রুম্পা দাস। নিজস্ব চিত্র
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন তাঁর ছোট্টবেলার। বিয়ের পরে সেই স্বপ্নটা যেন আরও গতি পায়। স্বামী সুমন বসু পাহাড় ভালবাসেন। সময় আর সুযোগ পেলেই ট্রেক করতে বেরিয়ে পড়েন। বিয়ের পরে সঙ্গী রুম্পাও।
সেই শুরু। এর পরে কৃষ্ণনগরে পর্বতারোহীদের সংস্থা ‘মাউন্টেনারিং অ্যাসোসিয়েশন অব কৃষ্ণনগর’ (ম্যাক)-এর সঙ্গে যোগাযোগ রুম্পার। শুরু হল প্রশিক্ষণ। তার পর একের পর এক কঠিন পর্বতশৃঙ্গকে জয় করা। সংস্পর্শে এলেন অসামরিক ক্ষেত্রে প্রথম বাঙালি এভারেস্টজয়ী বসন্ত সিংহ রায়ের। একটু একটু করে তৈরি করলেন নিজেকে। পাঁচ বছরে জয় করলেন সাতটি শৃঙ্গ।
এ বার গন্তব্য এভারেস্ট।
বেশ কিছুদিন টানাপড়েনের পরে এক রাতে বসন্তকে ফোনটা করেই ফেলেছিলেন রুম্পা, “স্যর, আমি কি এভারেস্ট অভিযানে যেতে পারি?” বসন্ত চিন্তা করেছিলেন দিন দুই। তার পর এসেছিল উত্তর, “তুমি পারবে। তোমার সেই দক্ষতা আছে।”
আর কোনও দিকে তাকাননি রানাঘাটের নাশরা কলোনির বাসিন্দা, বছর আটত্রিশের স্কুলশিক্ষিকা রুম্পা দাস। শুরু করে দেন এভারেস্ট অভিযানের যাবতীয় প্রস্তুতি। সকালে মাঠে টানা দেড় ঘন্টা দৌড়, বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে এক ঘণ্টা জিমে বিশেষ অনুশীলন। যোগব্যায়াম করে তৈরি করছেন মন। কিন্তু শুধু তৈরি হলেই তো হবে না। প্রায় ২৪ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা যে প্রয়োজন!
ব্যাঙ্ক ও সমবায় থেকে রুম্পা ঋণ করেছেন ১০ লক্ষ টাকা। ‘ম্যাক’ দিচ্ছে ৫ লক্ষ। তার পরেও যে ১০ লক্ষ টাকা বাকি! শুরু হল কাছের লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ। অনেকেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বাড়িয়ে দিয়েছেন আর্থিক সহযোগিতার হাত।
সব ঠিকঠাক চললে আগামী ৭ এপ্রিল কুপার্স কলোনি হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা রুম্পা এভারেস্টের উদ্দেশে পা বাড়াবেন। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে রওনা হয়ে এভারেস্ট জয় করে ফিরে আসা নিয়ে ৬০ দিনের অভিযান। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এ বারের এভারেস্ট অভিযাত্রী দলে তিনিই এক মাত্র মহিলা। সঙ্গী হচ্ছেন একটা রাশিয়ান অভিযাত্রী দলের।
পারবেন তো রুম্পা?
এক মুহূর্ত না ভেবে বসন্ত বলেন, “এর আগে অসামরিক ক্ষেত্রে বাঙালি মহিলা অভিযাত্রী হিসাবে ছন্দা গায়েন ও টুসি দাস এভারেস্ট জয় করেছে। রুম্পা জয় করলে হবে তৃতীয়। আমার স্থির বিশ্বাস, ও সেটা পারবে। ওর সঙ্গে বেশ কয়েকটা অভিযানে থাকায় কাছ থেকে ওকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা ওর আছে।” যা শুনে একগাল হেসে রুম্পা বলছেন, “স্যর যখন এটা বিশ্বাস করেন যে আমি পারব, তখন কোনও প্রতিবন্ধকতাই আমায় আটকে রাখতে পারবে না।”
২০১৫ সালে সুমনের সঙ্গে ‘ম্যাক’ থেকে রক ক্লাইম্বিং-এর প্রশিক্ষণ নেন রুম্পা। ওই বছরেই তিনি ৬,১৫৩ মিটার উঁচু মাউন্ট স্টক কাংড়ি, পরের বছর ৬,৮৬৪ মিটার উঁচু চ্যাংব্যাং, ২০১৭ সালে ত্রিশূল-১ (৭,১২০ মিটার) ও ব্ল্যাক পিক (৬,৩৮৭মিটার), ২০১৮ সালে সাসের কাংড়ি (৭,৪১৬ মিটার) ও গ্যাংস্ট্যাং (৬,১৬২ মিটার) ও ২০১৯ সালে দেবাচেন (৬২৬৫ মিটার) শৃঙ্গ জয় করেছেন। সুমনের কোমরে সমস্যা তৈরি হওয়ায় তিনি আর এই পথের পন্থী হতে পারেন না। কিন্তু স্ত্রীর পাশে তিনি সব সময়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, “এভারেস্ট অভিযানে রুম্পা সফল হবেই। আমার কথা মিলিয়ে নেবেন।”
রুম্পা হেসে বলেন, “হয়তো নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। ফিরে আসব এমন কিছু নিয়ে যা অর্থ দিয়ে কেনা যায় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy