রাজ্যে এমন প্রশ্ন ওঠার পরিস্থিতিই ছিল না আগে। — ফাইল চিত্র।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে এই প্রথম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে আরএসএস-এর রাজ্য স্তরের সমন্বয় বৈঠক হতে চলেছে কলকাতায়। আগামী বৃহস্পতিবার ওই বৈঠক হবে সঙ্ঘের রাজ্য দফতর কেশব ভবনে। এর আগেও রাজ্য স্তরের এমন বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সেখানে সঙ্ঘের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন না। সেই কারণেও এই বৈঠক ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
বিজেপি সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে উপস্থিত থাকবেন অরুণ কুমার। তিনি পদমর্যাদার নিরিখে সঙ্ঘের সহ কার্যবাহ। মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলে যা সহকারী সাধারণ সম্পাদকের পদের সমতুল।
একই সঙ্গে এ-ও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ যে, বৃহস্পতিবারে ওই বৈঠকে কারা ডাক পাবেন। সাধারণত এই ধরনের বৈঠকে সঙ্ঘ পরিবারের প্রধান সংগঠনগুলির রাজ্য নেতৃত্বকে ডাকা হয়। পাশাপাশি ডাকা হয় রাজ্য বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। যেমন বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ইতিমধ্যেই ডাক পেয়েছেন সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, অমিতাভ চক্রবর্তীরা। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত আমন্ত্রণ পৌঁছয়নি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে।
জল্পনা এখানেই। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু কি ডাক পাবেন? না পেলে কেন পাবেন না? তার একাধিক ব্যাখ্যা রাজ্য বিজেপির অন্দরে রয়েছে। বিজেপির অনেকের মতে দল ও পরিষদীয় দল সম্পূর্ণ আলাদা। বৃহস্পতিবার যে বৈঠক হতে চলেছে, তা একান্ত ভাবেই দলের। ফলে বিরোধী দলনেতা তথা পরিষদীয় দলনেতা শুভেন্দুকে ওই বৈঠকে ডাকার কথাই নয়। বৈঠক হবে পরিবার ও দলের মধ্যে। আবার অন্য অনেকের বক্তব্য, অতীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন নিদর্শন রয়েছে। দিলীপ রাজ্য সভাপতি থাকার সময়ে সমন্বয় বৈঠকে সাংসদ হিসাবে ডাক পেয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়, এসএস অহলুওয়ালিয়ারা। যাঁরা সংসদীয় তথা পরিষদীয় রাজনীতির অংশ।
এই ধরনের বৈঠকে বিরোধী দলনেতাকে ডাকতেই হয় কি না, তা নিয়েও দ্বিমত রয়েছে বিজেপির অন্দরে। একাংশের বক্তব্য, বিজেপির সংবিধান হিসাবে রাজ্য সভাপতির পরেই পরিষদীয় নেতার ক্ষমতা। গুরুত্বের বিচারে সমান সমান। কিন্তু সঙ্ঘ সেটা মেনেই বৈঠকে আমন্ত্রিতদের তালিকা ঠিক করবে, এমন কোনও কথা নেই। আবার অন্য একাংশের বক্তব্য, সঙ্ঘের রীতি অনুযায়ী বিরোধী দলনেতা হোন বা মুখ্যমন্ত্রী— পরিষদীয় নেতারা গুরুত্বের বিচারে সব সময়েই সমন্বয় বৈঠকে ডাক পেয়ে থাকেন। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কোনও সাংসদ বা বিধায়কও আমন্ত্রণ পেতে পারেন। এই রাজ্যেও সেই নজির রয়েছে। তবে সবটাই সঙ্ঘের ইচ্ছাধীন। যাঁদের ডাকা দরকার, তাঁদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়।
তবে একই সঙ্গে এ-ও ঠিক যে, এখনকার পরিস্থিতি আলাদা। তখন রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির এতটা শক্তি ছিল না। ফলে ‘বিরোধী দলনেতা’ পাওয়ারও প্রশ্ন ছিল না। আর শুভেন্দুর ‘রাজনৈতিক ওজন’ অনেকটাই বেশি। সেই কারণেই ওই বৈঠকে তাঁর আমন্ত্রণ পাওয়া বা না পাওয়ার উপরে অনেক ‘বার্তা’ এবং ‘সঙ্কেত’ নির্ভর করে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে এমন বৈঠক হয়নি। ফলে বিরোধী দলনেতাকে ডাকা বা না-ডাকার পুরনো কোনও নজিরও নেই।
অনেকে বলছেন, শুভেন্দুকে ওই বৈঠকে ডাকার কথা না থাকলেও তিনি আমন্ত্রণ না পেলে তাঁর সাম্প্রতিক দিলীপ-মন্তব্যই জল্পনায় উঠে আসবে। বিজেপির অন্দরের একাংশের দাবি, শুভেন্দুর ওই মন্তব্যে সঙ্ঘ পরিবার খুশি নয়। সেই কারণে তাঁকে সমন্বয় বৈঠকে আমন্ত্রণ পাঠানো না-ও হতে পারে। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে বা প্রকাশ্যে কেউ এই দাবি করছেন না। এখন লোকসভায় অধিবেশনের জন্য সুকান্ত ও দিলীপ দিল্লিতে। সঙ্ঘের ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে দু’জনেরই বুধবার কলকাতায় আসার কথা। বৃহস্পতিবার তাঁদের দলীয় কোনও কর্মসূচি রাখতেও নিষেধ করা হয়েছে। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, শুভেন্দুকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না, তা নিয়ে আগে থেকেই দ্বিমত ছিল রাজ্যের সঙ্ঘকর্তাদের। সোমবার দিলীপ সম্পর্কে শুভেন্দু যে মন্তব্য করেছেন, তাতে তাঁর আমন্ত্রণ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাওয়ারই কথা।
সোমবার হাজরার সভায় শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘আমি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী গিমিকে বিশ্বাস করি না। আমি মর্নিং ওয়াক করতে গিয়ে মিডিয়াকে বাইট দিয়ে বেড়াই না। আমি দায়িত্ব নিয়ে কথা বলি।’’ শুভেন্দু কারও নাম করেননি। কিন্তু এটা স্পষ্ট ছিল যে, শুভেন্দু আক্রমণ করেছেন দিলীপকেই। কারণ, রাজ্য রাজনীতিতে প্রাতর্ভ্রমণে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য দিলীপই খ্যাত।
দিলীপকে কটাক্ষ করার সময় হাজরার মঞ্চে সুকান্তও ছিলেন। তবে সুকান্ত বা দিলীপ কেউই শুভেন্দুর ওই মন্তব্য নিয়ে এখন কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাইছেন না। তবে তাঁরা যে ‘অস্বস্তি’তে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘হাজরার সভার লক্ষ্য ছিল তৃণমূলের সমালোচনা করা। শাসককে আক্রমণ করা। মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অত কাছে গিয়ে দিলীপকে নিশানা করায় দলীয় সংঘাতের বিষয়টাই প্রাধান্য পেয়ে গিয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy