Advertisement
E-Paper

অ্যালঝাইমার্স ধরার ‘মার্কার’ যাদবপুরের গবেষণায়

যেহেতু অ্যালঝাইমার্স চিকিৎসায় সারে না, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ার উপরে জোর দেওয়া হয়।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৮
Share
Save

ওজন দেড় কিলোগ্রামেরও কম। আর সেই মস্তিষ্ক মানুষের জীবনযাত্রার মান পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই মস্তিষ্ককে চাঙ্গা রাখার কাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কী ভাবে বোঝা যাবে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কোষগুলি আদৌ চাঙ্গা আছে কি না। মানুষের গড় আয়ু যত বাড়ছে, ততই চার পাশে বাড়ছে এমন মানুষের সংখ্যা যাঁদের স্মৃতি দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা স্পষ্টই জানিয়ে দেন, এর নিরাময়ের কোনও ওষুধ এখনও সামনে আসেনি।

তা হলে উপায়? সেই পথেরই সন্ধান করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক। তাঁরা বুঝতে পারছিলেন, অ্যালঝাইমার্স রোগে অ্যামাইলয়েড বিটা সমষ্টির প্রাথমিক শনাক্তকরণের জন্য ‘ফ্লুরোসেন্স ইমেজিং ডায়াগনস্টিক বায়োমার্কার’ ডিজ়াইন করাটাই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দীর্ঘ গবেষণার পরে তাঁরা সেই কাজে সফল হয়েছেন। তাঁদের গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি’-তে। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য শমিত গুহ বলেন, “অ্যামাইলো বিটা প্রোটিন সমষ্টির একাধিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে তাদের উন্নত প্রোব ব্যবহার করে একটি ফ্লুরোসেন্স গতিবিদ্যার পরিমাপ করা হয়। এর মাধ্যমে নানা ধাপ পেরিয়ে মাইটোকন্ড্রিয়ার আকৃতি, গঠন, পরিবর্তন এবং কর্মহীনতা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এই মাইটোকন্ড্রিয়াই মস্তিষ্কের কোষগুলিকে জীবিত এবং সচল রাখতে সাহায্য করে। তাই সেই কোষগুলির কর্মক্ষমতা নষ্ট হচ্ছে তা আগাম জানতে পারলে সেই গতিকে হ্রাস করার জন্য অন্তত চিকিৎসকেরা চেষ্টা করতে পারেন।”

যেহেতু অ্যালঝাইমার্স চিকিৎসায় সারে না, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ার উপরে জোর দেওয়া হয়। কারণ, যদি রোগটা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তবেই কিছু বছর পর্যন্ত অন্তত উপসর্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা যায়, মস্তিষ্কের ক্ষয়ের গতিকে যত দূর সম্ভব কমিয়ে রাখার চেষ্টা করা যায়। পাশাপাশি স্মৃতিভ্রংশের হাত ধরে যে সব শারীরিক সমস্যা আসতে শুরু করে সেগুলির দিকেও নজর রাখা যায়। সামগ্রিকভাবে যত দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত হবে, সহায়ক চিকিৎসার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবনযাত্রার মানকে খানিকটা অন্তত ঠিকঠাক রাখার চেষ্টা করা যাবে। ওই গবেষক দলে ছিলেন শমিত গুহের পাশাপাশি ছিলেন তাপস বেরা, অনিরুদ্ধ মন্ডল, সমীরণ কর, অয়ন মুখোপাধ্যায় এবং সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ দেশে ২০২৩ সালে ৮৮ লক্ষ মানুষ স্মৃতিভ্রংশের সমস্যায় আক্রান্ত বলে নথিভুক্ত রয়েছেন। এর মধ্যে একটা বড় সংখ্যাই অ্যালঝাইমার্স রোগের শিকার। বিশেষজ্ঞেরা বলেন, ৮৮ লক্ষের এই হিসেব অনেকটাই অসম্পূর্ণ। কারণ, বহু পরিবারে সমস্যাটা চিহ্নিতই হয় না। ‘বয়সের কারণে স্মৃতি দুর্বল হচ্ছে’ বলে তকমা এঁটে দেওয়া হয়। স্নায়ু রোগ চিকিৎসকেরা সকলেই মনে করেন, এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে বহু দিন পর্যন্ত জীবনযাত্রার মান ঠিক রাখা সম্ভব। তাঁদের বক্তব্য, যেহেতু অসুখটির উপসর্গগুলি দেখা দেওয়ার অন্তত এক যুগ আগে মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড এবং টাও প্রোটিন জমা হতে থাকে, এবং স্নায়ুকোষ গুলি মরে যেতে থাকে। নতুন ওষুধ গুলির নিশানা এই অ্যামাইলয়েড প্রোটিন। তাই এই ওষুধগুলি যত আগে প্রয়োগ করা হবে, ততই কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা। তাই খুব আগে রোগ ধরা খুবই জরুরি। নানা রকম বায়ো মার্কারের খোঁজ চলছে। কিছু বায়ো মার্কার পরীক্ষা সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইডের মাধ্যমে করা হয়। এখন কিছু বায়ো মার্কার রক্তের প্লাজ়মা পরীক্ষায় করা যাচ্ছে।

স্নায়ুরোগ চিকিৎসক অতনু বিশ্বাস বলেন, “এই গবেষণার ফলাফল আমাকে বেশ উৎসাহিত করছে এই কারণে যে রক্তের শ্বেত কণিকার মধ্যে মাইটোকন্ড্রিয়া পরীক্ষা করা সহজ। কিন্তু আমি জানি না, মস্তিষ্কে জমা হওয়া অ্যামাইলয়েড মস্তিষ্কের বাইরে রক্তের শ্বেত কণিকার মধ্যে পাওয়া সম্ভব কি না। তার জন্য এই ধরনের রোগীর রক্তের নমুনায় এই গবেষণা করে দেখা দরকার।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jadavpur University Alzheimer's Disease

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}