ছবি: সংগৃহীত
হাসপাতাল থেকে সবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অনেকেই বলেছিলেন, কী দরকার এখনই গ্রামে যাওয়ার! তার উত্তরে উনপঞ্চাশ বছরের করোনাজয়ী বলেছিলেন, “ছাব্বিশ বছর ধরে ওই গ্রামে কাজ করছি। ওখানে যাব না? আমি না গেলে গ্রামের লোক আমার বাড়িতে চলে আসবে।”
গ্রামের নাম ভুরঙ্গের বাড়ি। সেখানকার উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহায়ক পদে কাজ করা ওই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী এখন গ্রামের বাসিন্দাদের মুখে মুখে পরিচিত ‘করোনা দিদি’ নামে। গ্রামে কারও জ্বর, সর্দি হলে তাঁকেই এখন গিয়ে দেখে আসতে হচ্ছে। বাইরে থেকে কোনও আত্মীয়স্বজন এলেও ডাক পড়ে তাঁর। দেখে জানিয়ে দেন, কী করতে হবে।
কেমন আপ্যায়ন পান ওই গ্রামে? করোনা দিদি বলছিলেন, ‘‘অনেক জায়গা তো শুনি করোনা রোগীরা সুস্থ হলেও মানুষ এড়িয়ে চলে। কিন্তু ওই গ্রাম আমাকে আরও বেশি করে কাছে টেনে নিয়েছে। করোনা মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পরেই আমার ডাক পড়েছে শিশুদের দেখার জন্য। আবার কোনও অন্তঃসত্ত্বাকে গিয়ে টিকা দিয়েছি।’’ আপত্তি তো দূরে থাক, গ্রামের মানুষ তাঁকে কাছে টেনে উঠোনে বসতে দিয়েছেন। রাজবংশীরা আপনজনেদের ‘তুই’ সম্মোধন করে থাকেন সাধারণত। সেই ভাবেই তাঁকে বলেন, ‘‘ভয় পাস না, তুই সুস্থই আছিস।’’ উত্তরবঙ্গের অনেক জায়গায় প্রচলিত প্রথা, কেউ বাড়িতে এলে জল, সুপারি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। তেমনই অনেক বাড়িতে তাঁকে এগিয়ে দিয়েছে জল, সুপারি।
গ্রামে গিয়েই অবশ্য কাজ শেষ হচ্ছে না করোনা দিদির। যে ভুরঙ্গের বাড়ি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে এত দিন ধরে কাজ করেছেন, সুস্থ হয়ে ফিরেই সেখানে যোগ দিয়েছেন তিনি।
এখানে যক্ষ্মা রোগীদের ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। আবার কুষ্ঠ রোগীদের ওষুধ পৌঁছে দিতে বাড়ি বাড়ি ছুটছেন। গ্রামে যাদের কোমর্বিডিটি আছে, তাঁদের তালিকাও তৈরি করেছেন। সেখানে লেখা থাকছে, কার উচ্চ রক্তচাপ আছে, কার শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের রোগ।
করোনায় তো শরীর দুর্বল করে দেয়। এত দৌড়ঝাঁপ করছেন, অসুবিধা হচ্ছে না? হাসছেন করোনা দিদি। বলছেন, ‘‘বরং উল্টো। আমার কাছের এই মানুষজনের মধ্যে গিয়েই ভাল থাকছি। ওঁরা আশ্বাস দিচ্ছেন, বরাভয় দিচ্ছেন। আমিও ওঁদের রোগশোকে দেখভাল করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy