—ফাইল চিত্র ।
সরগরম সরবেড়িয়া মোড়। সেই মোড় থেকে ধামাখালি যাওয়ার রাস্তায় ঘুরতেই পরিবেশটা এক লহমায় পাল্টে গেল। এই রাস্তা ধরে তিন কিলোমিটার এগোলেই রাস্তার বাঁ দিকে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়ি। যেখানে ইডি ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর হানা নিয়ে আজ দিনভর সরগরম রয়েছে গোটা রাজ্য।
তিন কিলোমিটার আগে থেকেই সরবেড়িয়া মোড়টা যেন দুর্ভেদ্য ব্যূহ। মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকদের একাধিক মোটরসাইকেল জানান দিচ্ছে ধামাখালির ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে শাহজাহানের বাড়ি পর্যন্ত কোনও ভাবেই পৌঁছনো যাবে না। রাস্তায় অপরিচিত মুখ দেখলেই যুবকের দল জেরা করছে, ‘‘কোথায় যাবেন? এ দিকে যাওয়া যাবে না।’’ এক জনের উপদেশ, ‘‘সকালবেলায় দেখলেন না মিডিয়ার গাড়ি কী ভাবে ভাঙচুর হয়েছে। সন্ধ্যে নামছে। এখন আর ওদিকে যাবেন না। বিপদ আছে।’’
গাড়ি নয়, ভরসা করতে হল টোটো-কে। স্থানীয় মানুষও যাতায়াত করছেন টোটোতে। টোটাের পাশ দিয়ে যাওয়া তিন আরোহীর মোটরবাইকের আওয়াজ ছাড়া আশপাশ নিস্তব্ধ। দোকানপাট সমস্ত বন্ধ। একটু এগোতে পুলিশের টহলদারিও উধাও।
টোটোর আলোচনায় ছিল সকালেরই ঘটনা। গল্প করছিলেন টোটোচালকই, ‘‘ইডি আর কেন্দ্রীয় বাহিনী যখন দাদার বাড়ি ধাক্কাচ্ছে এবং বাড়ির সামনে ঝামেলা হচ্ছে, তখন মহিলারাই বাড়ির গেটের সামনে জোট বেঁধে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় কেউ বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারেনি। সেই সুযোগে পিছনের দরজা দিয়ে দাদা মোটরবাইকে চেপে ধামাখালি
পালিয়ে যায়।’’
গল্প শেষের আগেই রাস্তার দু’দিকে চলে এল ভেড়ি। একটু এগোতেই ভেড়ির এক দিকে পর পর তিনটি অট্টালিকা। প্রথমটি সাদা রঙের, দ্বিতীয়টি নীল এবং তার পাশেরটি হালকা হলুদ। তিনটিই নাকি শাহজাহানের বাড়ি। তিনি নাকি থাকেন নীল রঙের বাড়িতে। বাকি দু’টোয় আত্মীয়েরা। মূল রাস্তা থেকে ৫০ মিটার সিমেন্টের রাস্তা পেরোলেই নীল বাড়ির দরজা। সিমেন্টের রাস্তার মুখে বোর্ডে লেখা ‘আকুঞ্জিপাড়া’। সামনে যথারীতি টহলদারি মোটরবাইক।
শীতের বিকেলের রোদ পড়ে তখন সন্ধ্যে নামছে। এখানে যুবকের দলের প্রশ্ন, ‘‘এখানে কী দরকার? জানেন না সকালে কত ঝামেলা হয়েছে! এক্ষুনি এখান থেকে চলে যান। এ পর্যন্ত এলেন কী ভাবে?’’
সঙ্গী চিত্রসাংবাদিক জ্যাকেটের মধ্যে ক্যামেরা লুকিয়ে রেখেছিলেন। তা নজর এড়ায়নি যুবকদের। তাঁর শরীর থাবড়ে ক্যামেরার অস্তিত্ব বুঝে তা কেড়ে নিতে কালবিলম্ব করেননি কয়েক জন। ‘কী ছবি তোলা হয়েছে দেখি’ বলে ক্যামেরা থেকে চিপ বার করে নিলেন। পরে ক্যামেরা ও চিপ নিয়ে স্রেফ সরে পড়লেন।
বাকি যুবকদের আক্রোশ তখন তুঙ্গে। শাসালেন, কোনও ভাবেই ‘দাদা’-র বাড়ির কোনও ছবি তোলা যাবে না। ‘দাদা’-কে ফাঁসাতে বিরাট চক্রান্ত চলছে। ইডি টাকার মেশিন এবং প্রচুর টাকা-ভরা বস্তা নিয়ে এসেছিল। ওই বস্তা বাড়িতে রেখে বলা হত, টাকা ‘দাদা’-র বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের দাবি, কোনওরকম নোটিস ছাড়াই এসে দরজায় গুলি করে দরজা ভাঙার চেষ্টা করছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। আকুঞ্জিপাড়ার লোকেরা রেগে গিয়ে বাধা দিয়েছেন। ‘দাদা’-র বাড়িতে ফের যদি ইডি বা কেন্দ্রীয় বাহিনী ঢুকতে যায়, আবার সব শক্তি দিয়ে বাধা দেওয়া হবে।
অনেক অনুরোধে ক্যামেরা ফেরত পেলেও ধাক্কা দিয়ে এক যুবক বললেন, ‘‘এখানে আর এক মিনিটও দাঁড়াবেন না। দাঁড়ালে আর কোনও দায়িত্ব নিতে পারব না। সোজা চলে যান সরবেড়িয়া মোড়ে।’’ সঙ্গী চিত্রসাংবাদিক জানালেন, চিপ থেকে সব ছবি মুছে ফেরত দিয়েছে ক্যামেরা।
সরবেড়িয়া মোড়ে এসে মনে হল যেন কোনও নিষিদ্ধ এলাকা থেকে ঘুরে এলাম। সন্ধ্যা নেমে যাওয়ায় সরবেড়িয়া মোড়ে যে ক’টা দোকানপাট খোলা ছিল সেগুলিও তখন বন্ধ হতে শুরু করেছে। কয়েক বিঘা জমির উপর ‘শেখ শাহজাহান মার্কেট’-এর সামনে যুবকদের জটলা। ২০১১ সালে এই বাজার শাহজাহানই নিজের নামে তৈরি করেছিলেন। সেই বাজারের সামনে থেকে উড়ে এল এক যুবকের কণ্ঠ, ‘‘মার্কেটের ভিতরেই থাক সবাই। রাতেও সতর্ক থাকতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে দাদার বাড়ির দিকে গেলেই ফের অ্যাকশান।’’ ফেরার পথে বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে শাঁ শাঁ করে ছুটল আমাদের গাড়ি। শুনলাম, এই পথেই প্রাণ বাঁচাতে সকালে ইডির অফিসার ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে পড়িমড়ি করে ফিরেছেন ইডির চালকও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy