সুমন মাইতি।
চিনে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, নিজের চোখে দেখেছি। অনুভব করেছি। সে-দেশে নোভেল করোনাভাইরাসে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। সোমবার চিনের কুনমিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কলকাতামুখী উড়ান ধরেছিলাম। চিন ছাড়লেও নিশ্চিন্ত হতে পারিনি। বায়ুবাহিত রোগে আপনি জানতেও পারবেন না, কখন কী ভাবে যেন সংক্রমণের শিকার হয়ে গিয়েছেন! আমিও আক্রান্ত কি না, সারাটা রাস্তা সেই উদ্বেগ আমাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। তাই মঙ্গলবার কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেই ট্যাক্সি নিয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে যাই।
কিন্তু আইডি-তে যা হল, তার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। সরকারি নীতি নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু আফসোসের সঙ্গে বলছি, দেশে ফিরেও স্বস্তি পেলাম না!
চিনের গুয়াংডং প্রদেশের জুহাইয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজে যুক্ত আছি। বাইশ দিন আগে সে-দেশে গিয়েছিলাম। ঠিক ছিল, ফিরব নভেম্বরে। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ আকার নিয়েছে যে, চিনে থাকার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কেউ। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি, শুধু হুবেই ও উহানে বসবাসকারী ভারতীয়দেরই সরকারি উদ্যোগে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা হয়েছে। অন্য প্রদেশে থাকা প্রবাসীদের নয়। অগত্যা নিজের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ধরে প্রথমে গুয়াংডং প্রদেশের প্রধান শহর গুয়াংঝাওয়ে পৌঁছই। ওখানে বিমানবন্দর থাকলেও আন্তর্জাতিক বিমান ধরতে হলে কুনমিংয়ে যেতে হয়। সেখান থেকেই কলকাতার বিমান ধরে দেশে ফিরছেন সকলে।
সকালে কলকাতায় পৌঁছে আইডি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান, নমুনা পরীক্ষা করাতে হলে ভর্তি হতে হবে। আমার বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরে। মালপত্র নিয়ে ভর্তি হব কী করে! বাড়িতে মা, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী এবং তাঁদের এক সন্তান আছেন। বাচ্চা এবং পরিবারের অন্যদের কথা ভেবে পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের কথা শুনে স্বাস্থ্য দফতরের হেল্পলাইনে কথা বলি। ফোনের ও-পারে স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক পদস্থ কর্তা। কেন পরীক্ষা করাতে চাইছি, তাঁকে জানালাম। উনি বললেন, যে-হেতু আমার কোনও করোনা-লক্ষণ নেই এবং আমি উহান-ফেরত নই, তাই প্রোটোকলে আমার লালারসের নমুনা পরীক্ষা করার কথা নয়। আরও কয়েক দিন পৃথক ঘরে থাকতে বলা হল। কবে কেমন আছি, তা নিয়মিত জানাতে বলা হয়েছে। এই সব পরামর্শ শুনে বাধ্য হয়েই বাড়ি ফিরে আসি।
চিনে যেখানে ছিলাম, সেখান থেকে নোভেল করোনাভাইরাসের আঁতুড়ঘর উহানের দূরত্ব অন্তত ৯০০ কিলোমিটার। ওই রোগের কোনও লক্ষণ আমার শরীরে নেই, বুঝতে পারছি। কিন্তু মনকে বোঝাই কী করে। অগত্যা আরও কয়েকটা দিন এই অস্বস্তি নিয়েই পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কাটাতে হবে আমাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy