Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Salt Lake

ব্যাঙ্ক থেকে উধাও টাকা আদায় সাইবার কোর্টে

অনলাইনে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও গ্রাহক সাইবারকুশল অপরাধীদের খপ্পরে পড়ছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:২৭
Share: Save:

প্রায় ছ’বছর আগে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল জালিয়াতেরা। টানা মামলা লড়ে অবশেষে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কাছ থেকে সেই টাকা আদায় করলেন সল্টলেকের বাসিন্দা কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়। রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সাইবার অ্যাডজুডিকেশনের বিচারক তথা তথ্যপ্রযুক্তি সচিব রাজীব কুমার সোমবার নির্দেশ দেন, ১৪ দিনের মধ্যে কাঞ্চনবাবুকে ৬০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য থাকবে ওই ব্যাঙ্ক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই টাকা না-দিলে ব্যাঙ্কের উপরে বার্ষিক ১২ শতাংশ হারে সুদ চাপানো হবে।

অনলাইনে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও গ্রাহক সাইবারকুশল অপরাধীদের খপ্পরে পড়ছেন। অভিযোগ, এই ধরনের অধিকাংশ জালিয়াতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায়দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলছে ব্যাঙ্ক। কিন্তু কাঞ্চনবাবুর মামলায় দেখা গিয়েছে, ব্যাঙ্কের দোষেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট হয়ে গিয়েছিল।

কাঞ্চনবাবুর আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর মক্কেল একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের গ্রাহক ছিলেন এবং তিনি ডেবিট কার্ড ব্যবহার করতেন। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি এক দিন তিনি দেখেন, তাঁর ৬৭ হাজার টাকা লোপাট হয়ে গিয়েছে। অথচ তাঁর কাছে ওই টাকার লেনদেন সংক্রান্ত কোনও ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি কখনওই আসেনি। তিনি এই বিষয়ে বিধাননগর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশি তৎপরতায় সাত হাজার টাকা উদ্ধার হলেও বাকি ৬০ হাজার টাকার হদিস মেলেনি। তার পরেই তথ্যপ্রযুক্তি দফতরে অভিযোগ দায়ের করেন কাঞ্চনবাবু।

ব্যাঙ্ক অবশ্য আদালতে জানায়, তারা কোনও ওটিপি পাঠায়নি। কারণ, কাঞ্চনবাবুর লেনদেন থ্রি-ডি পিনের মাধ্যমে হয়েছে। কিন্তু বিভাসবাবু জানান, থ্রি-ডি পিনের জন্যও ওটিপি আসে। তিনি ওই ব্যাঙ্কের কাছে কাঞ্চনবাবুকে পাঠানো ওটিপি-র লগ বা সংরক্ষিত তালিকা দেখতে চান। কিন্তু ব্যাঙ্ক তা দিতে পারেনি। এর পরে ব্যাঙ্ক লেনদেন সংক্রান্ত দু’টি ইন্টারনেট প্রোটোকল (আইপি) অ্যাড্রেস জমা দেয়। বিভাসবাবু জানান, তিনি আদালতে প্রমাণ করে দেন যে, ওই দু’টি আইপি অ্যাড্রেস বিদেশের এবং তাঁর মক্কেলের আইপি অ্যাড্রেস এ দেশের সংস্থার। অর্থাৎ কাঞ্চনবাবু কখনওই ওই লেনদেন করেননি।

এ দিন বিচারক তাঁর রায়ে লিখেছেন, গ্রাহক থ্রি-ডি পিন ব্যবহার শুরু করলেও ব্যাঙ্কের আইনজীবী প্রমাণ করতে পারেননি যে, ওই পিন ব্যবহারের বিষয়ে গ্রাহককে যথেষ্ট পরিমাণে সচেতন করা হয়েছিল। বাস্তবে গ্রাহকের টাকা অধিক নিরাপদ করতেই এই পিন ব্যবহার করা হয়। এমনকি গ্রাহক নিজেই টাকা তুলেছেন বলে ব্যাঙ্ক যে-দাবি করছিল, সেটাও প্রমাণ করতে পারেননি ব্যাঙ্কের আইনজীবী। বরং আইপি থেকে প্রমাণ হয়, লেনদেনে যে-মোবাইল ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি গ্রাহকের নয়।

রায়ের প্রতিলিপি হাতে পেয়ে বিভাসবাবু জানান, অনলাইনে টাকা লোপাট হলেই দায়ী করা হয় গ্রাহকের অসচেতনতাকে। কিন্তু এই মামলা প্রমাণ করে দিল, বহু ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের গাফিলতিতেও গ্রাহকের ক্ষতি হয়। ‘‘এ ক্ষেত্রে হতে পারে যে, ব্যাঙ্ক বা ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত কোনও সংস্থার কাছ থেকেই ওই গ্রাহকের ব্যক্তিগত ও গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছিল। এবং তার মাধ্যমেই জালিয়াতেরা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে,” বলেন বিভাসবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

Salt Lake Bank Cyber ​​Court Cyber Crime Online Fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy