পশ্চিম বর্ধমানে ধস কবলিত খনি অঞ্চলের পরিস্থিতির সঙ্গে মঙ্গলবার জোশীমঠের তুলনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতীকী ছবি।
গ্রামের সীমানায় বছর পাঁচেক ধরে নিয়মিত মাটি ফুঁড়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। যে কোনও সময়ে এলাকা ধসে যাবে, আশঙ্কায় থাকেন রানিগঞ্জের বাউলহির গ্রামের মানুষজন। জামুড়িয়ার কেন্দা গ্রামেও বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায়ই ধোঁয়া বেরোয়। ধস-ধোঁয়ার প্রকোপে অন্ডালের হরিশপুরে বাসিন্দাদের একাংশ অন্যত্র উঠে গিয়েছেন। পশ্চিম বর্ধমানে ধস কবলিত খনি অঞ্চলের পরিস্থিতির সঙ্গে মঙ্গলবার জোশীমঠের তুলনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুনর্বাসন প্রকল্প আটকে থাকা নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতি হল কেন, পুনর্বাসনই বা কেন আটকে, সে নিয়ে তৈরি হয়েছে চাপান-উতোর।
খনি বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কয়লা কাটা এবং অবৈধ খননই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। ভূগর্ভে কয়লা কেটে নেওয়ার পরে ফাঁপা অংশ বালি দিয়ে ভরাট করতে হয়। অথবা, খুঁটি দিয়ে উপরের অংশ ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। তা ঠিক মতো না করলে ধসের সম্ভাবনা থাকে। কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএলের কর্তাদের দাবি, খনি রাষ্ট্রায়ত্তকরণের আগে বেসরকারি নানা সংস্থা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কয়লা কেটেছিল। এলাকা বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। বিপদ আরও বেড়েছে সুড়ঙ্গ তৈরি করে অবৈধ কয়লা খননে। এলাকাবাসীর একাংশের আবার অভিযোগ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণের পরে ইসিএল পুরনো খনিগর্ভগুলি বালি দিয়ে ভরাট করেনি। তার খেসারত দিতে হচ্ছে। যদিও ইসিএল সূত্রের দাবি, বেসরকারি সংস্থাগুলি নকশা রেখে যায়নি। কোথায় কয়লা কাটা হয়েছে, চিহ্নিত করার উপায় ছিল না।
যে পথে পুনর্বাসন
১। ১৯৯৭-এ সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ হারাধন রায়।
২। ২০০৩-এ সুপ্রিম কোর্টের রায়, পুনর্বাসন দিতে হবে। মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ।
৩। ২০০৯-এ কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট পুনর্বাসন প্রকল্প অনুমোদন করে।
৪। কয়লা মন্ত্রক ইসিএলের এলাকার জন্য (বেশির ভাগই পশ্চিমবঙ্গে) ২,৬২৯ কোটি ও বিসিসিএল এলাকার জন্য (মূলত ঝাড়খণ্ডে) প্রায় সাড়ে ছ’হাজার কোটি টাকা অনুমোদন করে। ঠিক হয়, দু’টি পর্যায়ে ১০ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
৫। প্রকল্পের ‘নোডাল এজেন্ট’ আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)।
৬। ২০১৬-য় বাড়ি তৈরির দায়িত্ব পায় রাজ্য আবাসন দফতর। তত্ত্বাবধানে এডিডিএ।
৭। এ পর্যন্ত রাজ্য পেয়েছে প্রায় ছ’শো কোটি টাকা।
৮। পুনর্বাসন পাওয়ার কথা ২২,৬৬৬টি পরিবারের। এখনও বাড়ি পেয়েছে ১৫৬টি পরিবার।
৯। বাড়ি হয়েছে (পরিকাঠামো অসম্পূর্ণ): ১০,১৪৪টি।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন পুনর্বাসন জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু তা-ও ঠিক ভাবে হচ্ছে কি? স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, পুনর্বাসন প্রকল্পও থমকে রয়েছে। সে জন্য কেন্দ্রকে দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের পুনর্বাসন প্রকল্পের নোডাল এজেন্ট আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২৩ হাজার পরিবারের পুনর্বাসন পাওয়ার কথা। এই প্রকল্পে কেন্দ্রের ২,৬৬২ কোটি টাকা দেওয়ার কথা। ২০০৯ সালে ৫৮১ কোটি টাকা দেওয়া হয়। তাতে মোট ১০,১৪৪টি বাড়ি তৈরি হয়েছে। জানলা বসানো, জল সরবরাহের মতো পরিকাঠামো তৈরি না হওয়ায় ১৫৬টির বেশি পরিবারকে এখনও বাড়ি দেওয়া যায়নি।
এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, কেন্দ্র টাকা দিলে পুনর্বাসনের কাজ এগোবে। আরও অভিযোগ, প্রকল্পের বাড়ি তৈরির জন্য ২৫ একর জমি প্রয়োজন। কিন্তু জমি চিহ্নিত করা হলেই ইসিএলের তরফে দাবি করা হচ্ছে, ভূগর্ভে কয়লা রয়েছে। নির্মাণকাজ করা যাবে না। ইসিএল সূত্রের পাল্টা দাবি, প্রকল্পের পরবর্তী কিস্তির টাকা পেতে গেলে রাজ্য সরকারকে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী সমীক্ষা করে খরচের হিসাব পাঠাতে হবে। রাজ্য তা না করায় টাকা মিলছে না। আগামী ৫০ বছরের মধ্যে খননের সম্ভাবনা রয়েছে, এমন জমিতে প্রকল্পের ছাড়পত্র দেওয়াও সম্ভব নয় বলে দাবি সংস্থার কর্তাদের।
নিয়মের নানা ফাঁসে প্রাণ হাতেই বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন প্রায় দেড় লক্ষ বাসিন্দা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy