Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Department of Fisheries

মৎস্য নিগমে সাত মাস বেতন বন্ধ চুক্তিকর্মীদের, উত্তর এড়ালেন মৎস্যমন্ত্রী

বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ছাড়াও খেলা-মেলা-উৎসবে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ কর্মীরা কাজ করেও বেতন পাবেন না কেন? এর উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন মৎস্যমন্ত্রী।

রাজ্যের মৎস্য দফতরের অধীনে রয়েছে মৎস্য উন্নয়ন নিগম।

রাজ্যের মৎস্য দফতরের অধীনে রয়েছে মৎস্য উন্নয়ন নিগম। প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৬
Share: Save:

স্থায়ী চাকরি নয়। চুক্তির চাকরি। কাজ করলে তবেই তাঁরা টাকা পান নির্দিষ্ট হারে। কিন্তু রাজ্য সরকারের এমনই ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ দশা যে, কাজ করেও জেলায় জেলায় নিযুক্ত মৎস্য দফতরের সহস্রাধিক চুক্তিভিত্তিক কর্মী বেতন পাচ্ছেন না সাত মাস ধরে।

কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অর্থ খরচই করে উঠতে পারছে না নবান্ন। অথচ রাজ্য সরকারে রাজকোষের দুর্দশার ছায়া এ ভাবেই পড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, মায় মৎস্য দফতরের বিভিন্ন শাখা সংস্থাতেও। রাজ্যের মৎস্য দফতরের অধীনে রয়েছে মৎস্য উন্নয়ন নিগম। বিভিন্ন জেলায় সেই নিগমের ১৬টি প্রকল্পে মাছ চাষ হয়, আছে অতিথিনিবাসও। সেই সব প্রকল্পে কর্মরত এক হাজারেরও বেশি চুক্তিকর্মী দীর্ঘ কাল ধরে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। বস্তুত বিষয়টি আর নিছক অভিযোগের স্তরে আটকে নেই। ওই কর্মীদের বেতন বাকি পড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘অর্থের অভাবে টাকা দিতে পারছি না। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে টাকা পেলেই দেওয়া হবে। তখন শোধ করা হবে কর্মীদের বকেয়া টাকাও।’’

বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ছাড়াও খেলা-মেলা-উৎসবে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ কর্মীরা কাজ করেও বেতন পাবেন না কেন? এর উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন মৎস্যমন্ত্রী।

পূর্ব মেদিনীপুরের আলমপুর, দিঘা, শঙ্করপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ, হেনরি আইল্যান্ড, পূর্ব বর্ধমানের যমুনাদিঘিতে নিগমের মাছ চাষের প্রকল্প রয়েছে। ফি-বছর নিগমের স্থায়ী কর্মীরা অবসর নিলেও নতুন নিয়োগ নেই। দৈনিক মজুরি-ভিত্তিক কর্মীরাই ভরসা। কার্যত যাঁদের ‘দিন আনি দিন খাই’ দশা, সেই গরিব, অতি নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষগুলি এত দিন পারিশ্রমিক না-পেয়ে আতান্তরে পড়েছেন। তাঁদের অনেকের অনাহারে দিন কাটছে বলে অভিযোগ।

দিঘা প্রকল্পে কর্মরত এক কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘বাবার পেনশনের টাকায় কোনও ক্রমে দু’বেলা ভাত জুটছে। অনেক দেনা হয়ে গিয়েছে। বাচ্চার খাবার, ওষুধের জন্য ধার করতে হচ্ছে। বাবা-মা অসুস্থ। ওঁদেরও ওষুধ খেতে হয়।’’ যমুনাদিঘির এক কর্মীর খেদ, ‘‘সরকারের কাজ করছি বলে আশা করি, ধীরে ধীরে বকেয়া টাকা পাব। কিন্তু কবে পাব, জানি না। দোকানে, বাজারে মোটা টাকা দেনা হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে রোজ লোকজন টাকা চাইতে আসছেন। আতঙ্কে দিন কাটছে।’’ হকের টাকা না-পেয়ে হতাশ অন্যান্য প্রকল্পে কর্মরত কর্মীরাও।

মাসের পর মাস বেতন বকেয়া পড়ে যাচ্ছে, তবু এই কাজ করছেন কেন? অন্য কাজ কেন খুঁজছেন না? ‘‘এই বয়সে আর কোথায় কাজ পাব? বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়াও স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। আশা করি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আমাদের প্রতি সদয় হবেন। সেই আশায় টাকা ছাড়াই এখনও কাজ করছি,’’ বললেন বীরভূমের এক কর্মী। মৎস্য নিগম সূত্রের খবর, বহু কর্মী বাস বা অটো ভাড়া, মোটরবাইকের তেল খরচ করে কাজে আসছেন। ওঁদের আশা, সরকার সমস্ত বকেয়া শোধ করে দেবে।

অথচ বছর চারেক আগে পর্যন্ত মৎস্য নিগমের হাল এতটা খারাপ ছিল না। এক সময় অনলাইনে কাঁচা মাছ, রান্না করা মাছ বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মেলা ও উৎসবে স্টল দিয়ে তাদের ভালই আয় হত। নিগম সূত্রের খবর, অতিমারির পাশাপাশি অনিয়মের ধাক্কায় নিগমের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। কর্মীদের পাওনা মেটানো হবে কী ভাবে? ‘‘বিভিন্ন প্রকল্পের নিজস্ব আয় থেকে কর্মীদের টাকা পরিশোধের চেষ্টা চলছে,’’ আশ্বাস দিয়েছেন মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শুভময় ভট্টাচার্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Salary Fishery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy