বিজেপি-র জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র ও রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।
বুধবার কলকাতায় আসছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। দু’দিনের সফরে বুধবার কলকাতা ও বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবারে ঠাসা কর্মসূচি তাঁর। এর মধ্যে নির্বাচনী প্রচার যেমন রয়েছে, তেমনই সাংগঠনিক বৈঠক রয়েছে। সফরের দু’দিন আগেই কলকাতায় এসে গিয়েছেন বিজেপি-র অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। সোমবার কলকাতায় এসেই দলের রাজ্য মিডিয়া বিভাগের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন তিনি। লক্ষ্য, সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নড্ডার সফরের প্রচার যেন ঠিকঠাক হয়। তবে তিনি সামনে আসছেন না। রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্তরাই সারছেন সব কাজ। তবে সবটাই হচ্ছে সম্বিতের নির্দেশ মতো।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা বুঝেছেন, নীলবাড়ির লড়াইয়ে এখনও পর্যন্ত সাংগঠনিক ধারে-ভারে অনেকটাই এগিয়ে শাসক তৃণমূল। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে লড়াই দিতে প্রচারকে শক্তিশালী হাতিয়ার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলার ‘মিডিয়া বিভাগ’ কেমন কাজ করবে নির্বাচনের অনেক আগে নড্ডার সফর ঘিরে তারই পরীক্ষা চলছে। এক রাজ্য নেতার কথায়, “এটা হোমটাস্ক। সম্বিত সোমবারের বৈঠকে বুঝিয়ে দিয়েছেন ঠিক কখন কী করতে হবে। এই দু'দিনের কাজ দেখার পরে তিনি হয়তো বলবেন আরও কী কী এবং কী ভাবে করা দরকার।” ওই নেতা আরও জানান, এর জন্য নির্বাচনের আগে আরও কয়েকবার রাজ্যে আসতে পারেন সম্বিত।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে যেন সমরাঙ্গন বানাতে চান বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর সেই যুদ্ধে সব বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন সেনাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নভেম্বরেই তিনি এক দফা বঙ্গ সফর সেরে গিয়েছেন। এবার নড্ডার সফর। ২৪ ডিসেম্বর রাজ্যে আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই সফরে মোদীর কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও সক্রিয় থাকতে হবে রাজ্য বিজেপি-র মিডিয়া বিভাগকে। বিজেপি সূত্রে যা খবর, তাতে এর পর নির্বাচন পর্যন্ত ঘন ঘন মোদী-শাহ-নড্ডারা আসবেন রাজ্যে। আসবেন অন্য কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রীরাও। এ ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রচার পর্ব চালিয়ে যেতে হবে মিডিয়া বিভাগকে। সেই কারণেই সোমবার রাজ্য নেতাদের নিয়ে এক প্রস্থ প্রস্তুতি বৈঠক সেরেছেন সম্বিত। যেখানে উপস্থিত অনেকের কথায়, এটা ছিল প্রশিক্ষণ।
সম্বিত পাত্রের সঙ্গে রাজ্য নেতাদের বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।
এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের দলে প্রশিক্ষণ নতুন কিছু নয়। সেটা সব সময় চলতে থাকে। ‘হোমটাস্ক’ বলে কিছু নয়। সর্বভারতীয় সভাপতির সফরের প্রচার কী ভাবে হবে তা নিয়ে সম্বিত পাত্র বৈঠকে কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। আর সব সময় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরামর্শ নিয়ে কাজ করাটাই বিজেপির পরম্পরা।”
আরও পড়ুন: ‘হাউডি মোদী’র কারিগর বিজয়ও নীলবাড়ির লক্ষ্যে বিজেপি-র সৈনিক
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারের বৈঠকে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র, মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও ছাড়াও ডাকা হয়েছিল বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে দলের হয়ে রাজনৈতিক বিতর্কে যোগ দিতে যান এমন নেতা, কর্মীদের। সেখানেই বিভিন্ন ইস্যুতে কী ভাবে কথা বলতে হবে বা সংবাদমাধ্যমের কাছে দলের পক্ষে যায় এমন খবরাখবর পৌঁছতে হবে সে ব্যাপারে যাবতীয় নির্দেশ দিয়েছেন সম্বিত।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এমন নির্দেশও বঙ্গ বিজেপি-র কাছে এসেছে যে, নতুন নতুন বক্তা তৈরি করতে হবে। শুধু টিভি চ্যানেল নয়, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলেও বিজেপি-র হয়ে বক্তব্য রাখার জন্য বা বিতর্কে অংশ নিতে কমবয়সিদের নিয়ে দল গড়তে হবে। শুধু কলকাতাকেন্দ্রীক নয়, জেলা স্তরেও চাই ভাল বক্তা। এমনটাও বলা হয়েছে যে, এই দলের সদস্যদের গড় বয়স যেন ৪০-এর বেশি না হয়। প্রতিটি ইস্যুতে যাতে তাঁরা কথা বলতে পারেন তার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণও চালাতে হবে। শুধু বর্তমান নয়, অতীত রাজনীতি সম্পর্কেও তাঁদের ওয়াকিবহাল করে তুলতে হবে।
আরও পড়ুন: বিজেপি নিজের মিছিলে নিজেই লোক মারে, বললেন মমতা
রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাজেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় ভূমিকা থাকবে। বাংলার নির্বাচনকে মোদী-শাহরা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন তা স্পষ্ট হয়ে যায় দলের কেন্দ্রীয় আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যকে বাংলার সহ-পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠানো থেকেই। এর পরেই কেন্দ্রীয় স্তরের এবং ভিনরাজ্যে সফল নেতাদের রাজ্যের বিভিন্ন দায়িত্বে পাঠানো হয়েছে। এ বার সেই তালিকায় কি সম্বিত পাত্রের নামও যুক্ত হল? প্রশ্ন রাজ্য বিজেপি-র অন্দরেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy