স্বস্তি এখনও অধরা। —ফাইল চিত্র।
কাননে কমল ফুটেছে ঠিকই। কিন্তু স্বস্তি এখনও অধরা। ফের স্পষ্ট হয়ে গেল ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’র দায়িত্ব বণ্টনকে কেন্দ্র করে। বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়রকে দেওয়া হল কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের খাসতালুকের দায়িত্ব।
রবিবার রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’র সময়সূচি ঘোষণা করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিজেপির সাংসদ এবং বিধায়করা তো বটেই, এ বারের লোকসভা নির্বাচনে যে বিজেপি প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন, নিজের নিজের আসনে তাঁরাও ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’য় নেতৃত্ব দেবেন বলে দিলীপ এ দিন জানান। শুধু যাদবপুর এবং ডায়মন্ড হারবারের দায়িত্ব দুই রাজ্যসভা সাংসদকে দেওয়া হচ্ছে বলে আলাদা করে উল্লেখ করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি। কিন্তু দক্ষিণ কলকাতার ক্ষেত্রেও যে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে কথা আর ঘোষণায় আসেনি। এবং দক্ষিণ কলকাতার এই ব্যতিক্রম বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
এ বারের লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপির প্রার্থী ছিলেন চন্দ্র বসু। তিনি রাজ্য বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতি ঠিকই। কিন্তু চন্দ্র বসুর সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে বিজেপির অন্দরে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। ফলে দক্ষিণ কলকাতায় ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’ পরিচালনার দায়িত্ব চন্দ্রকে না দেওয়া নিয়ে কেউ তেমন বিস্মিত নন। কিন্তু বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র তথা রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত দক্ষিণ কলকাতার দায়িত্ব পাওয়ায় অনেকেই খানিকটা অবাক হয়েছেন।
আরও পড়ুন: রাজ্য জুড়ে ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’ ঘোষণা বিজেপির, বিশেষ নজর যাদবপুর-ডায়মন্ড হারবারে
বিধাননগর, নিউটাউন, রাজারহাট— মূলত এই এলাকার নেতা হিসেবেই পরিচিত সব্যসাচী। উত্তর ২৪ পরগনার রাজনীতির সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ বেশি। কিন্তু সে সব ছেড়ে তাঁকে সরাসরি দক্ষিণ কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’র দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপিতে কোনও বড় নেতা নেই, এমন কিন্তু নয়। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায় এখন বিজেপিতে। আর বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার পুরোটাই হাতের তালুর মতো চেনেন শোভন। তাঁকে দায়িত্ব না দিয়ে বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়রকে যাত্রার পুরোভাগে রাখা তা হলে কেন? এটা কি শোভনকে কোনও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা?
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, এর মধ্যে কোনও বিশেষ বার্তা নেই। আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়ার ব্যাপার নয়। শোভন চট্টোপাধ্যায় এখন কলকাতায় নেই, বাইরে রয়েছেন। ফিরলে কথা বলে ঠিক করা হবে।’’
আরও পড়ুন: গুলি করল কে? আড়াল করছে পুলিশই! দাবি গিরিশ পার্ক কাণ্ডে বেকসুর খালাস গোপাল তিওয়ারির
শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় যে এই মুহূর্তে কলকাতার বাইরে রয়েছেন, সে কথা ঠিক। কিন্তু দক্ষিণ কলকাতায় ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’র দায়িত্ব শোভনকে না দেওয়ার একমাত্র কারণ তা নয় বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অমিত শাহের সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দিলীপ ঘোষ ফোন করেছিলেন বলে বিজেপির একটি অংশের দাবি। কিন্তু শোভন শেষ পর্যন্ত উপস্থিত হতে পারেননি সে সভায়। তার জেরেই শোভনকে আপাতত কর্মসূচির দায়িত্ব দিলীপরা দেননি বলে বিজেপির ওই অংশ মনে করছে।
তবে শোভন ঘনিষ্ঠদের দাবি, অমিত শাহের সভায় যেতে না পারা নিয়ে কোনও সংশয়ের অবকাশ দলের মধ্যে নেই। যে দিন অমিত শাহের সভা হয়েছিল, সে দিন সকালে জয়প্রকাশ মজুমদারের ফোন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছিলেন বলে শোভনের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত জানাচ্ছে। কিন্তু নিজের কলেজে বৈশাখী সে দিন এক সহকর্মীর হাতে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন এবং তাঁকে থানায় ছুটতে হয়েছিল বলে সে দিন তাঁরা ইন্ডোরে যেতে পারেননি। সে কথা বিজেপির নেতৃত্বও জানেন বলে শোভন ঘনিষ্ঠদের দাবি।
তা হলে কি ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’য় দক্ষিণ কলকাতার দায়িত্ব না পেয়ে অসন্তুষ্ট শোভন? কলকাতার প্রাক্তন মেয়র নিজের প্রতিক্রিয়ায় কিন্তু তেমন কিছু বুঝতে দেননি। শিলং থেকে ফোনে তিনি এ দিন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমি বাইরে রয়েছি। কিন্তু আমার জন্য তো দলের কার্যক্রম আটকে থাকতে পারে না। কাউকে দায়িত্ব দিতেই হত। সব্যসাচী ভাল ছেলে। তিনি দক্ষিণ কলকাতার দায়িত্ব পাওয়ায় ভালই হয়েছে।’’
আর সব্যসাচী দত্ত নিজে কী বলছেন? তাঁর কথায়, ‘‘দলের রাজ্য নেতৃত্ব আমাকে জানিয়েছেন। দক্ষিণ কলকাতার নেতাদের ফোন নম্বরও আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। পরে দক্ষিণ কলকাতা বিজেপির সভাপতি নিজেই আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছেন, যখন কর্মসূচি হবে, আমাকে ডেকে নেওয়া হবে।’’
সব্যসাচীর এই মন্তব্যে কিন্তু বিশেষ তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। দক্ষিণ কলকাতার দায়িত্ব যদি সব্যসাচী দত্ত পেয়ে থাকেন, তা হলে কর্মসূচি পালনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার বিষয়ে তাঁর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার কথা। কিন্তু সব্যসাচীর মন্তব্যেই বোঝা গিয়েছে যে, দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপি-ই যা করার করছে। তাঁকে শুধু সব জানিয়ে দেওয়া হবে বা ডেকে নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: রূপান্তরকামীর সঙ্গে অশালীন আচরণ! লিঙ্গ পরিচয় প্রমাণ করতে বলল জিআরপি
তা হলে কি দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির নেতারা এখনও শোভনকে সামনে রাখতে প্রস্তুত নন? রাজ্য বিজেপির একাংশও কি শোভনের বিষয়ে এখনও দ্বিধায়? সেই কারণেই কি ঢাল হিসেবে সব্যসাচীকে সামনে রেখে ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’র প্রস্তুতির দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হল জেলা কমিটির নেতাদের হাতে?
রাজ্য বিজেপির সভাপতি কোনও অস্বস্তি বা দ্বিধার কথা স্বীকার করছেন না। কিন্তু বিজেপির-ই একটি অংশের দাবি, এই মুহূর্তে দলের অন্দরের মন কষাকষি প্রকাশ্যে আসতে দিতে চাইছেন না দিলীপ ঘোষ। তাই শোভন চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে কোনও বিরূপ মন্তব্য তিনি করেননি। ঠিক একই কারণে শোভনও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগার রাস্তায় হাঁটেননি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
দু’পক্ষেই এই সংযম নিঃসন্দেহে বিজেপির পক্ষে স্বাস্থ্যকর। কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর নতুন দলের রাজ্য নেতৃত্বের টানাপড়েনে যে এখনও পুরোপুরি ইতি পড়েনি, তা-ও আর এক বার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy