Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
Recruitment Scam

নজরে অন্য ৮ যুব নেতা, দুই বিধায়ক, শীঘ্রই তলবি নোটিসের ইঙ্গিত

সিবিআইয়ের অভিযোগ, ২০১২-র পর থেকে ওই আট যুব নেতা বিভিন্ন জেলার ছোট-বড় মিড্‌লম্যান মারফত নিয়োগ দুর্নীতিতে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছিলেন।

picture of CBI.

সিবিআইয়ের দাবি, যুব নেতাদের স্তরভেদ আছে। প্রতীকী ছবি।

  শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৪
Share: Save:

শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে ‘বোড়ে’ হিসেবে যাঁদের ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার অভিযোগ, তদন্তকারীদের সূত্রের খবর, সেই যুব নেতাদের অনেকেই কালক্রমে রুই-কাতলা হয়ে উঠেছিলেন। সিবিআই সূত্রের দাবি, তদন্তের জাল বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েক জন যুব নেতাকে শ্রীঘরে পোরার পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের রাজ্য স্তরের আট যুব তৃণমূল নেতা এবং দুই বিধায়কের নাম তারা জেনেছে। ওই ১০ জনকে তলব করা হবে অচিরেই।

নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ এখন জেল হেফাজতে। দুর্নীতিতে মিড্‌লম্যান হিসেবে কাজ করার অভিযোগে আব্দুল খালেক, সইদ ইমাম ও শেখ আলি ইমাম নামে আরও তিন যুব নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, যুব নেতাদের স্তরভেদ আছে। স্তরভেদ পদে তো বটেই, দুর্নীতির কাজে এবং বখরা বাঁটোয়ারাতেও। নতুন যে-আট যুব নেতা ও দুই বিধায়কের নাম পাওয়া গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে তাঁদের সরাসরি যোগ রয়েছে এবং ওই দুষ্কর্মে রাজ্য জুড়ে যে-সব ছোট-বড় যুব নেতা মিড্‌লম্যান হিসেবে কাজ করেছেন, তাঁদের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বা চক্র-চালক ছিলেন তাঁরা। রাজ্য স্তরের ওই আট যুব নেতা শাসক দলের এক প্রভাবশালী শীর্ষ যুব নেতার ঘনিষ্ঠ বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি।

সিবিআইয়ের অভিযোগ, ২০১২-র পর থেকে ওই আট যুব নেতা বিভিন্ন জেলার ছোট-বড় মিড্‌লম্যান মারফত নিয়োগ দুর্নীতিতে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছিলেন। ১০ শতাংশ কমিশন কেটে নিয়ে টাকা পাঠানো হত। ব্লক স্তরের যুব নেতারা পেতেন ১০ শতাংশ। তার পরে ওই আট যুব নেতা এবং দুই বিধায়কও আরও ১০ শতাংশ কেটে নিতেন। তদন্তকারীদের অনুমান, বাকি টাকা ওই প্রভাবশালী যুব নেতার ঘরে পৌঁছেছে। কুন্তল-সহ ধৃত যুব নেতাদের বয়ানের ভিত্তিতে ওই আট যুব নেতা ও দুই বিধায়কের বিষয়ে সমস্ত খোঁজখবর নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাঁদের ঘনিষ্ঠ কিছু মিড্‌লম্যানকেও। সব তথ্য একত্র করার কাজ শেষ হলেই ওই আট যুব নেতা ও দুই বিধায়ককে তলব করা হবে বলে জানান এক সিবিআই-কর্তা।

শিক্ষার পাশাপাশি অন্য কিছু সরকারি দফতরের নিয়োগ দুর্নীতিতেও ওই আট যুব নেতার নাম উঠে আসছে বলে জানিয়েছে সিবিআই। অভিযোগ, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়োগ দুর্নীতির লুটের টাকা ওই আট যুব নেতার কাছে জমা হত। তার পরে সেই দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা দক্ষিণ কলকাতার এক রং ব্যবসায়ীর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হত— কুন্তল-সহ ধৃতদের জেরা করে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে দাবি সিবিআইয়ের।

কুন্তল গ্রেফতারের পরে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট হুগলির অন্য যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঁচ বার তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সিবিআই সূত্রের খবর তারাও শান্তনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

তদন্তকারীদের নজর এখন যাঁদের উপরে পড়েছে, সিবিআইয়ের দাবি অনুযায়ী সেই তালিকায় আছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক প্রভাবশালী বিধায়ক এবং নরেন্দ্রপুরের দুই যুব নেতার নাম। ঘটনাচক্রে, ওই যুব নেতার স্ত্রী দক্ষিণ শহরতলির একটি পুরসভার কাউন্সিলর। সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়-২ নম্বর ব্লকের সভাপতি শাজাহান মোল্লার বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, শাজাহান দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই প্রভাবশালী বিধায়কের কার্যত ডানহাত। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওই বিধায়কের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।

হাওড়া জেলার দুই যুব নেতার নামও আছে তালিকায়। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন ওই দুই যুব নেতা। সিবিআইয়ের দাবি, বর্তমানে তাঁরা নিষ্ক্রিয়। বাঁকুড়ার জেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী এক যুব নেতার নামও আছে তালিকায়। উত্তর ২৪ পরগনার একটি পুরসভার কাউন্সিলর তথা এক যুব নেতার নামও উঠে এসেছে। তালিকায় আছে পুরুলিয়ার এক বিধায়ক তথা যুব নেতার নাম। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতিতে সক্রিয় উত্তরবঙ্গের এক যুব নেতা কয়েক বছর আগে জটিল রোগে মারা যান।

অন্য বিষয়গুলি:

Recruitment Scam TMC CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE