E-Paper

‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি’ তত্ত্ব, দাবি নিয়োগ বাতিলের

২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) রাজ্যের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছিল।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৫
Share
Save

রাজ্যের স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি’ আখ্যা দিয়ে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের পক্ষে সওয়াল করলেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীরা। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় খন্নার ডিভিশন বেঞ্চে তাঁদের বক্তব্য, দু’-এক জন আধিকারিকের ত্রুটি নয়, বরং পূর্বপরিকল্পিত ভাবেই এই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১৬ সালের নিয়োগ বাতিল করে নতুন ভাবে নিয়োগের আর্জি জানিয়ে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের প্রধান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের যুক্তি, ২০১৬ সালে যাঁরা আবেদন করেছিলেন, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুধু তাঁদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। বয়সজনিত বাধাও এ ক্ষেত্রে তুলে দেওয়া যায়।

এ দিন সওয়াল পর্ব শেষে প্রধান বিচারপতি জানান, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি। সে দিন এসএসসি এবং রাজ্য তাদের জবাব কোর্টে বলবে। আইনজীবীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, আগামী শুনানিতেই এই মামলার সওয়াল-জবাব পর্ব শেষ হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ মামলার ক্ষেত্রে শুনানি শেষে সাধারণত রায়দান সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হয়।

২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) রাজ্যের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছিল। তাতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা হয়। সিবিআই এবং ইডি সেই মামলার তদন্ত করছে। দুর্নীতির মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ পুরো প্রক্রিয়া খারিজ করে দেন এবং তার ফলে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য, এসএসসি। এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছিল যে, বৈধ এবং অবৈধ ভাবে নিযুক্তদের পৃথক করা সম্ভব কি? দেশের প্রধান বিচারপতির মন্তব্য ছিল, ‘‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়, ইয়া পুরা ডালই কালা হ্যায়?’’

এ দিন মামলার শুনানিতে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী হিসেবে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং রউফ রহিম জানান, হাই কোর্ট বারবার এসএসসি-কে বৈধ এবং অবৈধ নিয়োগ পৃথক করতে বললেও তারা এ ব্যাপারে কোনও তথ্য দেয়নি। মামলায় এ-ও উঠে এসেছিল যে, নিয়োগ তালিকা বা প্যানেলের মেয়াদ ফুরনোর পরে তা থেকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য কোনও প্রতিলিপি (মিরর ইমেজ) না রেখেই উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। সাদা খাতা জমা দিয়েও বহু লোক চাকরি পেয়েছেন, নিয়োগপত্রে কারচুপি হয়েছে। নিয়োগ নিয়ে এত প্রশ্নের কথা বলে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীদের দাবি, গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াই রহস্যে মোড়া। কী পদ্ধতিতে এবং কেন নাইসা-র মতো সংস্থাকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয়েছিল, সে ব্যাপারেও কোনও তথ্য এসএসসি এত দিন কোর্টে দেয়নি বলে দাবি করেছেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীরা। বরং রাজ্য, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরস্পর বিরোধী হলফনামা দিয়েছে। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের অন্যতম আইনজীবী বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘রাজ্য, এসএসসি-র কোনও নির্দিষ্ট অবস্থানই জানা যায়নি।’’

বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আর এক আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত জানান যে, হাই কোর্টে এসএসসি চার বার হলফনামা দিলেও, বেআইনি নিয়োগের সংখ্যা স্পষ্ট করে জানায়নি। উপরন্তু, বাগ কমিটির রিপোর্টে এটাও উঠেছিল যে, ২০১৬ সালে এসএসসি নিয়োগের সুপারিশপত্র দিলেও নিয়োগপত্র দিত সংশ্লিষ্ট স্কুল পরিচালন কমিটি। ২০১৮ সালে সেই নিয়ম বদলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে নিয়োগপত্র দেওয়ার ভার দেওয়া হয়। কারণ, এতগুলি স্কুল কমিটির থেকে শুধু মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে হাত করে কারচুপি করা সহজ। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আর এক আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের দাবি, নিয়োগ তালিকার ক্রমপর্যায়কে উল্টে দিয়ে নিয়োগ হয়েছে, তেমন প্যানেলের বাইরে থেকে এবং উত্তরপত্র কারচুপি করেও নিয়োগ হয়েছে। তৃতীয় দফার কাউন্সেলিং থেকেই মেয়াদ ফুরনো প্যানেলের নিয়োগ হয়েছে।

বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীদের সওয়ালের পরিপ্রেক্ষিতে ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ, ২০১৬’-র তরফে মেহবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সুপ্রিম কোর্টে যা বললেন, তাতে স্পষ্ট, তিনি পুরো প্যানেল বাতিলের কথা বলছেন। উনি যে অভিযোগগুলো করছেন, তা আংশিক সত্য। পরবর্তী শুনানিতে আমাদের আইনজীবীরা তো বলবেনই, পাশাপাশি এসএসসি-কেও বিকাশবাবুর যুক্তি খণ্ডন করতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Recruitment Scam Calcutta High Court

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।