বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল ছবি।
গ্রামবাংলার ভোটে এবার আলাদা নজর ছিল নন্দীগ্রামের দিকে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর লড়াই গগনচুম্বী রাজনৈতিক রেষারেষির জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল হলদি নদীর তীরের এই জনপদকে। মঙ্গলবার দেখা গেল, গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলাফলের নিরিখে নিজের বিধানসভায় কিছুটা এগিয়েই রইলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। সে অর্থে, নন্দীগ্রামে পদ্মশিবিরের ‘মান’ রাখলেন শুভেন্দু। পাশাপাশি, নন্দীগ্রামও মান রাখল শুভেন্দুর।
গ্রাম পঞ্চায়েত ভোটের গণনার প্রাথমিক ধারা স্পষ্ট হওয়ার পরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে নন্দীগ্রামে বিজেপির কিছু ছিল না। সেখানে আমি পদ্ম ফুটিয়ে ছেড়েছি!’’
নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লক মিলিয়ে মোট ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত। সন্ধে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সরকারি ভাবে ১৭টি পঞ্চায়েতের ফলাফল স্পষ্ট হয়নি। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, তৃণমূলের থেকে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। একটি সূত্রের খবর, ১৭টির মধ্যে ১০টি পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি, ছ’টি তৃণমূল এবং একটি ত্রিশঙ্কু। যদিও ত়ৃণমূল মুখপাত্র তথা শাসক শিবিরের তরফে নন্দীগ্রামের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, ১৭টির মধ্যে ন’টি জিতেছে বিজেপি। আটটি জিতেছে তৃণমূল। কুণাল এ-ও বলেন, তৃণমূলের পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে রয়েছে দলের গোষ্ঠীকোন্দল। কুণাল বলেছেন, ‘‘এর কৃতিত্ব বিজেপির নয়। আমাদের বিক্ষুব্ধদের কিছু উল্টো ভোট।’’ সেই সঙ্গে বাম-কংগ্রেসকেও ‘ভোট কাটুয়া’ বলে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি।
তবে এ সবই বলা হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলাফলের ভিত্তিতে। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের ফল প্রকাশের পর আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে, নন্দীগ্রামের সমর্থন কাদের পিছনে রয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোটের অনেক আগে থেকেই নন্দীগ্রামকে বিশেষ সাংগঠনিক গুরুত্ব দিয়ে দেখেছিল তৃণমূল। অনেকের মতে, কুণালকে নন্দীগ্রাম এবং হলদিয়ার দায়িত্ব দিয়ে পাঠানোর মধ্যে দিয়েই শাসকদল বুঝিয়ে দিয়েছিল, হারানো জমি পুনরুদ্ধারে মরিয়া তারা। অন্য দিকে, শুভেন্দুর কাছেও নন্দীগ্রাম ধরে রাখা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তবে শুভেন্দুর সেই চ্যালেঞ্জ শুধু শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধেই ছিল না। বিজেপির অভ্যন্তরেও তাঁর ওজন, গুরুত্ব, সর্বোপরি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে তাঁর মর্যাদার বিষয়টি জড়িয়ে ছিল পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের সঙ্গে। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা অধুনা সর্ভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের বুথে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিজের এলাকায় মাত্র একটি পঞ্চায়েতে জিতেছেন। সেদিক থেকে এই দুই দলীয় ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’'র থেকে অন্তত এলাকারক্ষার লড়াইয়ে ভোটের পাটিগণিতে এগিয়ে রইলেন শুভেন্দু। তা ছাড়া, শুভেন্দুর পৈতৃক ভিটে কাঁথি লাগোয়া পঞ্চায়েতগুলিতেও বিজেপি ভাল ফল করেছে।
২০০৭ থেকে নন্দীগ্রাম ছিল মমতার আন্দোলনের মাটি। যে আন্দোলন তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অভিযানকে প্রশস্ত করে দিয়েছিল। কিন্তু শুভেন্দুর তৃণমূল-ত্যাগ এবং বিজেপিতে যাওয়া নন্দীগ্রামের সংজ্ঞা খানিকটা হলেও বদলে দিয়েছিল। তার পরে বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে মমতা-শুভেন্দুর সম্মুখসমর ১৪ বছর পর নন্দীগ্রামকে নতুন করে জাতীয় রাজনীতির আলোচনায় পৌঁছে দিয়েছিল। নন্দীগ্রামে মমতাকে হারানো নিয়ে শুভেন্দু প্রায়শই তাঁর শ্লাঘার কথা উচ্চারণ করেন। একই সঙ্গে ভোটে জয়ের ব্যবধান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল যেন ১৯৫৬ (এই ব্যবধানেই মমতাকে হারিয়েছিলেন শুভেন্দু। যদিও ফলাফল সংক্রান্ত মামলা কলকাতা হাই কোর্টে বিচারাধীন) মনে রাখে।’’ কুণাল মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘পুরো হিসাব এলে দেখতে হবে মোট প্রাপ্ত ভোট কী দাঁড়াল।’’ অর্থাৎ বিধানসভার থেকে ভোট বাড়ল না কমল, ব্যবধান কী হল, সেটা নিক্তিতে মাপতে চায় তৃণমূল। শুধু গ্রাম পঞ্চায়েতের ফল দেখে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চায় না শাসকদল।
নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের বেশ কিছু এলাকা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। সে সব এলাকায় বিজেপি খুব একটা মনোযোগ দিয়ে লড়াইও করেনি বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের অনেকের। শুভেন্দু অবশ্য ভোটের আগে একাধিক বার বলেছিলেন, ‘‘সনাতনীদের ভোটেই বিজেপি জিতবে। ওদের (তৃণমূলের) ফিক্সড ডিপো়জিটও বাঁচাতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy