প্রতীকী ছবি
রাজ্যে জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার নতুন অনলাইন পোর্টাল চালু হয়েছে গত মে মাস থেকে। সেখানে নতুন নিয়মে প্রতিটি মৃত্যু নথিভুক্ত করতে গেলে রোগীকে মৃত বলে চিহ্নিত করেছেন এমন এক জন এমবিবিএস বা আয়ুষ চিকিৎসকের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর আপলোড করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সেই রেজিস্টার্ড চিকিৎসক জোটাতেই প্রশাসনের হিমশিম খাচ্ছে। কোনও উপায় না-দেখে একাধিক পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামীণ চিকিৎসকদেরই (যাঁরা আগে হাতুড়ে বলে পরিচিত ছিলেন) মৃত্যুর ঘোষণাপত্র লিখে দিতে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবকে বিষয়টি নিয়ে চিঠি দিয়েছে গ্রামীণ চিকিৎসকদের একটি সংগঠন।
এত দিন পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়িতে কেউ মারা গেলে ২১ দিনের মধ্যে বাড়ির লোক আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড নিয়ে নিকটবর্তী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতেন, সেখান থেকে একটি হলুদ রঙের ফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে দেওয়া হত। স্থানীয় পঞ্চায়েতে সেই ফর্ম দেখালে পঞ্চায়েত ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে দিত। সেখানে চিকিৎসকের উপস্থিতির প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু নতুন নিয়মে চিকিৎসকের ঘোষণাপত্রের পাশাপাশি নাম এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর আবশ্যিক। গ্রামীণ চিকিৎসক সংগঠনগুলির দাবি, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের আকাল থাকায় তাঁদের মৃত্যুর ঘোষণাপত্র দিতে চাপ দিচ্ছে পঞ্চায়েতগুলি। ওই পোর্টালে গ্রামীণ চিকিৎসকদের নামের পাশাপাশি তাঁরা যে সংস্থা থেকে হাতেকলমে চিকিৎসার পাঠ নিয়েছেন সেই সংস্থার রেজিস্ট্রেশন নম্বরকেই চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পঞ্চায়েতের চাপে এই ভাবে পোর্টালে ডেথ সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রে তাঁদের নাম নথিভুক্ত হয়ে গেলে ভবিষ্যতে তাঁরা বিপদে পড়তে পারেন আশঙ্কা করে গত ৮ জুন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের কাছে একটি চিঠি দিয়ে এর সুরাহা চেয়েছে ‘পল্লি চিকিৎসক সংগঠন।’ আবার ‘প্রোগ্রেসিভ রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ নামে গ্রামীণ চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের তরফে দিলীপকুমার পানের কথায়, ‘‘সরকার আমাদের বৈধ রেজিস্ট্রেশন দেবে না। আবার পঞ্চায়েত আমাদের নাম ডেথ সার্টিফিকেটে জুড়তে চাইবে, এটা তো হয় না। সমস্যা হলে পুলিশ তো আগে আমাদের ধরবে। তাই স্বাস্থ্য সচিবকে অনুরোধ করছি, আমাদের বৈধ রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হোক।’’
গ্রামীণ চিকিৎসকদের সংগঠনগুলির দাবি, পঞ্চায়েতের সঙ্গে রাজনৈতিক চাপও আছে। তাই গ্রামীণ চিকিৎসকেরা এই কাজে ‘না’ বলার সাহস পাচ্ছেন না। এই ঘটনাকে ‘বিপজ্জনক এবং বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে ‘প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’ নামে সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন সাংসদ তরুণ মণ্ডল বলছেন, ‘‘এ রকম চললে তো ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কারণে কাউকে খুন করা হলে সেটা ধামাচাপা দিতেও এই ভাবে গ্রামীণ চিকিৎসকদের চাপ দিয়ে মৃত্যুর শংসাপত্র বের করে নেওয়া হতে পারে!’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের জগন্নাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব সনাতন গুঁই বলেন, ‘‘আমাদের এখানে রেজিস্টার্ড ডাক্তার কোথায়? এই নিয়মে বাড়িতে কেউ মারা গেলে তাঁর বাড়ির লোক তো ডেথ সার্টিফিকেটই বের করতে পারবেন না। তাই গ্রামীণ চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছি যে, ওঁরা যেন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাঙাবেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ভারতী গায়েন বলেন, ‘‘আমাদের ওখানে এমবিবিএস ডাক্তার নেই। তাই আমরা গ্রামীণ চিকিৎসকদেরই বলেছি কাজটা করতে। ওঁরা যে ইনস্টিটিউশন থেকে ট্রেনিং নিয়েছে তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর পোর্টালে তোলা হবে।’’
বীরভূমের বড়়শাল পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, তাদের চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে একটিতে কালেভদ্রে ডাক্তার আসেন। বাকি সব গ্রামীণ চিকিৎসক। তাই কেউ মারা গেলে কোন চিকিৎসক তা ঘোষণা করবেন তাঁরা জানেন না। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বালি-২ পঞ্চায়েতের প্রধান সুব্রত মণ্ডলের কথায়, ‘‘ভৌগোলিক কারণেই বালি, পাথরপ্রতিমা, গোসাবা ব্যতিক্রমী এলাকা। এখানে মৃত্যু ঘোষণার জন্য রেজিস্টার্ড ডাক্তার পাওয়া কার্যত দুঃসাধ্য। অন্তত এই জায়গাগুলিতে যাতে নিয়মের সরলীকরণ করে গ্রামীণ চিকিৎসকদের ছাড় দেওয়া হয় সে ব্যাপারে বিডিও ও ডিএমকে অনুরোধ জানিয়েছি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy