Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

প্রতিবন্ধীর মৃত্যু ঘিরে অবরোধ, তাড়া পুলিশকে 

গৌতমের মৃত্যুর দায় কার, তা নিয়ে টানাপড়েন চলছে রেল ও জেল পুলিশের মধ্যে। মৃত্যুর দু’দিন পরেও প্রশাসনিক গাফিলতির জেরে এ দিন সকাল পর্যন্ত গৌতমের দেহ বাড়িতে আনা যায়নি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০২:১৮
Share: Save:

ঘূর্ণিঝড় ফণীর ছোবলে পশ্চিমবঙ্গে প্রাণহানির খবর নেই। কিন্তু ফণীর হুমকি উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়ে জেল হেফাজতে প্রতিবন্ধী যুবক গৌতম মণ্ডলের মৃত্যু কী ভাবে হল, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেটা রহস্যই থেকে গিয়েছে। ওই যুবকের বেঘোরে মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে এ দিন জনতার ক্ষোভ আছড়ে পড়ে দেগঙ্গায়, তাঁর বাড়ির এলাকায়। রেল অবরোধ, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে ওঠে দেগঙ্গা।

গৌতমের মৃত্যুর দায় কার, তা নিয়ে টানাপড়েন চলছে রেল ও জেল পুলিশের মধ্যে। মৃত্যুর দু’দিন পরেও প্রশাসনিক গাফিলতির জেরে এ দিন সকাল পর্যন্ত গৌতমের দেহ বাড়িতে আনা যায়নি। ফলে ক্ষোভে ফুঁসছিল গৌতমের পরিবারের এবং এলাকার মানুষ। সেই ক্ষোভেরই বিস্ফোরণ ঘটে রেল অবরোধে এবং সংঘর্ষে। রাতে আরজি কর হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার আগে, সকাল থেকে চলে তুমুল বিক্ষোভ, অবরোধ।
হাসনাবাদ শাখায় শিয়ালদহমুখী ইছামতী এক্সপ্রেস এ দিন সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে লেবুতলা স্টেশনে পৌঁছতেই ট্রেন আটকে লাইনের উপরে বেঞ্চ পেতে বসে অবরোধ শুরু হয়। গৌতমের স্ত্রী, পরিবারের সঙ্গে সেই অবরোধে যোগ দেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক মহিলা-পুরুষ। রেললাইনের পাশাপাশি রেলের ক্রসিং প্লেটের সংযোগস্থলের মধ্যেও পাথর ফেলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে ক্ষুব্ধ জনতা। অভিযোগ ওঠে, প্রতিবন্ধী ও পরিবারের একমাত্র ছেলে গৌতমকে বিনা অপরাধে ধরে মারধর করে মেরে ফেলা হয়েছে। দোষীদের শাস্তি ও পরিবারের ক্ষতিপূরণের দাবি তুলে চলতে থাকে অবরোধ-বিক্ষোভ।

অবরোধে আটকে যান অফিসযাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ। ঘণ্টাখানেক পরে দেগঙ্গার থানার বিশাল বাহিনী অবরোধ তুলতে গেলে ক্ষোভ বাড়ে। পুলিশকে তাড়া করে ক্ষিপ্ত জনতা। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। ভাঙচুর হয় পুলিশের দু’টি গাড়ি। জখম হন কয়েক জন সিভিক পুলিশকর্মী। জনতার তাড়া খেয়ে তখনকার মতো এলাকা ছাড়ে পুলিশ। আহতদের বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এর পরে তীব্রতর হয় জনরোষ। রেললাইনে কাঠ ও গাড়ির টায়ার ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি সামলাতে দেগঙ্গা থানার আইসি পরেশ রায়ের নেতৃত্বে আরও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। লাঠি, ঢাল নিয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানোর প্রস্তুতি শুরু করে পুলিশ। শান্ত হওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে আবেদন জানানো হয় মাইকে।

জনতা চিৎকার করে বলে, ‘থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এখন বোঝাতে এসেছেন কেন?’ মহিলারা দাবি তোলেন, ‘গৌতমের স্ত্রী চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ক্ষতিপূরণ না-দিলে অবরোধ উঠবে না। আমাদের উপর দিয়ে ট্রেন চালিয়ে দেখাক পুলিশ।’

টানা অবরোধের ফলে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রিয়াঙ্কা সরকারকে কলকাতার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে মালতীপুর থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন বাবা-মা। অবরোধের জন্য ফিরে যেতে হয় তাঁদের। তবে তীব্র গরমের মধ্যে আটকে থেকেও ট্রেনযাত্রীদের কাউকে অবরোধের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। বরং তাঁদের কেউ কেউ বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়ান। গিরীন্দ্রনাথ মণ্ডল নামে এক ট্রেনযাত্রী বলেন, ‘‘গৌতমও আমাদের মতো নিত্যযাত্রী ছিলেন। এক প্রতিবন্ধী সহযাত্রীকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। আমিও দোষীদের শাস্তি চাই।’’

এ ভাবে কেটে যায় চার ঘণ্টা। তার পরে আরও পুলিশ নিয়ে আসেন পূর্ব রেলের বারাসত শাখার রেল পুলিশের (জিআরপি) আধিকারিক। জনতা ও দুই পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনার হয়। বিক্ষোভকারীদের তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসের পরে রেললাইন থেকে সরে আসে জনতা। ১২টা নাগাদ ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

গৌতমের জামাইবাবু তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা লিখিত ভাবে তিনটি দাবি জানিয়েছি। ১) গৌতমের পরিবারে আর রোজগেরে কেউ নেই। তাই পরিবারের এক জনকে চাকরি এবং পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ২) ময়না-তদন্ত ছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত চাই। ৩) দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।’’ বারাসত জিআরপি-র আধিকারিক স্বপন সরকার তদন্ত ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন বিক্ষোভকারীদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Jail Custody Road Block Mysterious Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy