরকুট, আইনি পরিভাষায় যার নাম ‘রি-কল স্লিপ’। সেটি পুড়ে গিয়েছে। তাতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার অন্যতম কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের জেলমুক্তির সম্ভাবনা। কারণ, ওই চিরকুটই তাঁর কারামুক্তির চাবিকাঠি।
কী এই ‘রি-কল স্লিপ’?
আদালত সূত্রের খবর, জামিন মঞ্জুরের পরে আদালত থেকে একটি চিরকুটে জেল-কর্তৃপক্ষকে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়, অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়া হোক। ‘রি-কল স্লিপ’ বলা হয় সেই চিরকুটকেই। সেই নথির কপি আদালতে থাকে না। একের পর এক মামলায় জামিনের পরেও একটি মামলায় সেই চিরকুটের অভাবে মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দেবযানীর।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক অনিয়মের মামলায় ২০১৩ সালে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে দেবযানীকে কাশ্মীরের সোনমার্গে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। তার পরে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় দেবযানীর বিরুদ্ধে ১১৯টি মামলা দায়ের করা হয়। পরে সিবিআই তদন্তে নেমে সেই ১১৯টির মধ্য থেকে ২১টি মামলা বেছে নেয়। আবার ওই ২১টি মামলার নির্যাস নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে দেবযানীর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দায়ের করে সিবিআই। ওড়িশার ভুবনেশ্বরে দায়ের করা হয় আরও একটি মামলা।
এ ছাড়া গুয়াহাটিতে দেবযানীর বিরুদ্ধে মামলা করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেই মামলায় সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন দেবযানী। পশ্চিমবঙ্গে সিবিআইয়ের পাঁচটি মামলাতেও তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়েছে। অতিমারিতে ভুবনেশ্বর আদালতে মামলার শুনানি প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। সম্প্রতি তা চালু হয়েছে। দেবযানীর জামিনের আবেদন করা হয়েছে সেখানেও। সেই আবেদন মঞ্জুর হলে কেন্দ্রীয় সংস্থার করা সব মামলায় জামিনে মুক্ত হবেন তিনি।
বাদ সেধেছে রাজ্যের বাকি মামলা।
তারই একটির নথি গিয়েছে পুড়ে। পুলিশি সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের অধিকাংশ মামলায় ইতিমধ্যেই দেবযানীর জামিন মঞ্জুর হয়েছে। বালুরঘাট আদালতে পুলিশের দায়ের করা চারটি মামলা আছে। অতিমারির কারণে এজলাসে দেবযানীকে সশরীরে হাজির করাতে না-পারায় ওই মামলাগুলিতে জামিন মঞ্জুর হয়নি।
দেবযানীর আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভুবনেশ্বরের মামলা এবং রাজ্য পুলিশের চারটি মামলায় দ্রুত জামিন মঞ্জুরের আশা করা হচ্ছে। নতুন করে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের না-হলে দেবযানী জেল থেকে শীঘ্রই ছাড়া পেতে পারেন।’’
পুলিশি সূত্রের খবর, গ্রেফতারের কয়েক বছর পর থেকেই দেবযানী দমদমে মহিলা জেলে আছেন। ২০২০ সালের ২১ মার্চ ওই জেলে বন্দি-বিক্ষোভ হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় জেলের অফিসের আসবাবপত্রে। অভিযোগ, সেই আগুনে অফিসের বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি ছাই হয়ে গিয়েছে। সেখানেই ছিল দেবযানীর জেলমুক্তির রি-কল স্লিপের ফাইল। সেই ফাইল সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
অয়ন বলেন, ‘‘জামিনের নথি বিভিন্ন আদালত থেকে 'সার্টিফায়েড কপি' হিসেবে পাওয়া যাবে। কিন্তু রি-কল স্লিপের কোনও প্রতিলিপি পাওয়া যায় না। সেই জন্যই আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।’’ আইনজীবীদের একটি অংশের প্রশ্ন, রি-কল স্লিপ না-থাকলে সংশ্লিষ্ট মামলায় কিসের ভিত্তিতে জেল থেকে ছাড়া পাবেন তিনি? তা ছাড়া কোন মামলার রি-কল স্লিপ পুড়েছে, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। এ-পর্যন্ত বঙ্গে কোনও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলার নজির নেই। দেবযানী যত মামলায় জামিন পেয়েছেন, রাজ্যের বিভিন্ন নিম্ন আদালতে সেগুলির যাবতীয় নথি সংগ্রহ করে দেখতে হবে। এই অবস্থায় অভিযুক্তের জেলমুক্তি হবে কী করে?
অয়ন বলেন, ‘‘হাই কোর্টে আবেদন করতে হবে। এই জটিল পরিস্থিতিতে একমাত্র হাই কোর্টই কোনও একটা সমাধানসূত্র বার করতে পারে। দেবযানীর বিরুদ্ধে বাকি মামলাগুলির জামিনের আবেদনের পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া নথির বিষয়ে উচ্চ আদালতে আবেদনের প্রস্তুতি চালানো হচ্ছে।’’
দেবযানীর মা সর্বাণী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেয়ের কপালটাই খারাপ। এখন উচ্চ আদালত একমাত্র সহায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy