Advertisement
E-Paper

সময়ে বাঁচাতে আসেনি পুলিশ, শুনে এলেন সেলিম-অধীর

ধুলিয়ানের জাফরাবাদ এবং সুতির কাসেমনগরে নিহত তিন জনের বাড়িতে সোমবার গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও দলের অন্য নেতারা।

মুর্শিদাবাদে আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে দেখা করতে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী।

মুর্শিদাবাদে আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে দেখা করতে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:২৯
Share
Save

এক জন মুর্শিদাবাদে গোলমালের এলাকায় ঘুরে এসেছেন। অন্য জন পরের দিন গেলে সেই এলাকায়। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হলেন দু’জনেই। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম কলকাতায় ফিরে মুর্শিদাবাদের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন। আর শমসেরগঞ্জে গিয়ে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর আবেদন, বিভাজনের রাজনীতির ফাঁদে যেন কেউ পা না দেন। জঙ্গিপুরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্থিতির খোঁজ নিন, সেই দাবিও করেছেন কংগ্রেস নেতা।

ধুলিয়ানের জাফরাবাদ এবং সুতির কাসেমনগরে নিহত তিন জনের বাড়িতে সোমবার গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও দলের অন্য নেতারা। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতরে মঙ্গলবার সেলিম জানিয়েছেন, নিহতদের দু’টি পরিবারের বাচ্চাদের পড়াশোনা এবং স্বামী হারানো দুই মহিলার জন্যআর্থিক সহায়তার ভার দল নেবে। তার জন্য মানুষের কাছে চাঁদা তোলা হবে। তাঁর বক্তব্য, নিহতদের পরিবার এবং স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের জানিয়েছেন, হামলার সময়ে খবর দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ আসেনি।

একই সুর শোনা গিয়েছে অধীরের কথাতেও। বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ এ দিন বলেছেন, ‘‘আমি গিয়েছিলাম জাফরাবাদে। আমাকে বলল, ‘চার-পাঁচ ঘণ্টা ধরে পুলিশকে ডেকে ডেকে পাইনি আমরা’। গন্ডগোলের দিন সবাইকে পাওয়া গিয়েছে, শুধু পুলিশকে পাওয়া যায়নি! পুলিশ ডেকে নিয়ে এসেছে বিএসএফকে। অনেকের সন্দেহ হয়েছে, বিএসএফের পোশাক পরে কেউ গুলি চালিয়েছে।’’ আর কলকাতায় সেলিমের বক্তব্য, ‘‘আক্রান্ত বিভিন্ন এলাকায় সব ধরনের মানুষের অভিযোগ, পুলিশ সময়মতো আসেনি। থানা থেকে গাড়িতে ১০ মিনিটে যেখানে যাওয়া যায়, সেখানে পুলিশ পৌঁছেছে সাড়ে তিন ঘণ্টা বাদে।’’ তাঁর দাবি, ওই পাড়ায় মানুষ হামলাকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলেই বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক দাবি করেছেন, ‘‘পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ পুরোপুরি ব্যর্থ। হাই কোর্টের কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক।’’

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের পাল্টা দাবি, ‘‘বিজেপি যে হিংসা ছড়ানোর চক্রান্ত করেছে, তাকে আড়াল করতেই কংগ্রেস ও সিপিএম রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে। মানুষের অভিজ্ঞতা ভিন্ন।’’ সিপিএম ও কংগ্রেস নেতাদের পাল্টা প্রশ্ন, তাঁরা এলাকায় মানুষের কাছে পৌঁছে গেলেও কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের নেতারা কোথায়!

আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে অধীর এ দিন বলেছেন, ‘‘শমসেরগঞ্জের মানুষ, মুর্শিদাবাদের মানুষের কাছে আমার হাতজোড় করে অনুরোধ, ভাগাভাগি করতে দেবেন না। ব্রাহ্মণ সন্তান প্রণব মুখোপাধ্যায়কে এই ধুলিয়ানের মানুষ ভোট দিয়ে সাংসদ করেছিল। সেই ধুলিয়ানের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি বিশ্বাস করি না, মুর্শিদাবাদের মানুষ সাম্প্রদায়িক হয়ে গিয়েছে।’’

হাসপাতালে ভর্তি আহতদের দেখতেও গিয়েছিলেন অধীর। একাধিক ব্যক্তির যে গুলি-সহ গুরুতর আঘাত রয়েছে, সে সব প্রসঙ্গ তুলেই অধীরের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ যদি চাইতো, এ ঘটনা ঘটত না। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন তারা চাইল না? শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে কোন অপশক্তি কী ভাবে একে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা করল, সেটার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার।’’

পুলিশমন্ত্রী মমতাকে ফের ‘ব্যর্থ’ আখ্যা দিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন তমলুকে দাবি করেছেন, ‘‘বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠন এখানে কাজ করছে। অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকছে। দেশের স্বার্থে মমতাকে হটানো প্রয়োজন।’’ তমলুকে একটি কর্মসূচিতে গিয়েই আইএসএফের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী অধীর-সেলিমের সুরেই অভিযোগ করেছেন, ‘‘যেখানে সক্রিয় হওয়া দরকার ছিল, সেখানে পুলিশ নিষ্ক্রিয়। আর যেখানে (ভাঙড়) পুলিশের ঠান্ডা থাকা দরকার, সেখানে অতি সক্রিয়। চাকরি বাতিলের ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতে এই সব করার চেষ্টা হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Adhir Ranjan Chowhury Mohammed Selim

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}